নিউজ ডেস্ক ::
অবশেষে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মুখ খুলেছেন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেতা অং সান সু চি। তিনি দাবি করেছেন, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের সবাইকেই তার সরকার সুরক্ষা দিচ্ছে। একইসঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতিকে ভুয়া ছবি ও সংবাদের মাধ্যমে বিকৃত করে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের স্বার্থে প্রচার করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। তার দাবি, এমন ভুয়া তথ্য বিপুল পরিমাণে ছড়ানো হচ্ছে যাতে ভিন্ন ভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনেক বেশি সমস্যা সৃষ্টি করা যায়।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় তিনি এ কথা বলেন উল্লেখ করে সু চি’র নিজস্ব কার্যালয় থেকে এ বক্তব্য প্রকাশিত হয়।
এতদিন ধরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তীব্র সহিংসতার পরও চুপ থাকায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি। আগস্ট থেকে চলমান সংঘর্ষে এই প্রথমবারের মতো মুখ খুললেও তার বক্তব্য পুরো পরিস্থিতির অনেকটাই উল্টো।
প্রকাশিত সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘সু চি এরদোগানকে বলেছেন, তার সরকার ইতোমধ্যেই যতটা ভালোভাবে সম্ভব রাখাইনের সব মানুষকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে।’
তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক সুরক্ষা থেকে কাউকে বঞ্চিত করার অর্থ কী, তা আমরা অন্য বেশিরভাগ মানুষের চেয়ে ভালোভাবে জানি।’
অন্যদিকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সংবাদ সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, গত তিনদিন ধরে বাংলাদেশের সাথে সীমান্তের একাংশ জুড়ে ল্যান্ড মাইন বসাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
বাংলাদেশের দু’টো সরকারি সূত্রের বরাতে তারা জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর সহিংসতা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমরা যেন আর মিয়ানমারে ফিরে যেতে না পারে সেজন্যই মাইনগুলো রাখা হচ্ছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত ৪শ’র বেশি মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখো মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতে মারা গেছে আরও অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।
পাঠকের মতামত: