ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

তারেক-জোবায়দার বিচার শুরুর আদেশ, অবৈধ সম্পদের মামলায়

নিজস্ব প্রতিবেদক :: অবৈধ সম্পদের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত। ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামান গতকাল বৃহস্পতিবার পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য ১৬ মে দিন ঠিক করে দেন। আইনের চোখে পলাতক হলেও তারেক ও জোবায়দার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগের একটি আবেদন করা হয়েছিল। সে আবেদন নামঞ্জুর করে অভিযোগ গঠনের শুনানি করেন বিচারক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক ও তার স্ত্রী বিরুদ্ধে এই মামলাটি হয় ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে। তখন তারেক গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেড় বছর কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি স্ত্রী–সন্তান নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান, তারপর আর দেশে ফেরেননি। বিদেশে থেকেই বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান হন তিনি; এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করছেন। এর মধ্যেই চারটি মামলায় তার বিরুদ্ধে সাজার রায় এসেছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে দুই বছর, অর্থ পাচারের দায়ে সাত বছর, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর এবং একুশে আগস্টের গ্রেনেড মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে বিদেশে পালিয়ে আছেন তারেক।

জোবায়দা চিকিৎসক হিসেবে সরকারি চাকরিতে ছিলেন। ছুটি নিয়ে যাওয়ার পর আর কর্মস্থলে না ফেরায় ২০১৪ সালে তাকে বরখাস্ত করে সরকার। খবর বিডিনিউজের।

শুনানি ও অভিযোগ গঠনের আদেশ শেষে দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, জোবায়দার বিরুদ্ধে স্বামীকে সহযোগিতা করা, মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ ছিল।

‘উচ্চতর আদালত তাদেরকে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেও কোনো কিছুই তারা মানে নাই এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছে। স্কাইপের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারছেন যে তাদের বর্তমান অবস্থানটা কোথায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে না এসে, বাংলাদেশের আদালতে মাননীয় সিনিয়র আদালতে উপস্থিত না হয়ে তার পক্ষ থেকে কতিপয় বিজ্ঞ আইনজীবী দিয়ে দরখাস্ত দিয়েছেন যে, প্রাইভেট আইনজীবী দিয়ে নিজ খরচায় তিনি মামলাটি পরিচালনা করতে চান।’

দুদকের আইনজীবী বলেন, দুদিন শুনানির পর সেই আবেদন আদালত খারিজ করে দিয়েছে।

‘তারা নিজেরাই আইনের আশ্রয়ে আসেনি, সংবিধান মান্য করেনি, মাননীয় উচ্চতর আদালতের আদেশকে তারা মান্য করেনি, মাননীয় আদালত যে নির্দেশ দিয়েছিল, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি হয়েছে, সেগুলোকে মেনে অত্র আদালতে উপস্থিত হয়ে তাদের মামলার বিচারিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেনি, সেহেতু তারা… ফলাফল, আইনগতভাবে কোনো প্রাইভেট আইনজীবী রাখার সুযোগ তাদের নেই। সুতরাং, তাদের আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে এবং নামঞ্জুর হবার পর তাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠিত হয়েছে।’

আদেশ পাওয়ার পর আসামিদের আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার, খোরশেদ আলম, ইকবাল হোসেন, আবুল কালাম খান, নূরুজ্জামান তপন আদালতে তারেক রহমান ও জোবায়দার পক্ষে স্লোগান দিয়ে আদেশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মামলা বৃত্তান্ত : ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার কাফরুল থানায় করা দুদকের মামলাটিতে অভিযোগ করা হয়, তারেক ও জোবায়দার ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে।

মামলায় জোবায়দার মা ইকবাল মান্দ বানুকেও আসামি করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয় আদালতে। পরে উচ্চ আদালত তার বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম বাতিল করে দেয়।

অভিযোগপত্র জমা হওয়ার পর মামলা বাতিল চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করা হয় জোবায়দার পক্ষেও। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করে হাই কোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাই কোর্টের আদেশ বহাল রাখে।

এ বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ করে রায় দেয় হাই কোর্ট। উচ্চ আদালতের এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ওই বছরই আপিলের আবেদন করেন জোবায়দা।

এরপর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ লিভ টু আপিল খারিজ করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখে। এরপর নিম্ন আদালতে মামলাটি আবার গতি পায়।

পাঠকের মতামত: