ঢাকা,শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

‘সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল এবং পর্যটক সীমিত করলে পর্যটন খাতে অপূরণীয় ক্ষতি হবে’

ইমাম খাইর, কক্সবাজার ::
দেশের পর্যটন স্পট সমূহের মধ্যে সেন্টমার্টিন অন্যতম। যাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁসহ অসংখ্য পর্যটন প্রতিষ্ঠান। প্রবালদ্বীপের আকর্ষণকে কেন্দ্র করে জেলার অন্যান্য পর্যটন স্পটসমূহেরও কদর বেড়েছে। যেখান থেকে সরকার পাচ্ছে কোটি টাকা রাজস্ব। কর্মসংস্থান হচ্ছে বেকার যুবক-যুবতিদের। সমৃদ্ধির পথে ব্লু ইকোনমি। তাছাড়া সেন্টমার্টিনসহ কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীরা গত দুই বছরের করোনার ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ঠিক এমন মুহূর্তে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত ও রাত্রিযাপনে অতিকড়াকড়িতে অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে পর্যটন খাত। স্বল্প সংখ্যক পর্যটক ব্যবস্থাপনায় দ্বীপের ১৮৮ টি আবাসিক হোটেলে নতুন সংকট দেখা দিবে। পর্যটন শিল্প বাঁচাতে সেন্টমার্টিনে দৈনিক অন্তত ৩০০০ পর্যটককে সুযোগ দিতে হবে।
‘টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ ও পর্যটক সীমিতকরণ’ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন সী ক্রুজ অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াভ) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে শহরের অভিজাত হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষ এবং হোটেল মোটেল ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ ১ যুগের বেশি সময় ধরে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। অফুরান সম্ভাবনার প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের সুরক্ষায় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাসহ জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব থেকে দ্বীপকে রক্ষার জন্য নানা কর্মসূচি পালন করে চলেছি। ২ বছর আগে করোনা মহামারীর শুরু থেকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জাহাজে পর্যটক ওঠানামা এবং পারাপার করে আসছি। সেন্টমার্টিনে স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর থাকায় এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। কারো করোনা শনাক্তও হয় নি। এনিয়ে প্রধান গণমাধ্যমগুলোতে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। সেন্টমার্টিনকে করোনামুক্ত রাখতে ‘জাহাজ মালিক-কর্তৃপক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য’ মন্তব্য এই পর্যটন উদ্যোক্তার।
প্রধানমন্ত্রীকে ‘মানবতার মা’ উল্লেখ করে হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ৮ লক্ষ রোহিঙ্গাসহ ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে মানবিক আশ্রয় দিয়েছেন। তাদের খাওয়াচ্ছেন। যে কারণে বিশ্ব নেতৃত্ব আপনাকে ‘মানবতার মা’ স্বীকৃতি দিয়েছেন। আপনি জাতির জনকের কন্যা, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেত্রী। আপনার সুদৃঢ় ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। শুধুমাত্র কক্সবাজারের মতো একটি জেলাতেই ৭৩টি মেগাউন্নয়ন প্রকল্প চলমান। যার বিপরীতে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। কয়েক বছরের মধ্যে প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান হলে কক্সবাজারের চেহারাই পাল্টে যাবে।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের আবেদন ও ব্যাপ্তি বাড়বে বহুগুণে। কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেল, শুটকি, লবণ, চিংড়িসহ নানা ব্যবসার পরিধি বাড়বে। ৬/৭ লাখ বেকার মানুষের নতুন কর্মসংস্থান হবে। এসব ব্যবসা বাণিজ্যের অন্যতম প্রাণশক্তি হচ্ছে সেন্টমার্টিন। কারণ, সেন্টমার্টিন ঘিরেই এক তৃতীয়াংশ পর্যটক আগমন ঘটে কক্সবাজারে। কিন্তু সেন্টমার্টিনে যদি পর্যটক সীমিত করা হয়, তাহলে কক্সবাজারে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে তৈরি হোটেল মোটেল ও ব্যবসা এবং পর্যটন খাতে লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগে ধ্স নামবে।
প্রশাসন এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম সুত্রে জানতে পেরেছি, সেন্টমার্টিন সুরক্ষায় আপনার কার্যালয় থেকে ১৩ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবৈধভাবে নির্মিত হোটেলসহ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ময়লা আবর্জনা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে দ্বীপের ঝুঁকি যেন না বাড়ে সে ব্যাপারে হোটেল মালিকদের নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন। দ্বীপের যানবাহন চলাচলেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। মা কচ্ছপের ডিম পাড়ার পরিবেশ সৃষ্টিসহ জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে দ্বীপের চতুর্দিকে মাছ ধরার জাল ফেলা বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিবেশ সংকটাপন্ন ছেরাদ্বীপেও পর্যটক যাতায়াত ও যাত্রিক নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। টেকনাফ থেকে ১০ টি জাহাজে দৈনিক ৩০০০ পর্যটক আসা যাওয়া করছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রেও জাহাজ ও দ্বীপে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যে কারণে এখনো সবকিছু ঠিকঠাক আছে। সেন্টমার্টিন এখনো করোনামুক্ত।
ঠিক এই মুহূর্তে জাহাজ চলাচল সীমিত করার চিন্তা করছে বিআইডব্লিউটিএ। মাত্র দুইটি জাহাজ চললে কয়েক হাজার পর্যটক বঞ্চিত হবে, যার প্রভাব পড়বে পুরো পর্যটন শিল্পে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে কক্সবাজারের হোটেল মোটেল ব্যবসা। জাহাজ চলাচল বন্ধ হলেও বিকল্প পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঠের নৌকায় চড়ে সেন্টমার্টিন যাবে পর্যটকেরা। সুতরাং যে উদ্দেশ্যে জাহাজ চলাচল সীমিত করা হচ্ছে তার কোন সুফল আসবে না। বরং ঝুুঁকি বাড়বে পর্যটন খাতে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারিকৃত ১৩ দফা নির্দেশনার সাথে আমরা একমত এবং এসব বাস্তবায়নে মাঠে আছি। কিন্তু নানা অজুহাতে জাহাজ চলাচল এবং পর্যটক সীমিত করা হলে হোটেল ব্যবসাসহ পর্যটনখাতে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
আমরা জানতে পেরেছি, সেন্টমার্টিনে অদূর ভবিষ্যতে দুইটি জাহাজ চলবে এবং ১২৫০ জন পর্যটক যাতায়াতে সুযোগ পাবে। স্বল্প সংখ্যক পর্যটক ব্যবস্থাপনায় দ্বীপের ১৮৮ টি আবাসিক হোটেলে নতুন সংকট সৃষ্টি হবে। কর্মহারা হবে কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
পর্যটকের যাতায়াত এবং ব্যবসা ঘিরে সেন্টমার্টিনের অন্তত ৫০০০ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে। পর্যটক সীমিত করলে তাদের জীবিকাও হুমকিতে পড়বে।
এ ক্ষেত্রে জাহাজ মালিকদের সুপারিশ হলো, বর্তমান চলাচলরত ১০টি জাহাজে করে সর্বোচ্চ ৩০০০ পর্যটক যাতায়াত করবে। দ্বীপের আবাসিক হোটেলগুলোতে কক্ষ আছে ১৪০০টি। প্রতি কক্ষে একজন করে দৈনিক ১৪০০ পর্যটক সেন্টমার্টিনে রাত্রি যাপন করুক। বাকি ১৬০০ পর্যটক গন্তব্যে ফিরে আসুক। বিগত ১০ বছর থরে এই প্রক্রিয়ায় পর্যটক যাতায়াত করে আসছে। সরকারি নির্দেশনা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত রাখতে চাই।
২৪ ফেব্রুয়ারী সেন্টমার্টিন বিষয়ে নীতি নির্ধারনী সভা হচ্ছে। সেখানে সেন্টমার্টিন বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হচ্ছে জানতে পেরেছি। আমাদের বিশেষ অনুরোধ, ওই সভায় আমাদের দাবিসমূহ যেন গৃহীত হয়।
পর্যটনের স্বার্থে ১০টি জাহাজে করে দৈনিক ৩০০০ পর্যটক পারাপার করাতে চাই। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি ও নির্দেশনা কামনা করছি।
সাংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন স্কোয়াব সভাপতি তোফায়েল আহমেদ।
সাংবাদিকদের অনুরোধ করে তিনি বলেন, এমন কোন নিউজ করবেন না যাতে পর্যটনের ক্ষতি হয়।
নিজ এলাকার মান ক্ষুণ্ন করে এমন রিপোর্ট থেকে বিরত থাকা উচিত।
সেন্টমার্টিনের উন্নয়নের ক্ষেত্রে জাহাজ মালিকদের ভূমিকা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ৫০০ টাকা দিলেও আমরা অনেক সময় পর্যটকদের সেবা দিয়ে থাকি। আমরা চাই, বিশ্বব্যাপী কক্সবাজার আরো সমাদৃত হোক, সম্মান বাড়ুক। এ জন্য সবার সহযোগিতা দরকার।
সংবাদ সম্মেলনে কেয়ারি ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপক নুর মোহাম্মদ ছিদ্দিকি, টুয়াকের কর্মকর্তা এসএ কাজলসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

পাঠকের মতামত: