ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বাঁশখালীর দুর্গম পাহাড়ে অস্ত্র তৈরির কারখানায় অভিযানে কারিগর জাকেরুল্লাহ আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক :: চট্টগ্রামের বাঁশখালীর দুর্গম পাহাড়ি এলাকা জঙ্গল চাম্বলে অস্ত্র তৈরির কারখানা তৈরি করেছে জাকেরুল্লাহ (৫০)। ওই কারখানায় তৈরি অস্ত্র স্থানীয় জলদস্যু, মাদক ব্যবসায়ী এবং ডাকাতদের কাছে বিক্রি করতো। অস্ত্র তৈরির জন্য ক্যাটাগরিভেদে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিতো এবং ছোট ওয়ানশুটারগান তৈরি করতে পাঁচ থেকে ছয় দিন সময় নিতো।

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) দুপুর আড়াইটায় অভিযান চালিয়ে দুর্গম পাহাড়ে ওই অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পায় র‌্যাব। বুধবার (৩১ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়েজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ।

তিনি বলেন, ওই কারখানা থেকে ৮টি ওয়ান শুটারগান, দুটি পিস্তল ও অস্ত্র তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এ সময় অস্ত্র তৈরির মূল কারিগর জাকেরুল্লাহকেও গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার জাকেরুল্লাহ ওই এলাকার মৌলভী নুরুল হুদার ছেলে।

তিনি আরও বলেন, জঙ্গল চাম্বল এলাকায় অস্ত্রের কারখানায় তৈরি অস্ত্র স্থানীয় জলদস্যু, মাদক ব্যবসায়ী এবং ডাকাতদের কাছে বিক্রি করে আসছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে দীর্ঘদিন ধরে র‌্যাবের একটি টিম গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। যেহেতু এলাকাটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকা এবং অপরিচিত কাউকে দেখলেই এই অস্ত্র তৈরির সাথে জড়িত সিন্ডিকেটের সদস্যরা সতর্ক হয়ে যেত, ফলে তাদের অবস্থান শনাক্তকরণ ছিল একটি কঠিন বিষয়। কিন্তু আমরা কৌশলে পাহাড়ি এলাকার ভেতর দিয়ে ওই এলাকায় প্রবেশ করায় তারা টের পায়নি। এরপর কারখানার অবস্থা নিশ্চিত হয়ে দুপুর আড়াইটায় সেখানে অভিযান পরিচালনা করি। ওখানে একটি টিনের একচালা ঘরের ভেতরে অস্ত্র তৈরির কারখানা দেখতে পাই। সেখান থেকে ১০টি অস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসহ মূল কারিগর জাকেরুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়।

লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, জাকের দীর্ঘদিন ধরে এ কাজের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। সে একটি অস্ত্র তৈরির জন্য ক্যাটাগরিভেদে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিতো এবং ছোট ওয়ানশুটারগান তৈরি করতে পাঁচ থেকে ছয়দিন সময় নিতো। জাকেরুল্লাহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকলের দৃষ্টি এড়াতে মাঝে মাঝে কৃষি কাজ করতো বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়।

গ্রেপ্তার জাকের আরও জানায়, তারা মূলত দুইজন কারিগর মিলে অস্ত্র তৈরির সম্পূর্ণ কাজটি করতো। একটি অস্ত্র বানাতে প্রকারভেদে ন্যুনতম ৫-১৫ দিন সময় লাগতো তাদের। স্থানীয় বিভিন্ন ওয়ার্কশপ থেকে অস্ত্র তৈরির কাঁচামাল (বিভিন্ন সাইজের পাইপ ও লোহার টুকরা) সংগ্রহ করে এই বাড়িটিতে নিয়ে আসতো। পরে তাদের দক্ষতার মাধ্যমে অস্ত্রের সকল যন্ত্রাংশ কারখানাতেই তৈরি করতো। একটি অস্ত্রের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য তারা গ্রাইন্ডার মেশিন, ঝালাই মেশিন, ড্রিল মেশিন, হাতুড়ি, রড কাটার, বাটালসহ প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রাদি ওই কারখানায় ছিল। যন্ত্রগুলো পরিচালনার জন্য দূরের আরেকটি বাড়ি থেকে এই বাড়িতে তারা বৈদ্যুতিক সংযোগ টানে।

পাঠকের মতামত: