সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: কক্সবাজারের কলাতলীর দরিয়ানগরের শুকনাছড়ির ৭০০ একর বনভূমিতে বিসিএস প্রশাসন একাডেমির লিজ বাতিলের দাবীতে ফুঁসে উঠছে পরিবেশবাদীরা। রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে মেরিন ড্রাইভ সড়কে প্রতিবাদমূলক বিশাল মানবপ্রাচীরের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। মেরিন ড্রাইভ সড়কের শুকনাছড়ি প্রবেশমুখে এটি অনুষ্ঠিত হয়। মানবপ্রাচীরে অংশ নেয় শত শত স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা মুখে কালো পতাকা পরিধান করে।
মানবপ্রাচীর কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বাপা কক্সবাজারের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ ও সাংগঠনিক সম্পাদক এইচএম নজরুল ইসলাম।
এসময় বক্তারা বলেন, ৭০০ একর বন—পাহাড়, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে প্রশাসন একাডেমি গড়ে উঠলে এই অঞ্চলের পশুপাখি উদ্বাস্তু হয়ে যাবে। এমনিতেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণে হাতিসহ সকল পশুপাখির বিশাল আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত হাতি মারা পড়ছে। নতুন করে ৭০০ একর বনভূমি ধ্বংস করা হলে মানুষের নিঃশ্বাস নেওয়াও বন্ধ হয়ে যাবে। দ্রুত লিজ বাতিল না করা হলে ফুসফুস রক্ষায় আরো কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
প্রতিবাদী মানবপ্রাচীরে বক্তারা আরও জানান, সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণ করতে কক্সবাজার—টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংলগ্ন শুকনাছড়ির রক্ষিত বনভূমির ৭০০ একর জমি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ এলাকাটি প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন।
এ ছাড়া বিপন্ন এশীয় বন্যহাতিসহ দেশের অনেক বিপন্নপ্রায় বন্যপ্রাণীর নিরাপদ বসতি কক্সবাজারের এই বনভূমি। এই বনভূমিতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, তা স্পষ্টত আইনবিরোধী এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। তাই এডমিন একাডেমির নামে দেওয়া অবৈধ বন্দোবস্ত দ্রুত বাতিল করতে হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, ১৯৯০ সালে জারি করা ভূমি মন্ত্রণালয়ের একটি পরিপত্রে উল্লেখ রয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড় ও পাহাড়ের ঢাল বন্দোবস্তযোগ্য নয়। পাশাপাশি, ওই জমি মূলত বনবিভাগ বনায়নের জন্য ব্যবহার করবে। বন আইন অনুযায়ী, এ ধরনের রক্ষিত বনে কোনো ধরনের স্থাপনা করা নিষিদ্ধ।
বাপা কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় দেশের অন্যতম জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ সংরক্ষিত এ বনভূমিকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে খাসজমি হিসেবে দেখিয়েছে। ঝিলংজা মৌজার এ বনভূমি যে খাসজমি নয়, এটা সরকারি নথি ও রেকর্ডেই আছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব মালিকানাধীন ছাড়া যেকোনো জমি কাউকে দিতে হলে তা আগে অধিগ্রহণ করতে হবে। ভূমি মন্ত্রণালয় এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বরং চার হাজার ৮০০ কোটি টাকা মূল্যের ৭০০ একর জমি মাত্র এক লাখ টাকায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের কাজে রাষ্ট্রের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারি কর্মচারীরা যথেচ্ছভাবে ক্ষমতা, সরকারি অর্থ ও সম্পদের ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। দুর্নীতি ও অনিয়মের নতুন নতুন পথ নির্মাণ করছেন। কক্সবাজার নতুন প্রশাসন একাডেমি এমন আরেকটি উদ্যোগ মাত্র। জনগণের অর্থের অপচয় ও বিশাল একটি বন এবং এর জীববৈচিত্র্য নষ্ট করা ছাড়া এ থেকে কোনো ফল মিলবে না।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সমীর পাল, অনিল দত্ত, এম. জসীম উদ্দিন, ইসমাঈল সাজ্জাদ, ওসমান গণি, আজিম নিহাদ, দোলন ধর, কফিল উদ্দিন, শেখ সেলিম, এনামুল হক চৌধুরী, সুলতান আহমদ, ইসমাঈল হোসেন, এম.এইচ পারভেজ, ওমর ফয়েজ হৃদয়, জয়নাল আবেদীন, মো. মামুন, শহীদুল ইসলাম সাহেদ, ধ্রুব সেন দে, ফাতেমা আক্তার শাহী, আবছার কবির আকাশ, সাংবাদিক জাহেদ প্রমূখ।
পাঠকের মতামত: