ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

সুপারী উৎপাদনে আয় ২৭২ কোটি টাকা

মনতোষ বেদজ্ঞ :  কক্সবাজার জেলায় এবার সুপারীর বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই সপ্তাহের নির্ধারিত দিনে জমে উঠছে সুপারীর হাটগুলো। সেখানে প্রচুর সুপারী বেচাকেনা হচ্ছে। এই মৌসুমে জেলায় সুপারী উৎপাদন খাতে চাষীদের প্রায় ২৭২ কোটি টাকা আয় হবে বলে ধারনা করছে কৃষি বিভাগ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষি খাতে ধানের পর বর্তমানে এই অঞ্চলের মানুষের অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে সুপারী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘকাল ধরে কক্সবাজার জেলার সুপারী ঢাকা, রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। প্রতি বছর হাজার কোটি টাকার সুপারীর ব্যবসা হয় কক্সবাজার ঘিরে। বিগত প্রায় এক মাস ধরে সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার সুপারীর হাট বসছে রামু উপজেলার ফকিরা বাজারে। উখিয়া উপজেলার সোনারপাড়া বাজারে হাট বসছে প্রতি রোববার। টেকনাফ পৌরসভা সংলগ্ন এলাকায় সবচেয়ে বড় সুপারীর হাট বসছে বৃহস্পতিবার।
বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিপুল পরিমাণ কাঁচা সুপারি বিক্রির জন্য বাজারে এনেছেন ব্যবসায়ীরা। বেচাকেনাও হচ্ছে প্রচুর। ভালো মানের প্রতি পণ সুপারি (৮০টি) ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের ২০০ থেকে ২৫০, আর নিম্নমানের সুপারি ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের হাজারিকুল এলাকার সুপারি চাষী খায়রুল আলম জানান, উপজেলার জোয়ারিয়ানালা, রাজারকুল, গর্জনিয়া, কাউয়ারখোপ, কচ্ছপিয়া, ঈদগড়, চাকমারকুল, রশিদনগর, দক্ষিণ মিঠাছড়ি, ফতেখাঁরকুল, খুনিয়াপালং ইউনিয়নের বিভিন্ন হাটবাজারে হাটের দিন প্রায় অর্ধকোটি টাকার সুপারি কেনাবেচা হয়। গত মঙ্গলবার তিনি নিজের বাগানের প্রায় ১০ কাহন (১৬০ পণ) সুপারি বাজারে নিয়ে যান। প্রতি কাহন সুপারি বিক্রি করেন ৩ হাজার ২০০ টাকা করে।
জানা গেছে, টেকনাফ উপজেলার সাবরাংয়ের কাটাবনিয়া, কচুবনিয়া, ডেইল্যাবিল, নয়াপাড়া, আচারবনিয়া, লেজিরপাড়া, পানছড়ি পাড়া, সিকদার পাড়া, বাজার পাড়া, মন্ডল পাড়া, মুন্ডার ডেইল, হাদুর ছড়া, চান্ডলী পাড়া, সদরের খুনকার পাড়া, কচুবনিয়া, মহেশখালীয়া পাড়া, গোদারবিল, ডেইল পাড়া, লম্বরী, লেংগুরবিল, মিঠাপানির ছড়া, জাহালিয়াপাড়া, হাবির ছড়া, রাজারছাড়া, নতুন পল্লান পাড়া, বাহারছড়ার কচ্চপিয়া, বড় ডেইল, জাহাজপুরা, মারিশবনিয়া, শীলখালী, শামলাপুর, হ্নীলার জাদীমুরা, রঙ্গিখালী, লেচুয়াপ্রাং, পানখালী, হোয়াইক্যংয়ের কম্বনিয়া পাড়া, রইক্ষ্যং, লাতুরীখোলা, চাকমা পাড়া, ডেইগ্যাকাটা এলাকায় সুপারীর চাষ হয়েছে। এইসব এলাকায় শতশত পরিবার এখন সুপারী চাষের নির্ভরশীল। এছাড়াও চলতি মৌসুমে সুপারির ভালো ফলন হয়েছে উখিয়ার উপকূলীয় এলাকা সোনারপাড়া, নিদানিয়া, ইনানী, মনখালী, চেপটখালী, মাদারবনিয়ায়।
টেকনাফের ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জানিয়েছেন, বসতবাড়ির আঙিনায় করা ৩০ শতক  বাগানের সুপারি বিক্রি করে এ বছর ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা পেয়েছেন তিনি। সুপারির দাম ভালো থাকায় গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৪০ হাজার টাকা বেশি লাভ হয়েছে তাঁর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আশিষ কুমার দে বলেন, ‘সাধারণত আষাঢ়-শ্রাবন মাসে সুপারী গাছে ফুল আসে। ফলন হতে শুরু করে আশি^ন-কার্তিক মাসে। বর্তমান মৌসুমে জেলায় সুপারীর বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার ৮ উপজেলাতেই কম-বেশি সুপারীর চাষ হচ্ছে। তবে তুলনামূলক অনেক বেশি সুপারী উৎপাদন হয় টেকনাফ, উখিয়া ও রামু উপজেলায়। এর মধ্যে টেকনাফে বেশি সুপারী উৎপাদন হয় প্রতি মৌসুমে। পুরো দেশে টেকনাফের সুপারীর সুখ্যাতি রয়েছে।’
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আশিষ কুমার দে আরো বলেন, ‘জেলায় প্রায় ৩ হাজার ৪ শ’ হেক্টর জমিতে সুপারীর বাগান করা হয়েছে। প্রায় ২৭ হাজার মানুষ এই সুপারী চাষের সাথে জড়িত। প্রতি হেক্টর জমিতে সাধারণত ৪ টনের মতো সুপারী উৎপাদন হয়। সেই হিসেবে চলতি মৌসুমে জেলায় এক লাখ ৩৬ হাজার টন সুপারী উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই খাতে চাষীদের আয় হবে প্রায় ২৭২ কোটি টাকা।’

পাঠকের মতামত: