সিগারেট বাজারজাতকরণে আইনের সঠিক প্রয়োগ নেই ৬৪ শতাংশ মোড়কে। অথচ, দেশের বাজারে যে কোনো সিগারেট কোম্পানি বাজারজাত করতে চাইলে তাকে অবশ্যই এ দেশের প্রচলিত আইন মানতে হবে। অন্যথায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড ও ছয় মাস বিনাশ্রম দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। এ ছাড়া যতবার এই আইন অমান্য করা হবে ততবারই সাজা দ্বিগুণ হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে যৌথভাবে জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ, বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন (বিসিসিপি) এবং প্রজ্ঞা আয়োজিত ‘টোব্যাকো প্যাক সার্ভিলেন্স সিস্টেম টিপ্যাকএসএস : বাংলাদেশ সিগারেটের প্যাকেটে স্বাস্থ্য সতর্কীকরণ বার্তার উপস্থিতি’ শীর্ষক এক সভায় আলোচনায় এসব তথ্য জানানো হয়। বিসিসিপির টিম লিডার ড. নজরুল হকের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ওয়াল্ড লাঞ্ছ ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশের প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের, হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের ড. জোয়ানা কোহেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. রুহুল কুদ্দুস জানান, চলতি বছরের ১৯ মার্চ থেকে বাংলাদেশের সব তামাকজাত পণ্যের মোড়কে ছবিযুক্ত স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়নের পাশাপাশি তিন মাস অন্তর মোড়কের সচিত্র পরিবর্তন করতে হবে। ধূমপান জাতীয় পণ্যের জন্য পাঁচ ধরনের সচিত্র সতর্কীকরণ বার্তা এবং তামাকজাত পণ্যের জন্য দুই ধরনের সতর্কীকরণ বার্তা ব্যবহার করতে হবে বলেও জানান তিনি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের দায়িত্ব ছাড়াও রুহুল কুদ্দুস জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, সিগারেটের মোড়কে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপ্রয়োজনীয় শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে, যা তামাক
নিয়ন্ত্রণের সংশ্লিষ্ট আইনটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুয়ায়ী সিগারেটের মোড়কের ৩০ শতাংশ
জায়গাজুড়ে সতর্কবাণী মুদ্রণের বিধান রয়েছে, যা ৬৪ শতাংশ মোড়কের ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না।
এক গবেষণার কথা উল্লেখ করে বক্তারা জানান, অধিকাংশ সিগারেটের মোড়কেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপ্রয়োজনীয় শব্দ (লাইভ দি স্টরি, লিমিটেড এডিশন) ব্যবহার করা হচ্ছে। ৯৩ শতাংশ প্যাকেটে সতর্কবার্তা সাদা জমিনে কালো অক্ষর দ্বারা মুদ্রিত এবং ৯৬ শতাংশ প্যাকেটে স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা আইনে নির্ধারিত ১৮ পয়েন্টে ছাপা হয়েছে।
ড. জোয়ানা কোহেন বলেন, বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশনের (বিসিসিপি) সহযোগিতায় বাংলাদেশে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম শহর থেকে মোট ১৯১টি সিগারেট মোড়ক সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ২৯ শতাংশ (৫৬টি) মোড়কে বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে বর্ণিত সতর্কবার্তা দেখা গেছে। মোড়কগুলোর সামনে ও পেছনে সতর্কীকরণ বার্তার উপস্থিতি থাকলেও এ ক্ষেত্রে আইন মানা হয়েছে মাত্র ৪৬ শতাংশ মোড়কে।
আইন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ অনুযায়ী স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মোড়কের সামনে ও পেছনে ৩০ শতাংশ জুড়ে থাকতে হবে। ছয়টি সতর্কবাণী প্রতি ৬ মাস অন্তর বদল করে সিগারেট প্যাকেটে বাংলায় ছাপাতে হবে।
তিনি বলেন, তামাক বিজ্ঞাপনের প্রচলিত পদ্ধতিগুলো বাংলাদেশসহ অনেক দেশে সীমিত ও নিষিদ্ধ করায় কোম্পানিগুলো নতুন ধূমপায়ী তৈরি করতে এ আইন না মেনে মোড়কগুলোকেই বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০০৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর তামাকজনিত রোগে মারা যায় ৫৭ হাজার মানুষ, পঙ্গুত্ব বরণ করে আরো ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ। আর গ্লোবাল ইয়থ টোব্যাকো সার্ভে ২০১৩ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী স্কুলের ছেলেমেয়েদের ৬ দশমিক ৯ শতাংশই তামাক ব্যবহার করে।
পাঠকের মতামত: