ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বান্দরবান সীমান্তে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় হাজারও রোহিঙ্গা

Photo 30.08.17 (1)মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বান্দরবান প্রতিনিধি ::

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুনধুম তুমব্র ও চাকঢালা সীমান্তে পাহাড় গুলোতে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের জন্যে অবস্থান নিয়েছেন। ছোট ছোট টিলার উপর রোহিঙ্গারা পলিথিন দিয়ে ঝুপড়ি তৈরি করে সেখানে থাকছেন। অন্যদিকে ঘুনধুম সীমান্তের কলা বাগান এলাকায় শনিবার বিকেলে অনুপ্রবেশ করা সহ¯্রাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ এখনো অবস্থান করছেন।

তবে কলা বাগান থেকে অনেক রোহিঙ্গা পার্শ্ববর্তী উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। তাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা খাবার ও পানি সহায়তা করছেন। ঘুনধুম তুমব্রু সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ টিলাগুলোতে অবস্থান নিয়েছেন। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে তারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

ঘুনধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, মানবিক সহায়তায় জিরো লাইনে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের খাবার ও পানি দেয়া হচ্ছে। এছাড়া শরণার্থী ক্যাম্প থেকেও খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে কোনো রোহিঙ্গা যাতে সীমান্ত থেকে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেদিকে খেলায় রাখা হচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. কামাল হোসেন জানান, সীমান্তের কিছু দালাল রোহিঙ্গাদের শরণার্থী ক্যাম্প ও অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্যে তৎপরতা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেকে শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে বেশিরভাগ রোহিঙ্গাই আসছে কক্সবাজারের বালুখালি সীমান্ত দিয়ে। ঘুনধুম তুমব্রু সীমান্তে বিজিবি ও স্থানীয়রা কড়াকড়ি করায় রোহিঙ্গারা জিরো লাইনে আসলেও তারা বাংলাদেশের ভূখন্ডে প্রবেশ করতে পারছে না।

এদিকে প্রায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ঢেকুবনিয়া এলাকায় রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে হামলা চালিয়েছে। সেখানে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। ফলে আতঙ্কে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা সীমান্তের কাটা তারের বেড়া ও বিজিবির বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশের সীমান্তে ঢুকে পড়ছে।

প্রাণ ভয়ে ঢেকুবনিয়ার বাজার পাড়া থেকে ঘুনধুমে চলে আসেন ওই এলাকার মুদি দোকানী আবুল কাশেম। তিনি জানান, শনিবার হামলার পর থেকে সেখানকার গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নির্বিচারে গুলি ও হেলিকপ্টার থেকে বোমা ফেলা হচ্ছে। কতজন যে ঢেকুবনিয়া ও আশপাশের এলাকায় মারা গেছে তা কেউ জানতে পারছে না।

কলা বাগান এলাকায় আশ্রয় নেওয়া মেহেরুন্নেছা বলেন, দুই দিন বনে জঙ্গলে লুকিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবন বাঁচিয়েছি। কিন্তু আমার বাবা ভাই-বোনকে কোথায় তার কোনো খবর পাচ্ছি না। তারা বেঁচে আছে না মারা গেছে এই খবরটুকুও কেউ দিতে পারছেনা।

এদিকে সীমান্তের লোকজনদের অভয় দিতে ঘুনধুমে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে সভা করেছেন জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক। রোহিঙ্গারা যাতে সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢুকে পড়তে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বুচিডং, মংডু সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা একযোগে নিরাপত্তা বাহিনীর ২৪টি ক্যাম্পে হামলা করে। এতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয়রা মিলে রোহিঙ্গাদের গ্রামে হামলা করে ব্যাপক ধ্বংস যজ্ঞ চালায়।

পাঠকের মতামত: