ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

কেন মিয়ানমারকে চীনের সমর্থন?

china-myanmarঅনলাইন ডেস্ক :::

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তথাকথিত ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালানোর পর ১৫ সদস্যের জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিল (ইউএনএসসি) নিউইয়র্কে বৈঠকে বসে। তবে এই বৈঠক নিয়ে মিয়ানমারের নেতাদের তেমন দুশ্চিন্তা করতে হয়নি। কেননা তাদের রয়েছে শক্তিশালী এক বন্ধু— চীন।

বৈঠকে অতীতের মতোই চীন তাদের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রতিবেশীটির জন্য দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করে, তা ওই দেশটিতে (মিয়ানমার) সেনা শাসন বা নির্বাচিত সরকার — যা-ই থাকুক না কেন।

বৈঠকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিল রাখাইনে সহিংসতার নিন্দা জানায়, তবে জাতিসংঘে নিয়োজিত ব্রিটিশ দূত ম্যাথিউ রাইক্রফটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিরাপত্তা কাউন্সিল এখনও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে।

বৈঠকের পর খবর ছড়ায়, মিয়ানমারের সংকট নিরসনে জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলের সম্পৃক্ততার তীব্র বিরোধিতা করেছে চীন।

গত মার্চে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা কাউন্সিল একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দিতে চাইলে চীন ও রাশিয়া যৌথভাবে তা প্রতিহত করে।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন গত বছরের অক্টোবরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ চেকপোস্টে হামলা ঘিরে সেখানে মুসলমানদের গণহতহ্যা, ধর্ষণ ও তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীকে দায়ী করে।

সে সময় জাতিসংঘ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে দমনের অভিযোগ তোলে।

তবে মিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনী উভয়পক্ষই এ অভিযোগ অস্বীকার করে এবং তারা এ বিষয়ে প্রকৃত তথ্য উদঘাটনে জাতিসংঘকে সহায়তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সে সময় মিয়ানমারকে সরকারকে জোরালো সমর্থন দেয় চীন।

অবশ্য জাতিসংঘে নিয়োজিত মার্কিন দূত নিকি হ্যালি গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর শাস্তি দাবি করে বিবৃতিতে দিয়েছেন।

মিয়ানমারের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা গ্রামবাসীর ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, ওই এলাকা নিরাপদ করে পুলিশকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের দাবি অনুযায়ী, খুন অল্প সংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

রাখাইন ইস্যুতে পশ্চিমা কয়েকটি দেশ যখন মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিচ্ছে, চীন সে সময় দেশটিকে কূটনৈতিক সুরক্ষা প্রদান অব্যাহত রেখেছে।

অং সান সুচির সরকারের সঙ্গে চীনের বন্ধুত্ব এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। বলা যায়, চীন মিয়ানমারের প্রধান বন্ধুতে পরিণত হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, মিয়ানমারকে চীনের এই অব্যাহত সমর্থনের কারণ হচ্ছে, মিয়ানমারে চীনের পদচারণা আরও জোরদার করা এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে পশ্চিমা প্রভাব কমিয়ে আনা।

মিয়ানমারে প্রধান বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে চীন দৃষ্টি নিবন্ধিত হয়েছে বঙ্গোসাগর তীরবর্তী রাখাইন রাজ্যের ক্যাউকফিউর সমুদ্রবন্দরের প্রতি, যা ভারত মহাসাগরে তাদের অবস্থান জোরদার করবে।

গত মে মাসে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মিয়ানমারের একটি সমুদ্রবন্দরের ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ার নিতে চায় চীন। এছাড়া পুরো এশিয়াজুড়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপ্তি বাড়াতে মিয়ানমারের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের যে উচ্চাভিলাষি পরিকল্পনা চীন নিয়েছে তার অংশ হিসেবে ক্যাউকফিউর গভীর সমুদ্রবন্দরে অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার পেতে অব্যাহতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

এসব ছাড়াও মিয়ানমারের ক্যাউকফিউ থেকে চীনের দক্ষিণাঞ্চলের কুনমিং পর্যন্ত অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের পাইপলাইন করতে দেশটির সঙ্গে চুক্তি করেছে চীন, যা ক্যাউকফিউতে ১০ বিলিয়ন ডলারের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনারই অংশ। এছাড়া চীনের ইউনান প্রদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রেল যোগাযোগ স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে চীনের, যদিও বিষয়টি স্থগিত বা পুনর্বিবেচনার পর্যায়ে রয়েছে।

মিয়ানমারে এমন অনেক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ দেশটির সঙ্গে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় জড়িত থাকায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে সরাসরি কিছু বলছে না চীন। এক্ষেত্রে চীনের আশঙ্কা— রোহিঙ্গা ইস্যুতে সম্পৃক্ত হলে সেটা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ‘হস্তক্ষেপ’ হিসেবে দেখতে পারে।

তবে বাস্তবতা হচ্ছে, কৌশলগতভাবে চীনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ রাখাইন রাজ্যে যেভাবে সহিংসতা বাড়ছে তাতে এটা নিঃসন্দেহে তাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দেখা দেবে। সূত্র: দ্য ইরাওয়াডি /সমকাল

পাঠকের মতামত: