ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পর্যটক বরণে প্রস্তত সেন্টমার্টিনদ্বীপ

saint-martineটেকনাফ প্রতিনিধি  :

ঈদের দীর্ঘ ছুটি কাটাতে সেই সাথে বোনাস হিসাবে প্রাপ্ত চাঁদনী রাতের আনন্দ উপভোগ করতে সেন্টমার্টিনদ্বীপে পর্যটকের ঢল নামবে ঈদের দিন থেকেই। অতি বর্ষণে পর্যুদস্ত সেন্টমার্টিনদ্বীপের মানুষ পর্যটকদের বরণ করতে স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই সব কিছু ঠিকঠাক করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। ঈদের দিন থেকে দেশী-বিদেশী পর্যটক, শিক্ষার্থী ভ্রমণ পিপাসুদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠবে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। দ্বীপের ছোট বড় শতাধিক হোটেল-মোটেল কিছুই খালী নেই। সবই অগ্রিম বুকিং হয়ে গিয়েছে। ঈদের দিন ১৩ সেপ্টেম্বর থেকেই টেকনাফ-সেন্টমার্টিনদ্বীপ নৌরুটে চালু হবে পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারী ক্রুজ এন্ড ডাইন ও কেয়ারী সিন্দাবাদ। পর্যটকগণ এবারে ঈদের ছুটির সাথে বোনাস হিসাবে পেয়েছেন পূর্ণিমার চাঁদনী রাত। ১০ সেপ্টেম্বর সেন্টমার্টিনদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও বিএন ইসলামিক স্কুল এন্ড কলেজ গভর্ণিং বডির সভাপতি আলহাজ্ব নুর আহমদ (০১৮১৫৬১৪৫৭৬) উক্ত তথ্য নিশ্চিত করে জানান দীর্ঘ দিন পরে আবারও পর্যটকদের পদচারনায় সেন্টমার্টিনদ্বীপ মুখরিত হয়ে উঠবে। তবে সেন্টমার্টিনের একমাত্র জেটি দিয়ে উঠা-নামায় পর্যটকদের ভোগান্তি পোহাতে হবে। জেটির পুর্বের অংশ ভেঙ্গে গিয়েছে। বিষয়টি উর্ধতন কতৃপক্ষকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে। ঈদের আগে সেই ভাঙ্গা অংশ মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এমতাবস্থায় জাহাজ চালু হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়বেন পর্যটকগণ। জাহাজ থেকে নামতে ও দ্বীপে পৌঁছতে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। তিনি আরও জানান প্রথম দিন সেন্টমার্টিনদ্বীপে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের ফুল দিয়ে বরণ করবেন। ইতিমধ্যে সকল প্রস্ততি গ্রহণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিনে বঙ্গোপসাগরের মাঝে অসংখ্য প্রবাল রাশি মিলে মিশে একাকার হয়ে তৈরি দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। সাগরের সুনীল জলরাশি আর নারিকেল গাছের সারি এই দ্বীপকে দিয়েছে অপার সৌন্দর্য। প্রকৃতি যেন দু’ হাত মেলে সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছেন এখানে। বালুকাময় সৈকত, প্রবালের প্রাচীর আর কেয়া গাছের সারি এই দ্বীপকে দিয়েছে আলাদা এক বৈশিষ্ট, যা আর অন্য কোথাও নেই। উত্তাল সাগরের নোনা জল যখন আছড়ে পড়ে কেয়া গাছের ফাঁকে, ঝিরি ঝিরি বাতাসে তৈরি হয় সফেদ ফেনা। সে এক মাতাল করা দৃশ্য। রাতের জো¯œা এসে যখন লুটোপুটি খায় চিকচিকে বালুর বুকে, নীল আকাশ তখন যেন আরও নীলাভ হয়। নিরব রাতে চারিদিকে শুধু সাগরের হুংকার আর ঢেউ এর আছড়ে পড়ার গর্জন। অপূর্ব, অসাধারণ, অদ্ভুত মায়াবী সুন্দর। হাজারো জো¯œা রাতের চেয়েও সুন্দর একটি নির্ঘুম চাঁদনী রাত। এখানে সময়ের কাঁটা এগিয়ে চলে, কিন্তু সৌন্দর্য পিপাসার তৃষ্ণা যেন মেটে না। অসংখ্য নারিকেল গাছ, কেয়া গুল্ম আর সবুজ বনানী এই দ্বীপকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। পুরো দ্বীপ ঘুরলে মনে হবে যেন নারিকেল বাগান এটি। চাইলে অর্থের বিনিময়ে তৃষ্ণা মেটাতে পারেন ডাবের জলে। এখানে ১০ হাজার স্থানীয় লোকজন বসবাস করেন। সকলেই মুসলমান। খুবই ধার্মিক ও সহজ সরল প্রকৃতির মানুষ এরা। তাই কোন প্রকার চুরি ছিনতাই এর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে এখানে। গভীর রাত পর্যন্ত জো¯œা স্নান করতে পারা যায় নির্বিঘেœ। এটি সত্যিই একটি ভিন্ন প্রকৃতির দ্বীপ। এর একদিকে যেমন প্রবাল প্রাচীর ঘিরে রেখেছে, অন্যদিকে বালুকাময় সৈকত। চাঁদনী রাতে বা যে কোন সময় সমুদ্র জলে অনায়াসেই করা যায় সমুদ্র স্নান। সৈকতের লাল কাঁকড়া আর নুড়ি পাথর নিঃসন্দেহে আকৃষ্ট করে। দ্বীপের সৈকতে আরও আছে বিভিন্ন রং এর আর ঢং এর নুড়ি পাথর, সাথে ঝিনুক খন্ড।

টেকনাফ হতে সেন্টমার্টিন যাত্রা পথটিও মন্দ নয়। গাংচিল আর ডলফিন দেখতে দেখতে এই ২ ঘন্টার ভ্রমনটি মুহুর্তেই কেটে যায়। আর দুর সাগরের নীলাভ অথৈ পানির মাঝে যখন সবুজে ঢাকা দ্বীপটি দৃষ্টিগোচর হলে দীর্ঘ ভ্রমনের ক্লান্তি দুর হয়ে যায় নিমিষেই। দ্বীপটি যতই কাছে আসতে থাকে আনন্দ আর ব্যাকুলতা ততই বাড়তে থাকবে। ইচ্ছে করবে যেন সাগরে ঝাঁপ দিয়েই চলে যাই সৈকতে। দ্বীপে পা দিয়েই বুঝতে পারবেন এটিকে নিয়ে মানুষ কেন এত মাতামাতি করে, কেনইবা একে বলা হয় সুন্দরের লীলাভূমি। বাংলাদেশে যতগুলো দৃষ্টনন্দন পর্যটন এলাকা রয়েছে সেন্টমার্টনদ্বীপ তার অন্যতম ও নান্দনিক।

দ্বীপটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থে কোথাও ৭০০ মিটার আবার কোথাও ২০০ মিটার। সেন্টমার্টিন্সের পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিক জুড়ে রয়েছে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার প্রবাল প্রাচীর। দ্বীপের শেষ মাথায় সরু লেজের মত আর একটি অবিচ্ছিন্ন দ্বীপ রয়েছে যার নাম ছেঁড়াদ্বীপ, স্থানীয় ভাষায় “ছিরাদিয়া”। জোয়ারের সময় পানি এসে এটিকে মূল দ্বীপ হতে বিচ্ছিন্ন করে বলেই এর নামকরন করা হয়েছে ছেঁড়াদ্বীপ। ভাটার সময় পানি নেমে গেলে এটি আবার মূলদ্বীপের সাথে সংযুক্ত হয়ে যায়। তখন পায়ে হেঁটেই চলে যাওয়া যায় সেখানে। এখানে কোন লোক বসতি নেই। এই অংশটি একেবারেই প্রবালময়। এখানে স্বচ্ছ জলের নীচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজারো ধরনের প্রবাল। নানান রংয়ের মাছ খেলা করে প্রবালের ফাঁকে। সত্যিই সে এক দেখার মত দৃশ্য। এখানে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি হোটেল মোটেল ও কটেজ রয়েছে। বেশ কয়েকটি উন্নতমানের হোটেল রয়েছে। কটেজগুলোও চমৎকার। কটেজের বারান্দায় বসে চা খেতে খেতেই উপভোগ করা যায় সাগরের মায়াবী রূপ। যারা দিনে এসে দিনে চলে যান তাদের দেখার সুযোগ খুব কম। কিন্তু যারা রাত্রিযাপন করেন, তাঁদের জন্য রয়েছে অপার সুযোগ। দ্বীপে বিদ্যুতের কোন ব্যবস্থা নেই। জেনারেটর ও সৌর বিদ্যুতই একমাত্র ভরসা।

এখানে একটি মাত্র বাজার রয়েছে জাহাজ ঘাটে। রয়েছে অনেকগুলো খাবার হোটেল। এখানকার তাজা রুপচাঁদা মাছের ফ্রাই জ্বীভে জল আনবেই। আপনি চাইলে জেলেদের কাছ থেকে তাজা মাছ কিনে এনে হোটেলে ভেজে নিতে পারেন। আর একটি বিখ্যাত জিনিস এখানে পাবেন, সেটা হলো শুটকী। নানান প্রজাতী মাছের হরেক রকম শুটকী এখানে পাওয়া যায়। খুব সহজে ও সুলভ মূল্যে এখান হতে শুটকী সংগ্রহ করতে পারেন। পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারী সিন্দাবাদের ইনচার্জ শাহ আলম (০১৮১৯৩৭৯০৮৩) জানান আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এখন থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনদ্বীপ নৌপথে জাহাজ চলাচল অব্যাহত থাকবে। প্রতিদিন টেকনাফের দমদমিয়া জাহাজ ঘাট থেকে সকাল সাড়ে ৯টায় ছেড়ে গিয়ে বিকাল ৩টায় সেন্টমার্টিনদ্বীপের জেটি থেকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে ছাড়বে। সেন্টমার্টিনদ্বীপের বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান (০১৮১৯৯৬২৫১৬/০১৭২০৬৫৬৬৩৩) বলেন- সেন্টমার্টিনদ্বীপে পর্যটকদের সুবিধার্থে সব ধরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

 

পাঠকের মতামত: