ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

২৭ প্রাণ কেড়ে নিয়ে রোয়ানু গেল ভারতের ত্রিপুরা মিজোরামে

1463767257নিউজ ডেস্ক :::

চট্টগ্রাম এলাকার ওপর দিয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করার পর বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু পরিণত হয়েছে স্থল নিম্নচাপে। ঝড় কেটে যাওযায় সমুদ্র বন্দরগুলোকে বিপদ সংকেত নামিয়ে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদরা জানান, মোটামুটি ৩০০ কিলোমিটার ব্যাসের এই ঘূর্ণিঝড় বেলা দেড়টার দিকে চট্টগ্রাম উপকূলের সন্দ্বীপ, হাতিয়া, কুতুবদিয়া, সীতাকুণ্ড ও ফেনী উপকূল দিয়ে স্থলভাগে উঠে আসে। এরপর বৃষ্টি ঝরাতে ঝরাতে সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাংলাদেশ অঞ্চল পেরিয়ে যায়। সন্ধ্যায় সেটি অবস্থান করছিল ত্রিপুরামিজোরাম এলাকায়। ঝড় সরে গেলেও সাগর উত্তাল থাকায় এবং বাতাসের গতি বেশি হওয়ায় সতর্কতা হিসেবে সমুদ্র বন্দরের জন্য ৩ নম্বর সংকেত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হলে সতর্কতা সংকেতও তুলে নেওয়া হবে। আবহাওয়া অধিদপ্তর ইতোমধ্যে জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর বিপদ কাটলেও এর প্রভাবে আরও দুই দিন বরিশালচট্টগ্রাম উপকূলসহ দেশের প্রায় সব জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে।

বিডিনিউজ বাংলানিউজসহ বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার খবরে জানা যায়, রোয়ানুর আঘাতে গাছ ভেঙে ও বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৭ জনের। চট্টগ্রাম, ভোলা ও পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার, চাঁদপুর, ঝালকাঠি, বরিশালসহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঝড়ে শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার পাশাপাশি ঘরবাড়ি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির খবর এসেছে। ঝড়ো হাওয়ার দাপট শুরু হয়েছিল শনিবার ভোর রাত থেকেই, সেই সঙ্গে বৃষ্টি। বেলা দেড়টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রামের কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করে। এরপর ঝড়ের দাপট চলে আরও কয়েক ঘণ্টা।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ২৭ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে উপকূলীয় সাত জেলা থেকে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে মাছেলেসহ ১৫ জন, নোয়াখালীর হাতিয়ায় জোয়ারে ভেসে মামেয়েসহ তিনজন ও ফেনীর সোনাগাজীতে এক রাখাল, কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় চাপা পড়ে ও নৌকার ধাক্কায় তিনজন, ভোলার তজমুদ্দিন ও দৌলতখানে ঘরচাপা পড়ে তিনজন, পটুয়াখালীর দশমিনায় এক বৃদ্ধা এবং লক্ষ্মীপুর সদরে গাছ উপড়ে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।

হাতিয়ায় মামেয়েসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে শনিবার সকালে, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু থেকে বাঁচতে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে জোয়ারে ভেসে। নিহতরা হলেনবয়ার চরের আলির ঘাট এলাকার আবুল কাশেমের স্ত্রী মিনারা বেগম (৩৫), তাদের মেয়ে রুমা (১০) ও জাহাজমারা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সালাউদ্দিনের স্ত্রী মাকসুদা বেগম (৫১)

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের সাইক্লোন প্রিপার্ডনেস প্রোগ্রামের উপ পরিচালক মো. শাহাবুদ্দীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শুক্রবার শেষরাতের দিকে ভোলায় প্রবল ঝড়ো হাওয়া শুরু হলে তজুমদ্দিনে ঘর ও গাছ চাপা পড়ে দুজনের মৃত্যু হয়। এরা হলেনচাঁদপুর ইউনিয়নের শশিগঞ্জ গ্রামের নয়নের স্ত্রী রেখা বেগম (৩৫) ও মফিজের ছেলে আকরাম (১৪)

আর বিকাল ৩টার দিকে দৌলতখান উপজেলায় ঘর চাপা পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কর্মকর্তা কহিনুর বেগম। নিহত রানু বিবি (৫০) উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী।

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে কুতুবদিয়া উপজেলায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। নিহতরা হলেন, উপজেলার উত্তর ধুরুং এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে মো. ইকবাল (২৫), উত্তর কৈয়ার বিল এলাকার ফয়েজুর রহমানের ছেলে ফজলুল হক (৫৫) এবং আলী আকবর ইউনিয়নের মুস্তাফিজুর রহমানের ছেলে শফিউল আলম (৩৬)

পটুয়াখালীর দশমিনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজহারুল ইসলাম জানান, সকালে প্রবল ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে ঘর ভেঙে পড়লে পটুয়াখালী দশমিনা উপজেলার সদর ইউনিয়ন লক্ষ্মীপুর গ্রামে নয়া বিবির (৫২) মৃত্যু হয়। ঝড়ে ওই এলাকার ১০১২টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে বলে তিনি জানান।

লক্ষ্মীপুরে ঝড়ো হাওয়ায় গাছ উপড়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও একজন। উপজেলার উত্তর তোওয়ারিগঞ্জ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাজ্জাদুর হাসান জানান। নিহত আনোয়ার উল্লাহ (৫৫) ওই এলাকার বশির উল্লাহর ছেলে।

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু দুপুরে ফেনীর সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানলে সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়ার জেলে পাড়া এলাকায় জোয়ারের পানিতে ভেসে এক রাখালের মৃত্যু হয়েছে। নিহত নুর আলম (৩৪) এ বাড়ি চরচান্দিয়ার জেলে পাড়া এলাকায় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন সোনাগাজীর ইউএনও শরীফা হক। এছাড়া রোয়ানুর প্রভাবে সোনাগাজীর তিনটি ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রামের ঘরবাড়ি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

 

পাঠকের মতামত: