সাইনবোর্ড এবং দাপ্তরিক কাগজপত্রে রয়েছে ২০১৫-১৬ সালে ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৪৫ হেক্টর সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বাফারজোন ও করজোনের আওতায় বনায়ন সৃজন করা হয়েছে। কিন্তু এই তথ্যের বাস্তবতার কোন দেখা মিলবে না সরেজমিনে গেলে। দৃশ্যটি দেখা যাবে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের অধীন চকরিয়া উপজেলার মানিকপুর বনবিটে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাসিয়াখালী রেঞ্জের চকরিয়া উপজেলার মানিকপুর বনবিটের অধীন বনাঞ্চলে বাফারজোনের ২০ হেক্টর ও করজোনের আওতায় ২৫ হেক্টর এলাকায় বনায়ন সৃজনের নামে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে খরচ করা হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ এলাকায় রোপণ করা গাছের অস্থিত্বও খুঁেজ পাওয়া যাচ্ছেনা। তবে বনায়ন দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েকটি সাইনবোর্ড। এসব সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে বনায়নের পরিধি ও রোপন করা গাছের নাম। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম কাজল। তিনি বলেন, সামাজিক বনায়নের আওতায় অংশীদার নিয়োগ করে বনবিভাগ নির্ধারিত জায়গায় বনায়ন সৃজন করলেও বর্তমানে বেশিরভাগ বাফার জোন এলাকার বাগান এখনো অরক্ষিত রয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বনবিভাগের লোকজন ২০ হেক্টর বাগানে ৫০ হাজার গাছের চারা রোপন করে বনায়ন সৃজন করেছেন বলে দাবি করলেও বর্তমানে এসব বাগানের কোন ধররের অস্তিত্ব নেই বনাঞ্চল এলাকায়। সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আজিমুল হক আজিম দাবি করেন, বনবিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের দুটি অংশে বিশেষ করে মানিকপুর অংশে ২০ হেক্টর এলাকায় বাফার জোন ও সুরাজপুর অংশে ২৫ হেক্টর বনাঞ্চলে করজোন বনায়ন সৃজন করেছে মর্মে সাইনবোর্ড দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে এসব সাইনবোর্ডের কোন মিল নেই। চেয়ারম্যান অভিযোগ করেছেন, বনবিভাগের কর্মকর্তারা কাগজে-কলমে ৪৫ হেক্টর বনাঞ্চলে বনায়ন করেছে দাবি করলেও সেখানে কোন ধরনের বনায়ন নেই। তবে বিট কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম দুই মাস আগে স্টেশন থেকে বদলী হওয়ার সময় বনায়নের জন্য নির্ধারিত স্থানে কয়েকটি সাইন বোর্ড স্থাপন করে দেয়। যাতে প্রতীয়মান হয় এখানে বাগান করা হয়েছে। তবে বাগানের আশপাশ এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট কিছু গাছ রয়েছে যা কয়েক বছরের পুরোনো। মূলত বাগান সৃজনের নামে সরকারি বরাদ্দের টাকা লুট করেছেন বনবিভাগের কর্মকর্তারা। যা তদন্ত করলে বেরিয়ে পড়বে।
বনবিভাগ সূত্র জানায়, ২০ হেক্টর বাফার জোন বনায়নে অন্তত ৫০ হাজার গাছ রোপন করা হয়। বাগানে গাছের চারা রোপন ও পরিচর্যা খাতে প্রতি হেক্টরে সরকারি বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ৫৫ হাজার টাকা। এই হিসেবে মানিকপুর বনবিটে ৪৫ হেক্টর বাফারজোন ও করজোন বনায়নে বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এ ব্যাপারে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি ও ফাসিয়াখালী রেঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) মোহাম্মদ ইউছুপ বলেন, ‘বনায়ন করা হয়নি এই তথ্য সঠিক নয়। মানিকপুর বনবিটের বাফার জোন ও করজোন বনায়নে সৃজন করা বাগানে এখনো গাছ রয়েছে।’ কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মো. কেরামত আলী মল্লিক বলেন, ‘বনায়ন সৃজন না করে সরকারি অর্থ উত্তোলন করা সম্ভব নয়। আমার জানামতে মানিকপুর বনবিটে সেই ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখে ঘটনার সত্যতা পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।’
পাঠকের মতামত: