ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রামে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত ৩

অনলাইন ডেস্ক ::    চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে ব্যাপক সহিংসতার মধ্য দিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত নির্বাচনী সহিংসতায় পটিয়া ও বাঁশখালীতে তিনজন নিহত হয়েছেন।

শনিবার রাতে চট্টগ্রামের পটিয়ায় দ্বীন মোহাম্মদ (২৮) নামে এক যুবলীগ কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি কুসুমপুরা ইউনিয়নের গুরনখাইন এলাকার বাসিন্দা। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের গোরনখাইন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, নিহত দিল মোহাম্মদ কুসুমপুরা ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের দাবি, ওই ব্যক্তিকে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন কুপিয়ে হত্যা করেছে।

তবে বিএনপি বলছে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও টাকা ভাগাভাগি নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

এ ছাড়া আজ দুপুরে পটিয়া পশ্চিম মালিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষে আবু সাদক নামে এক ইসলামী ফ্রন্ট কর্মী নিহত হয়েছেন। তিনি স্থানীয় আবুল কাশেমের ছেলে।

অন্যদিকে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় গুলিতে আহমদ কবীর (৪৫) নামে জাতীয় পার্টির এক কর্মী নিহত হয়েছেন।

আজ (রোববার) ভোটগ্রহণ শুরুর আগের রাতে বাঁশখালী পৌরসভার কাথারিয়া ইউনিয়নের বড়ইতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী অভিযোগ করেন, রাত থেকে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল মারার চেষ্টা করলে তার সমর্থকরা বাধা দিতে গেলে সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়। এতে আহমদ কবীর মারা যায়। এ ছাড়াও কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের অধিকাংশ ভোট কেন্দ্র থেকে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের নির্বাচনী এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অনেক ভোট শুরুর আগেই ব্যলট বক্স ভর্তির অভিযোগ উঠেছে।

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক ইদ্রিস আলী অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম-১০ সংসদীয় আসনের ১৪নং লালখানবাজার ওয়ার্ডের লালখানবাজার মাদ্রাসা কেন্দ্রে সকাল পৌনে ৮টার আগেই ব্যলট পেপার ভর্তি ভোটের বাক্স দেখা গেছে। ভোট শুরুর আগেই স্থানীয় যুবলীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমের নেতৃত্বে ২০/২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী দল ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে জাল ভোট দেয়।

এ ছাড়া, চট্টগ্রাম-১০ সংসদীয় আসনের খুলশী থানার মতিঝর্ণা, পুলিশ লাইন স্কুল, রেলওয়ে স্কুল, পলোগ্রাউন্ড স্কুল, পাহাড়তলী কলেজসহ সংসদীয় আসনের অধিকাংশ কেন্দ্র ভোর থেকেই দখল করে রেখেছে আওয়ামী লীগের লোকজন। সাধারণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে তারা। আসনের অধিকাংশ সেন্টারের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। নগরীর পাহাড়তলী কলেজ কেন্দ্র থেকে খুলশী থানার ওসি নিজেই বিএনপির এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। ১৪নং ওয়ার্ডের পুলিশ লাইন্স কেন্দ্রে ছাত্রলীগের বাধা দেয়ার পরও ভোট দিতে চাওয়ায় তিনজন ভোটারকে কেন্দ্র থেকে নিয়ে যায় পুলিশ।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম-১১ আসনের হালিশহর, বন্দর থানার অধিকাংশ এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটের আগেরদিন রাতেই ব্যলট পেপারে সিল মেরে রাখে আওয়ামী লীগের লোকজনা। পাশাপাশি রোববার সকাল থেকে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের গেইটে পাহারা বসিয়েছে নৌকার সমর্থকরা। পরিচিত লোকজন ছাড়া সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না তারা।

এ ছাড়া চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র থেকে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দিয়ে কেন্দর দখলের অভিযোগ করেন তিনি।

চট্টগ্রাম-১১ বন্দর পতেঙ্গা ও ইপিজেড এলাকায় সংবাদ সংগ্রহ করার সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মী দের হামলায় আল আমিন সিদকার মিলন নামে স্থানীয় এক সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। আহত আল আমিনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে, বাশঁখালিতে রাতেই বিভিন্ন ভোট সেন্টার দখল করে ব্যলটে সিল মারার অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাহমুদুল হাসানের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট জুবায়ের চৌধুরী।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গত রাতে বাঁশখালী সদর পৌরসভার কাথারিয়া ইউনিয়নের বড়ইতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ যুবলীগের সন্ত্রাসীরা কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সীলমারার চেষ্টা করলে তার সমর্থকরা বাধা দিতে গেলে সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়। এতে আহমদ কবীর মারা যায় এবং আহত হয়েছে কয়েকজন। এছাড়াও এখন প্রায় সব কেন্দ্র দখলে নিয়েছে তারা। আমি এখন ঘোনা পাড়া কেন্দ্র আছি, লাঙ্গল, আপেল ও ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখল করেছে নৌকার সমর্থকরা।

এদিকে সাতকানিয়ায় একটি কেন্দ্র দখল করতে গিয়ে হামলায় আবদুর রহমান নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সাতকানিয়া উপজেলার পূর্ব ছদহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটেছে।

এ ছাড়া, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার ৯ ইউনিয়নের প্রায় ৮০ শতাংশ কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টদের ঢুকতে না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের ২০ দলীয় জোটের ধানের শীষ কারাবন্দি প্রার্থী আ ন ম শামসুল ইসলামের পক্ষে তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট জাফর সাদেক বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেছেন। আজ দুপুরে সাতকানিয়ায় সংবাদ সম্মেলন করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

তিনি জানান, চুনতী ইউনিয়নের নারিশ্চা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকদের হামলায় তাওহিদুল ইসলাম ও মকছুদুর রহমান নামে দুইজন ধানের শীষের এজেন্ট আহত হয়েছেন। কলাউজান ইউনিয়নের ইয়াকুব বজল বিদ্যালয় ও গৌর সুন্দর বিদ্যালয় কেন্দ্রেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

লোহাগাড়া সদর ইউনিয়নের রশিদার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দিঘিরপার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ সুখছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমিরাবাদ মাওলানা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চুনতী, আমিরাবাদ, কলাউজানসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে একই ধরনের চিত্র বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

এদিকে চট্টগ্রাম-৪ সংসদীয় আসনের সীতাকুণ্ড উপজেলায় ভোট দিতে গিয়ে ককটেল হামলার শিকার হয়েছেন বিএনপির মনোনিত প্রার্থী আসলাম চৌধুরীর পরিবার। হামলায় গুরুতর আহত হয়েছে ধানের শীষের প্রার্থী আসলাম চৌধুরীর বড় ভাই ইসহাক চৌধুরী। আজ সকাল ৯টায় নিজ বাড়ীর পাশে বানু বাজার ছুন্নিয়া মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রে সপরিবারে ভোট দিতে গেলে এ ঘটনা ঘটে।

চট্টগ্রাম-৮ আসনেও বেশ কয়েকটি কেন্দ্র দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে পুলিশ সরাসরি সরকার দলীয় কর্মীদের সঙ্গে যোগ দেয় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা।

পাঠকের মতামত: