সাটুরিয়ার সেই দেড় টনের ওজনের ষাঁড় গরুটির উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় শুক্রবার সকাল পর্যন্তও বিক্রি হয়নি। স্কুল ছাত্রী ইতি আক্তার ও তার মা পরিষ্কার বিবির আলোচিত রাজা বাবু বিক্রি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন পরিবারটি। দেড় টনের ওজনের এ ষাঁড়টির মালিক খান্নু মিয়া জানান, ১৫-১৬ লাখ টাকা না পেলে এ বছরও বিক্রি করবেন না।
মানিকগঞ্জে দেড় টন ওজনের ষাঁড় গরু লালন করে তাক লাগিয়েছেন জেলার সাটুরিয়া উপজেলার দেলুয়া গ্রামের পরিষ্কার বিবি ও তার স্কুল পড়ুয়া কন্যা ইতি আক্তার। এ শিরোনামে নয়া দিন্তন অনলাইন ১৪ আগস্ট ও প্রিন্ট পত্রিকায় ১৫ আগস্ট প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ নিউজটি প্রকাশিত হওয়ার পরই সারা দেশেই এ সংবাদটি ভাইরাল হয়ে যায়। ১৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশের জনপ্রিয় টিভি, প্রিন্ট পত্রিকা ও অনলাইনে প্রকাশিত হয়।
এর পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক্ এবং ইউটিউব ব্যাপক প্রচারের পর সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্জল থেকে ৩৯ মণ ওজনের ষাঁড়টি দেখার জন্য ভিড় করে।
সাটুরিয়া উপজেলার দিঘুলীয়া ইউনিয়নের দেলুয়া গ্রামের পরিষ্কার বিবি ও তার স্কুল পড়ুয়া কন্যা ইতি আক্তার। গরু লালন পালন করেই তাদের সংসার চলে। গেল বছর কোরবানি ঈদে ২৭ মন ওজনের একটি ষাঁড় ১০ লাখ টাকা বিক্রি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। অবশ্য ১০-১২ বছর আগে থেকেই পরিষ্কার বিবি ও তার স্বামী খান্নু মিয়া গরু লালন-পালন করতেন। কিন্তু তার কন্যা ইতি আক্তার দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করা শুরু করেন। আর ১ম বছরেই লাভবান হওয়ায় এ বছর তিনি আরও বড় আকৃতির গরু কিনে মোটাতাজকরণ শুরু করেন।
এ ব্যাপারে ইতি আক্তার জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাজা বাবুকে লালন করেছি। রাজা বাবু লম্বায় ৭ ফুট ৩ ও ৯ ফুট ১ ইঞ্চি বেড়ের এ ষাঁড়টির দাঁত আছে ৪টি। বর্তমান ওজন ১৫৬৬ কেজি (৩৯ মণ)। প্রাণী সম্পদ অফিসের ডাক্তার এসে ওজন করেছেন।
ইতি আরো জানান, আমাদের রাজা বাবু লিখে ফেসবুক, গুগল ও ইউটিউবে সার্চ দিলেই শত শত লিংক চলে আসে। ১৫/১৬ দিন ধরে সারা দেশি বিদেশ থেকে অসংখ ফোন আসে। প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে যানবাহন ভাড়া করে একবার দেখতে আসছে রাজা বাবুকে দেখার জন্য।
অন্তত ৫০টির মতো বড় বড় কোম্পানির লোক রাজা বাবু কে দেখে দাম বলে গেছে এবং মোবাইল নাম্বার নিয়ে যায়। কিন্তু ভালো দাম পাচ্ছি না বলে বাবা রাগ করে ষাঁড়টিকে বিক্রি করবেন না বলে জানিয়েছেন।
অনলাইন ডেস্ক :::
ষাঁড়ের মালিক খান্নু মিয়া জানান, গাজীপুর থেকে একটি কম্পানি ১৩ লক্ষ টাকা দাম বলে গেছে। সে এখনো নিতে চাচ্ছে কিন্তু ১৫ লক্ষ টাকা না হলে সে বিক্রি করবেন না।
এ ব্যাপারে পরিষ্কার বিবি জানান, আমার পরিবারের ৪ জন সদস্য ৩ বছর বয়সী ফিজিয়ান জাতের এ ষাঁড়টি এক বছর ধরে অনেক কষ্ট করে লালন পালন করেছি। গ্রাম থেকে চড়া সুদে টাকা এনে রাজা বাবুকে লালন পালন করেছি। তাই কম দামে কেমনে দেই?
এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ খুরশেদ আলম বলেন, ঈদকে সামনে রেখে সাটুরিয়া ইতি ও পরিষ্কার বিবির লালিত এ ষাঁড়টির ওজন আমি নিজে মেপেছি। ১৩ আগস্ট পযন্ত ষাঁড়টি ওজন ১৫৬৬ কেজি, যা ৩৯ মণ ও দেড় টনেরও বেশি ছিল। আমরা নিয়মিত এ গরুটির দেখভাল করেছি। কিন্তু এ আলোচিত ষাঁড়টি বিক্রি না করতে পারলে তাদের অনেক বড় লোকসান হয়ে যাবে বলে মনে করছেন এ প্রাণী সম্পদের কর্মকর্তা।
ইতি আক্তার ও পরিষ্কার বিবি তার শখের ফিজিয়ান জাতের ষাঁড় “রাজা বাবু”-র শুক্রবারও বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তবে উপযুক্ত দাম না পেলে আরো একটি বছর রাজা বাবু কে লালন পালন করবেন।
রাজা বাবুকে কেউ কিনতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন খান্নু মিয়ার মোবাইলে : ০১৭০১৭৭০০০৫।
কোরবানির পশুর হাট কাদায় একাকার
নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল পুরের এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানীর বেশির ভাগ স্থানে জমে গেছে হাঁটুপানি। কোরবানির পশুর হাটগুলো কাদা পানিতে একাকার হয়ে যায়। নিজেরা কোনো মতে শরীরটাকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে পারলেও কোরবানির পশুগুলো ভিজে জবুথুবু হয়ে যায়। দুপুরের সময় ক্রেতা কম থাকায় পশুগুলো বিশ্রাম নেয়ার সময়ই শুরু হয় ঝম ঝম বৃষ্টি। মানুষে-পশুতে জড়াজড়ি করে কাটিয়ে দিতে হয়েছে বৃষ্টির সময়টা। হঠাৎ পশুর হাটে হাঁটুপানি হয়ে যাওয়ায় মানুষের চলাচলও থেমে যায় কিছুক্ষণ। রাজধানীর প্রায় সব কোরবানির পশুর হাটেই ছিল এমন অবর্ণনীয় দুরবস্থা। পশুর হাটগুলো বসে সাধারণত খোলা জায়গায়, মাঠের মধ্যে। বৃষ্টি হলেই মাঠের মাটি নরম হয়ে পরিণত হয় কাদামাটিতে। এর সাথে কোরবানির পশুর মলমূত্র মিশে মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দেয়।
পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তাগুলোতে জমে যায়। সুয়ারেজের ময়লা রাস্তায় মিশে যাওয়ায় কোথাও কোথাও হাটে আসা মানুষকে অথবা রিকশার যাত্রীদের নাক চেপে রাস্তায় চলতে হয়েছে। বৃষ্টি থামার পরপরই শুরু হয়ে যায় যানজট। একটার পেছনে আরেকটা এমনভাবে দাঁড়িয়েছিল নড়বারও উপায় ছিল না। দুপুরে গাড়ি বের করে অনেকে পড়েছিলেন বেকায়দায়। মাত্র ২০০ মিটার রাস্তা অতিক্রম করতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টা। রাস্তা থেকে নিচু সব বাড়িরই নিচতলায় পানি ঢুকে গেছে। নিচতলার পানির রিজার্ভারে ময়লা পানি ঢুকে খাওয়ার পানি নষ্ট হয়ে যায়। নিচতলা পানিতে ডুবে যাওয়ায় গ্যাসের চুলায়ও পানি ঢুকে রান্না-বান্না বন্ধ হয়ে যায় অনেক পরিবারের।
মালিবাগ, মগবাজার, বাংলামোটর, ফার্মগেট, মহাখালী, রামপুরার বনশ্রী আবাসিক এলাকা, বাসাবো, খিলগাঁও, সবুজবাগ, গেণ্ডারিয়া, সদরঘাট এলাকা, ধানমন্ডি, এমনকি গুলশান-বনানী এলাকায় রাস্তায় পানি জমে যায়।
বৃষ্টিতে নারীদের ভোগান্তি ছিল সবচেয়ে বেশি। পুরুষের সাথে হুড়োহুড়ি করে গাড়িতে ওঠা সম্ভব হয়ে না উঠায় রিকশার সাহায্য নিতে এসে অনেককে গুনতে হয়েছে তিন থেকে চারগুণ বেশি ভাড়া। নটর ডেম কলেজের সামনে থেকে মতিঝিলের অফিস পাড়ায় যেতে রিকশা ৫০ থেকে ১০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে।
বর্ষার মধ্যেও ড্রেনগুলো পরিষ্কার না করা, সুয়ারেজের লাইনগুলো আবর্জনা, পলিথিন, ইট, গাছের ডালপালা-পাতা ইত্যাদি জমে স্বাভাবিক পানি নিষ্কাশনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া ঢাকা ওয়াসার অধীন সুুয়ারেজ লাইনগুলো সময় সময় পরিষ্কার করার নিয়ম থাকলেও সেখানে রয়েছে চরম গাফিলতি। এ ছাড়া রাস্তার পাশে দৃশ্যমান ড্রেনগুলো (সারফেস ড্রেন) অনেক জায়গায় একেবারেই বন্ধ। নিষ্কাশনের ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক কারণেই দ্রুত রাস্তায় পানি জমে যায়।
পাঠকের মতামত: