ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

৪৭ বছরেও অবহেলায় চকরিয়ার ৬ শহীদ বীর ও তাদের পরিবার

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া:

নরপিশাচ পাকিস্তানীদের শোষন আর শৃঙ্খলা থেকে মুক্ত হয়ে সম্ভাবনার বাংলাদেশ একটি লাল সবুজের পতাকা অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীনতা পেয়েছে ৪৬বছর আগে। ১৯৭১ সালে দেশের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষের মধ্যে সম্মুখযুদ্ধে আতœহুতি দেন চকরিয়া উপজেলার ৬জন বীর যোদ্ধা। তাঁরা যুদ্ধ করে মাতৃভুমির জন্য শহীদ হলেও স্বাধীনতার এতবছর পরও দৃশ্যমান কোন স্মৃতি নেই আপন জম্মস্থানে। ফলে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনে উপজেলাবাসীর কি পরিমান অবদান ছিল সেই সম্পর্কে কিছুই জানেন না নতুন প্রজম্মের তরুন যবুকরা। এমনকি চকরিয়া উপজেলার শহীদ ৬ বীরের অবদান সম্পর্কে ওয়াকিবহালও নন এই প্রজম্মের হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ আনুষ্টানিক ভাবে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙ্গালী জাতির সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু হলে চকরিয়ার ৬ জন কৃতি সন্তান প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ওই সময় যুদ্ধকালীন সময়ে তারা দেশের জন্য জীবন দেন পাক হানাদার বাহিনীর হাতে। যাদের রক্তের বিনিময়ে চকরিয়া আজ গৌরব উজ্জল তারা হলেন, বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের শহীদ আবদুল হামিদ, পৌরসভার বাটাখালী গ্রামের শহীদ হাবিলদার আবুল কালাম, কেয়ারবিল ইউনিয়নের শহীদ এনামূল হক, খিলছাদক গ্রামের শহীদ সিপাই আকতার হোসেন, চিরিংগা ইউনিয়নের পালাকাটা গ্রামের শহীদ গোলাম কাদের ও হারবাং ইউনিয়নের কালা সিকদার পাড়া গ্রামের শহীদ গোলাম সাত্তার।

জানা গেছে, শহীদ আবদুল হামিদ যুদ্ধের সময় চট্রগ্রাম সরকারী বাণিজ্য মহাবিদ্যালয়ে ছাত্র থাকা অবস্থায় দেশ মাতৃকার টানে লেখাপড়া গুটিয়ে ভারত থেকে গেরিলা প্রশিক্ষন নিয়ে দেশে এসে পার্বত্য লামা আলীকদম ও লোহাগাড়ার পুটিবিলা এলাকায় যুদ্ধ শুরু করেন। ১৯৭১ সালের ৪ নভেন্বর র্বামা সীমান্তে ফুরুইক্যা বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে ককসবাজার অবস্থানরত পাক বাহিনীর ক্যাপ্টেন রিজভীর হাতে সোর্পদ্দ করেন। প্রায় ১৫ দিন পাকবাহিনী তার উপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে ১৯ নভেম্বর টেকনাফে নিয়ে গিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে। শহীদ হাবিলদার আবুল কালাম ছিলেন একজন সৈনিক। তিনিও দেশ মাতৃকার টানে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ১ নম্বর সেক্টরে। র্পাবত্য চট্রগ্রামের কেরানী পাড়ায় তিনি পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধে শহীদ হন। শহীদ এনামূল হক ছিলেন সেনা বাহিনীর ৮ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন সদস্য। তিনি সরকারী চাকুরী ছেড়ে দেশের টানে অংশ নেন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে। ৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকবাহিনী তাকেসহ ১২ মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার উদ্যেশে নিয়ে যাওয়ার পথে তারা গাড়ী চালককে হত্যা করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে ৯ ডিসেম্বর র্পাবত্য চট্রগ্রামের কেরানী পাড়ায় পাকবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ পাক বাহিনী আমেরিকা থেকে সমুদ্র পথে সোয়াথ জাহাজ যোগে মুক্তিকামী বাঙ্গালী নিধনের জন্য অস্ত্রের চালান তুলেন চট্রগ্রাম বন্দরে। ওই সময় অস্ত্র নামানো পতিহত করতে চেষ্টাকালে গুলিতে শহীদ হন তিনি। ২৫ মার্চ যুদ্ধের প্রথম দিকে শহীদ হয়েছেন পালাকাটার গোলাম কাদের ও সিপাই আকতার হোসেন পাক বাহিনীর নিমর্ম নারকীয়তায়।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ ছয় বীর সেনানীর অবদান স্বরন করে চকরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হাজী আবু মো.বশিরুল আলম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে শোষনহীন ও সমৃদ্ধশালী হিসেবে প্রতিষ্টায় বীর শহীদদের আতœত্যাগ বতর্মান প্রজম্মকে অবশ্যই জানানো উচিত। তবে এ ব্যাপারে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রশাসন এই বীর শহীদদের স্মৃতি প্রতিষ্টা করে তাদের অবদান ও আতœত্যাগের প্রতিচ্ছবি দেশ জাতির কাছে তুলে ধরতে পারে। এতে করে বর্তমান প্রজম্মের তরুন, যবুক, শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু জানতে পারবে।

১৯৭১ সালে মাতৃভূমি রক্ষার আন্দোলনের মত স্বাধীনতা সংগ্রামে চকরিয়া বাসীর অংশগ্রহন স্বাধীনতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ১৯৭১ সালের ১০ই মার্চ দেশপ্রেমিক চকরিয়া বাসীর বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ সুগম করার লক্ষে “স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদ” এবং “স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম চকরিয়া থানা “গঠন করে। তথ্য উপাত্ত অনুসারে জানা যায় সর্বপ্রথম এস কে শামসুল হুদাকে সভাপতি এবং প্রাক্তন জাতীয় সংসদ সদস্য ডা.শামসুদ্দিন চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মন্ডিত করে স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদের কার্যকরি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। যেই তিনজন ব্যাক্তি সংগ্রাম পরিষদের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন তারা হচ্ছে আলহাজ্ব আনোয়র হোসেন, শামসুল হুদা বি এস সি,হাজী আবু তাহের।মফজল আহমদ ও মাষ্টার আব্দুল মালেক কোষাদক্ষ ও সহ- কোষাদক্ষ নির্বাচিত হয়েছিলেন। জমির উদ্দীন সাংগঠনিক ও তাহের আহমদ দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। অতঃপর আনোয়ারুল ইসলাম বাবু মিয়,মাষ্টার আব্দুল মালেক,মফজল আহমদ,মোজাম্মেল হক বি এ,অধ্যাপক মমতাজ আহমদ চৌধুরী,আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালী,হাবিলদার গোলাম কাদের, হাবিলদার আবুল কালাম, মৌলানা নজির আহমদ,হাজী বশিরুল আলম প্রমুখ সংগ্রাম পরিষদের তত্তাবধানে ছিলেন।সংগ্রাম কমিটি গঠনের অব্যবহিত পরে আনোয়ারুল হাকিম দুলালকে আহ্বায়ক করে সিরাজুল হক,এনামুল হক, সাহাবুদ্দিন, রেজাউল করিম চৌধুরী,খায়রুল আলম,আনোয়ার হোসাইন,শিব্বির আহমদ,গিয়াস উদ্দিন,আবু তাহের এবং শামসুল আলমকে সদস্য করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।এই কমিটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন এ এইচ এম সালাহ্উদ্দিন মাহমুদ, নুরুল আবচার এবং নাছির উদ্দিন।

জানা গেছে, ২৩শে মার্চ চকরিয়া বিমান বন্দরের সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে এক বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।প্রবীনদের ভাষ্যমতে তখনকার সময়ে দশহাজারের অধিক লোকের সমাগম হয়েছিল। মূলত জনসভার পর থেকে চকরিয়া বাসী স্বাধীনতা উত্তাল স্বপ্নের ব্যাকুল মদিরতায় আরো গভীর সংকল্পের ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে বলিয়ান হয়ে উঠে। স্বাধীন বাংলা বিনির্মাণেরর দীপ্ত শফথে অপ্রতিরুদ্ধ হয়ে উঠে তাদের মন ও মনন।সিপাহী এনামুল হক ২৫শে মার্চ কালো রাতে ১২জন বাঙালী সিপাহীসহ পাক বাহিনীর হাতে বন্দী হন।২৬শে মার্চ তাদেরকে হত্যা করার জন্য ট্রাকযোগে আগ্রাবাদ নিয়ে যাবার পথে সুকৌশলে ট্রাক ড্রাইভারকে হত্যা করে ট্রাকসহ সুদূর টেকনাফে চলে যান।কেরানী পাড়ার যুদ্ধে পাক বাহিনীর ঘাটি ধ্বংসের অভিযানের সময় সিপাহী এনামুল হক শহীদের মিছিলে শামিল হন।পালাকাটা গ্রামের শহীদ সিপাহী গোলাম কাদেরকে ৭১ এর ২৫শে মার্চ গভীর রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনা নিবাসে গুলি করে হত্যা করা হয়। চট্রগ্রাম বন্দরে ভারী অস্ত্্র নামানোর বিষয়ে অগ্নিঝরা প্রতিবাদকারীদের অন্যতম ছিলেন চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের সন্তান শহীদ গোলাম সত্তার। ২৮শে মার্চ সংগ্রাম কমিটির সিদ্ধান্তে শহীদ হাবিলদার আবুল কালাম,নায়েক বদিউল আলম, নায়েক আশরাফ, হাবিলদার গোলাম কাদের, মোজাম্মেল হক, শামশুল হুদা, শের আলম, শাহনেওয়াজ, আলহাজ আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালী, খলিলুর রহমান,আবুল কাশেম প্রমুখ যোদ্ধারা চকরিয়া থানায় এক সাহসী হামলা চালিয়ে ১১টি৩০৩ রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধাদের জন্য নিয়ে আসে, ৩০শে মার্চ চকরিয়া থেকে সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ৫ট্রাক খাদ্যশস্য চট্রগ্রাম রেস্ট হাউজ,পটিয়া, কালুরঘাট ও অন্য কয়েকটি এলাকায় অবস্থানরত মুক্তিযুদ্ধের জন্য সাহায্য হিসাবে পাঠানো হয়। ১৮ই এপ্রিল মোজাম্মেল হক বিএ এর নেতৃত্বে আরেকদল মুক্তিবাহিনী একটি সাদা টয়োটা কারসহ চারজন সশস্ত্র লোককে গ্রেপ্তার করেন।এরমধ্য দুজনকেই চকরিয়ার মেইন বাস স্টেশনে চিরিংগায় গুলি করে হত্যা করা হয় এবং বাকী দুজনকেই ফাঁসিয়াখালী ঢালায় গুলিকরে আহত করা হয়।

৭১ সালের ২৭শে এপ্রিল হানাদার বাহিনী চকরিয়ার প্রতিরোধ বুহ্য ভেঙ্গে চকরিয়ায় প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। জনগণ ও ট্রেনিংপ্রাপ্ত গেরিলাদের সক্রিয় সংগ্রামে পাকহানাদার বাহিনীকে দীর্ঘ ১মাসের বেশি কোনঠাসা করে রাখতে সক্ষম হয়নি চকরিয়াবাসী।২৭শে এপ্রিল প্রত্যুষে কালুরঘাট সেতুতে পাকবাহিনীর সাথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লে.শামসুল মুমিন আহত অবস্থায় হানাদার বাহিনীর হাতে ধৃত হয় এবং ক্যাপ্টেন হারুণ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হানাদার বাহিনীর বনদীত্ব থেকে সহযোগীদের সহায়তায় পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। দুপুরে আহত ক্যাপ্টেনকে ডা.শামসুদ্দিন ও আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালি প্রথমে পটিয়া হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে স্থায়ী চিকিৎসার জন্য চকরিয়াস্থ মালুমঘাট খৃষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে আসেন।পাক বাহিনীদের চকরিয়া আয়ত্তে আসার পর চকরিয়া কলেজে ক্যাম্প স্থাপন করে একটি মিনি ক্যান্টনমেন্ট গড়ে তুলে।পাক সেনারা প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে চিরিংগার হিন্দুপাড়া আক্রমন করে সমুদয় ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।

হানাদার বাহিনী তুচ্ছ কারণে সাধারণ লোকের উপর অকথ্য অত্যাচার এবং সহায় সম্পদ লুট করে ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দিতে থাকে।চকরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ বিশেষ করে চিরিংগা, বড়ইতলী,হারবাং, লক্ষ্যারচর,ফাঁসিয়াখালী, ডুলাহাজারা পাক বাহিনীরলুটপাটের প্রধান লক্ষ্যস্থলে পরিণত হয়।পাকসেনারা মেজর জামানের সহযোগিতা ও মদদে ১৯৭১ সালের ১২ই মে ফাঁসিয়াখালীর স্বনামধন্য মহাজন পিয়ারে মোহন দে-কে চকরিয়া থানায় নিয়ে অকথ্য নির্যাতন চালানোর পর ফাঁসিয়াখালীর ঢালায় নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।লুণ্ঠনকালে তার বাড়িতে আড়াইমন স্বর্ণ, ২২মন রৌপ্য এবং নগদ সাড়ে ৪লক্ষ্য টাকা লুণ্ঠনকারীরা নিয়ে যায়।মাতৃভূমি রক্ষার জন্য মাহবুবুর রহমান,আব্দুল হামিদ,জহিরুল ইসলাম,নজির আহমদ ও আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীসহ সাতজনের একটিদল সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য ভারত গমন করেন।

পাকবাহিনী ১৯৭১ সালের ৪টা নবেম্বর গভীর রাতে আব্দুল হামিদ ও তার ভাই এবং ভগ্নিপতিকে আটক করে নিয়ে যায়,তৎমধ্যে আব্দুল হামিদকে কক্সবাজার নিয়ে গিয়ে পাঞ্জাবী ক্যাপ্টেন আসিফ রিজভীর কাছে সোপর্দ করা হয়। গোপনতথ্য বের করার জন্য আব্দুল হামিদের উপর অকথ্য নির্যাতন চলাতে থাকে। পাশবিক নির্যাতনের মাধ্যমে পাকহানাদারেরা তাঁর শরীরকে খান খান করে দেয়।১৯শে নবেম্বর টেকনাফের বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে আব্দুল হামিদকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।আব্দুল হামিদের মৃত্যু মুক্তিযুদ্ধাদের সম্মিলিত শক্তিকে মৃত্যুঞ্জয়ী করে তুলে। রক্তের ফোয়ারায় জ্বলে উঠে মুক্তিযুদ্ধাদের আপন তেজ। তেজীয়ান হয়ে মুক্তিযুদ্ধারা বান্দরবানের লামায় আক্রমণ চালায়। আক্রমণে মুক্তিযুদ্ধারা ১৭টি রাইফেল ও ৩৭০০গুলি হস্তগত করতে সক্ষম হয়।

শুধুমাত্র চকরিয়ার মুক্তিযুদ্ধারা কক্সবাজার, বান্দরবান পার্বত্য এলাকা ও চকরিয়ায় সীমাবদ্ধ ছিল না,চকরিয়াবাসী মুক্তিযুদ্ধাদের অবদান সারাদেশ ব্যাপি বিস্তৃতি ছিল। চকরিয়ার সূর্য সন্তান হাবিলদার আবুল কালামের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধাদের একটি টিম পার্বত্য অঞ্চলে সফলতার সাথে শত্রুমুক্ত করতে সক্ষম হন। চকরিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেসব সূর্য সন্তান স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিল তারমধ্য জনাব মুহাম্মদ আলী(হারবাং) এনামুল হক(বড়ইতলী) খলিলুর রহমান(ফাঁসিয়াখালী) নুরুল আবচার হেলালী(খুটাখালী)মাষ্টার নুরুল আলম(ডুলহাজারা)মাষ্টার নুরুল ইসলাম(বিনামারা)কে.এম.জলিল চৌধুরী(কৈয়ারবিল)জিন তাহের (কৈয়ারবিল) মাষ্টার সালামত উল্লাহ(কৈয়ারবিল) আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন(কাকারা) হাকিম ওয়াজেদ আলী(কাকারা)দেলোয়ার হোসেন(হালকাকারা)মৌলানা নুরুল হোসাইন (ভরামহুরী)আব্দুল হান্নান বিএ (ভরামহুরী)যুবায়ের আহমদ বিএসসি(বদরখালী)।

স্বাধীনতা যুদ্ধে চকরিয়া উপজেলার যে সকল সূর্য সন্তান রক্ত দিয়ে নিজ মাতৃভূমিকে চির ঋণী করে রেখেছেন তাদের মধ্যে শহীদ হাবিলদার আবুল কালাম,শহীদ আব্দুল হামিদ, শহীদ এনামুল হক,শহীদ গোলাম কাদের,শহীদ আক্তার হোসেন,শহীদ সুবেদার গোলাম সত্তার অন্যতম।৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলার সূর্য যখন উদিত হয়, ধ্বংস স্তুপের মাঝে চকরিয়াবাসী ঐতিহাসিক বিজয় মঞ্চে ঘুরে দাড়ানোর দীপ্ত অঙ্গীকার নিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার শফত নেন।বিজয় মঞ্চের প্রেরণা নিয়ে চকরিয়াবাসী সকল মুক্তির বীর সেনানীদের আতœত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে চলছে।

জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার ৪৭বছর পরও উপজেলা প্রশাসন কিংবা রাজনৈতিক দলের নীতিনির্ধারকরা এই ৬ বীর শহীদের মর্যাদা প্রতিষ্টায় কিছু করতে না পারলেও চকরিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র (বর্তমান চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান) ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব জাফর আলম একটু হলেও অনুকম্পা দেখিয়েছেন এক বীর শহীদের প্রতি।

জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম বলেন, পৌর মেয়র থাকাকালে আমার নেতত্বাধীন পৌর পরিষদ ২০০৯ সালে চকরিয়ায় নবনির্মিত পৌরবাস র্টামিনালকে শহীদ আবদুল হামিদ পৌরবাস র্টামিনাল নামে ঘোষানা করে একটি দায়বদ্ধতা পূরণ করতে পেরেছি। একই সময়ে তিনি বিজয় মঞ্চে এলাকায় ব্যক্তিগত অনুদানে প্রতিষ্টা করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের একটি কার্যালয়। তিনি বলেন, বর্তমানে এলজিইডির অর্থায়নে চকরিয়া জমজম হাসপাতালের সামনে মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কৃষকলীগ কেন্দ্রীয় যুগ্ন সম্পাদক ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে শহীদ আবদুল হামিদের নামে পৌরবাস র্টামিনাল নামকরন হয়েছে। আমি দায়িত্বে থাকাকালে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে শহীদ আবদুল হামিদের নামে বমুবিলছড়িতে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্টা করেছি। শহীদ হাবিলদার আবুল কালামের নামে একটি স্মৃতি পাঠাগার করা হয়েছে। এরআগে বীর মুক্তিযোদ্ধা এসকে সামসুল হুদার নামে একটি সড়কের নামকরন করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: