ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সর্বত্র ঈদ বখশিসের হাত পাতা

eid boksisনিজস্ব প্রতিবেদক ।।

নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে গতকাল সন্ধ্যায় এক সিএনজি চালকের সাথে জনৈক ভদ্রলোকের তুমুল তর্কযুদ্ধ চলছিল তখন। ধীরে ধীরে কৌতূহলী উৎসুক জনতার ভিড় বাড়ছে তাদের ঘিরে। কাছে গিয়ে জানা গেল, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ওই ভদ্রলোক মির্জাপুল যাওয়ার জন্য ভাড়া জানতে চাইলেন সিএনজি চালকের কাছে। স্বাভাবিক ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেও ওই সিএনজি চালক দাবি করলেন ৯০ টাকা। অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ার কারণ হিসেবে সিএনজি চালকের যুক্তি, ‘সামনে ঈদ এবং ঈদ উপলক্ষে কিছু টাকা বাড়তি নিতেই পারেন। সিএনজি চালকের ভাষায়, বর্ধিত ভাড়া প্রকারান্তে ঈদ বখশিস। কিন্তু এ যুক্তি মানতে নারাজ করিম নামের লোকটি।

তাদের এ তর্কযুদ্ধ দেখে পাশ থেকে একজন মন্তব্য করলেন, ‘ঈদ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই কি শহর, কি গ্রাম ‘ঈদ বখশিস’ বাণিজ্যের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে সবখানেই। সব সেক্টরেই সাধারণ মানুষকে এ ধরনের ঈদ বখশিস দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এ যেন ঈদকে ঘিরে ভদ্রভাবে চাঁদাবাজি করা’। আরব দেশসমূহ ছাড়াও পশ্চিমা বিশ্বেও রমজান, ঈদ বা অন্যান্য ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে নাগরিকদের জন্য মূল্য ছাড়ের বিশেষ সুবিধা দেয়া হলেও বাংলাদেশেই কেবল বেশি নেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সাধারণ লোকজনের সাথে আলাপকালে তারা বলছেন, ঈদের এখনো তিনদিন বাকি (২৯ রোযার পর ঈদ হলে ২ দিন)। অথচ এরিমধ্যে ঈদ বখশিসের নামে পকেট কাটার মহোৎসব শুরু হয়ে গেছে। সবখানেই ঈদ বখশিসের জন্য হাত পাতা। অফিস, গাড়ি, সেলুন সবখানেই এ চিত্র দেখা যাচ্ছে। আবার ঈদমার্কেট, পরিবহন ভাড়া ছাড়াও নিত্যপণ্যের বাজারে লক্ষ্য করা যাচ্ছে ঈদকে ঘিরে বাড়তি আয়ের প্রবণতা। ঈদ শপিংয়ে যাবেন, সেখানেও এই ঈদ বখশিস। যুক্তিটা এমন– ‘ঈদের জামা বলে কথা। কয়েকটা টাকা না হয় বেশিই দিলেন’।

ফলশ্রুতিতে, ঈদ বখশিস বা ব্যবসায়ীদের বাড়তি আয়ের যে প্রবণতা তার কাছে জিম্মি সাধারণ মানুষের। সাধারণ মানুষের গচ্ছা যাচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই যেন সীমাহীন অসহায় সাধারণ লোকজন। তারা দাবি করেছেন, সবখানেই চলছে এ ঈদ বখশিস নৈরাজ্য। কিন্তু দৃশ্যমান এ নৈরাজ্য রোধে এগিয়ে আসছে না কেউই।

এ বিষয়ে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন (ক্যাব) এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজের হোসাইন বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক। রোজা সংযমের মাস। কিন্তু এ সংযমের মাস এলেই পরিবহন সেক্টর বা নিত্যপণ্য নয় অফিসআদালতেও ঘুষ লেনদেনের ক্ষেত্রে অংকের পরিমাণ বেড়ে যায়। এখানেই প্রশ্ন আসে আমরা কতটুকু সংযম করছি বা আমাদের নীতিনৈতিকতা কতটুকু বজায় থাকছে। আবার কিছু কিছু ব্যবসায়ীদের মনমানসিকতা যেন এমন, ১১ মাস ব্যবসা করবো না। রোজার মাসেই সারা বছরের লাভ তুলে নিব। এখান থেকে উত্তোরণের জন্য ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের মনিটরিং করা উচিত।

মুরাদপুরের সৌদি আরব ফেরত মনছুর আলম তালুকদার বলেন, ‘সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচের বিভিন্ন দেশে দেখেছি রোজা আসার সাথে সাথে বিভিন্ন পণ্য সমাগ্রীর মূল্য কমিয়ে দেয়া। ওই দেশের সরকার তা মনিটরিং করে। কিন্তু আমাদের দেশে হচ্ছে উল্টোটা। কার চেয়ে কে বেশি নিবে সেই যুদ্ধই চলে।’

মনজুর আলম নামে এক স্কুল শিক্ষক বলেন, চুল কাটার পর সেলুনওয়ালা নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও বাড়তি ৫০ টাকা নিয়েছে। এটা নাকি ঈদ বখশিস।

রহিম নামে এক বেসরকারি কর্মকর্তা বলেন, ঈদের উপলক্ষ ছাড়াও গত কয়েক বছর ধরে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যসহ অন্যান্য ব্যয় ক্রমান্বয়ে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। অথচ এ তুলনায় আয় খুব একটা বাড়ে নি। ফলে আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না থাকায় তাদের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তারা দাবি করেছেন, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রায় নাভিশ্বাস তুলছে। তবে জেলা প্রশাসনের শক্ত মনিটরিংয়ের কারণে এবরার রমজানে কাচাবাজারের মূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আজাদী তথ্য

পাঠকের মতামত: