ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

দেশের ৫০ লাখ শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত

sadআল-আমীন আনাম :::

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। সবার বাঁচার অধিকার আছে কিন্তুসমাজে একটু ভিন্ন ভাবে বেঁচে থাকে দরিদ্র পরিবারের শিশুরা। এদের সোনালী ভবিষ্যত অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে। যে বয়সে তাদের খাতা কলম নিয়ে স্কুলে যাবার কথা ছিলো, ঠিক সেই বয়সে শুধুমাত্র দারিদ্র্যের কারণে আজ ওরা শিশু শ্রমিক। প্রতিদিনই জীবন ধারণ আর দু’বেলা আর দু’মুঠো অন্নের জন্য তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতেই দ্বিধাবোধ করছে না। মূলত তাদের নিজেদের খাওয়া আর পরিবারের খাওয়ার জন্য শিশুরা লেখাপড়ার পরিবর্তে পেশার কঠিন আবর্তে জন্মের পরেই চলে যাচ্ছে।
হযে শিশুদের কন্ঠে শোনার কথা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ কিন্তু তারা আজ নির্মান শ্রমিক আবার কেউ হেলপার। অল্প বয়সেই স্কুলের পরিবর্তে তার শ্রমিক কার্যালয়ে গিয়ে ভীড় জমায় কাজের জন্য। বই খাতার পরিবর্তে হাতে চায়ের কাপ নতুবা লোহার হাতুড়ী আজ তাদের হাতে। ফলে প্রাপ্ত বয়স্ক হতে না হতেই ঝরে যাচ্ছে অনেক শিশু।
সারা দেশে প্রায় ৫০ লাখ শিশু নিষিদ্ধ শিশু শ্রমের শিকার। এদের সোনালী ভবিষ্যত অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে। যে বয়সে তাদের খাতা কলম নিয়ে স্কুলে যাবার কথা ছিলো, ঠিক সেই বয়সে শুধুমাত্র দারিদ্র্যের কারণে আজ ওরা শিশু শ্রমিক। গত চার বছরে এই শ্রমিক বেড়েছে ১০ লাখ।
বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং আইএলও’র জরিপ অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ রয়েছে ৪৫ ধরনের। আর এর মধ্যে ৪১ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করছে শিশুরা। শিশু শ্রমিকদের মধ্যে ৭৩ দশমিক ৫০ ভাগ পুরুষ শিশু এবং ২৬ দশমিক ৫০ ভাগ নারী শিশু। শিশু শ্রমিকের ৬ দশমিক ৭০ ভাগ আনুষ্ঠানিক খাতে এবং ৯৩ দশমিক ৭০ ভাগ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যে রয়েছে মোটর ওয়ার্কসপে কাজ করা, ওয়েল্ডিং, গ্যাস কারখানা, বেলুন কারখানা, লেদ মেশিন, রিকশা চালানো, মাদক বাহক, বিড়ি শ্রমিক, বাস-ট্রাকের হেলপার, লেগুনার হেলপার, নির্মাণ শ্রমিক, গৃহ শিশু শ্রমিক, এমব্রয়ডারি, জাহাজ শিল্প, চিংড়ি হ্যাচারি, শুঁটকি তৈরি, লবণ কারখানা, বেডিং স্টোরের শ্রমিক, ইট ভাঙা, ইট ভাটা শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক, ট্যানারি এবং রঙ মিস্ত্রিসহ আরো বিভিন্ন ধরনের কাজ।
১০ বছরের শিশু রানা। যে বয়সে বাবা-মায়ের আদর আর বই-খাতা নিয়ে স্কুল থাকার কথা সেই বয়সে আজ লেগুনার হেলপার। ভোর থেকে মাঝরাত পর্যন্ত যাত্রী ডাকা ও ভাড়া তোলা, লেগুনাকে গন্তব্যে নিয়ে যেতে চালককে সহযোগিতা করাই তার কাজ। রাজধানীর নিউ মার্কেট থেকে ফার্মগেট রুটে এক বছর ধরে লেগুনায় হেলপারি করছে রানা। এই রুটে সব লেগুনাতেই তার মতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক শিশু কাজ করছে।
৯ বছরের শিশু সোহেল। বাবা নেই, মা গার্মেন্টসে কাজ করে। সংসারে ৩ ভাইবোনের মধ্যে সোহেল সবার বড়। সোহেলরে মা গার্মেন্টস থেকে যে টাকা পায় তাতে তাদের সংসার চলে না। তাই বাধ্য হয়ে সোহেলকে বিপজ্জনক যন্ত্রপাতি দিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয় ওয়ার্কশপে। অথচ একটি সচ্ছল জীবন পেলে, লেখাপড়ার পর্যাপ্ত সুযোগ পেলে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এরাই হয়তোবা দেশের গৌরব হতে পারত সোহেল।
জীবন-জীবিকা নির্বাহের তাগিদে ৮ বছরের শিশু রিয়াজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে ফেরি করে বাদাম বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ একটি সচ্ছল জীবন পেলে ভবিষ্যতে সে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারতো। জিয়াজের স্বপ¦ ছিল লেখাপড়া করে বড় কিছু হবে কিন্তু রিয়াজের স্বপ্ন আজ স্বপ্নই থেকে গেল।
রিয়াজ জানান, প্রতিদিন সকালে বাদাম নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। সারাদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন চত্বরে খেয়ে না খেয়ে ফেরি করে বাদাম বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতিদিন বাদাম বিক্রি করে ৭০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। আর ওই লাভের টাকা দিয়েই সন্ধ্যায় চালসহ বাজার করে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। বর্তমানে বাদাম বিক্রির টাকা দিয়েই ছোট বোন ও মাকে নিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে।
রাজিব, বয়স-১১ বছর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। ঢাকায় কারওয়ান বাজার বস্তিতে থাকে রাজিব পরিবারে বড় ছেলে তার আরও ১ টা ভাই ও ১ টা বোন আছে যারা খুবেই ছোট কিছু করে না। বাবা অসুস্থ কাজ করতে পারে না। তাই বাধ্য হয়ে পান, সিগারেট বিক্রির কাজ শুরু করে। তার এই কাজ করতে ভাল লাগে না সংসারের খরচ চালানোর জন্য তাকে এই কাজ করতে হচ্ছে। ( আমাদের সময়):

পাঠকের মতামত: