ঢাকা,মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

হুমকির মুখে চকরিয়ার বাঘগুজারা রাবার ড্যাম, নিষেধাজ্ঞা না মেনে ভারী ড্রেজার পারাপার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীতে নির্মিত দেশের বৃহত্তম বাঘগুজারা রাবার ড্যামটি (ব্যারেজ) চরম হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। এই রাবার ড্যামের ওপর দিয়ে কোন ধরণের ভারী পণ্য বা কোন বস্তু পারাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কয়েকজন বালুদস্যু তা মানছেন না। তারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার জন্য শক্তিশালী ড্রেজার (খনন যন্ত্র) বসাতে বিভিন্নস্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য সরাসরি বাঘগুজারা ড্যামটির ওপর দিয়েই এসব ড্রেজার পারাপার করায় হুমকির মুখে পড়েছে ড্যামটি।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যানুযায়ী, ইতোমধ্যে বাঘগুজারা রাবার ড্যামটির ওপর দিয়ে অন্তত ১৫টি ড্রেজার মেশিন পারাপার করা হয়েছে। এতে ড্যামটির অনেকস্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরো বেশকিছু শক্তিশালী ও ভারী ড্রেজার তৈরি করা হচ্ছে নদীতে অবৈধভাবে এবং অপরিকল্পিতভাবে বসিয়ে বালু উত্তোলনের জন্য।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে এই রাবার ড্যাম দিয়ে ধরে রাখা মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানি দিয়ে চকরিয়া ও পেকুয়ার প্রায় ৭০ হাজার একর জমিতে চাষাবাদ হয়। অবিলম্বে এসব অপতৎপরতা বন্ধ করা না গেলে আগামী শুষ্ক মৌসুমে এই রাবার ড্যাম সচল এবং পানি ধরে রেখে চাষাবাদ করা দূরহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, মাতামুহুরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের জন্য শক্তিশালী ড্রেজার মেশিন পারাপার করায় নদীর বাঘগুজারা পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রনাধীন রাবার ড্যামটি চরম হুমকির মুখে পড়েছে। এই অবস্থায় রাবার ড্যামটি যে কোন মুহূর্তে ফেটে গিয়ে বিকল হয়ে পড়লে মিঠাপানির সেচ সুবিধা নিয়ে আগামীতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে চাষাবাদ। এতে কৃষকদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ঘটনাটির বিষয়ে ড্যামের তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মচারীর কাছ থেকে বাধা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের কর্মকর্তা এবং চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জানালে ড্যামের কেয়ারটেকারকে পেটানোরও হুমকি দেয় প্রভাবশালীরা।
রাবার ড্যামের কেয়ারটেকার আবদুর রহিম বলেন, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে বাঘগুজারা রাবার ড্যামের ওপর দিয়ে শক্তিশালী একাধিক ড্রেজার মেশিন পারাপার করেছেন প্রভাবশালী মহল। আরো বেশকিছু ড্রেজার মেশিন পারাপার করার জন্য তারা জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
আবদুর রহিম বলেন, রাবার ড্যামের উপর দিয়ে এভাবে শক্তিশালী ড্রেজার মেশিন পারাপার না করতে প্রথমে একা, পরে কর্তব্যরত আনসার সদস্যদের নিয়ে বাধা দিই। এ সময় তারা আমাদের গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করে। পরে বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করি। এর পরেও প্রভাবশালীদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
আবদুর রহিম জানান, ভারী ড্রেজার পারাপারে যে কোন মুহূর্তে ড্যামের রাবার ছিঁড়ে পুরো ড্যামটি অকার্যকর হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে ড্যামস্থলে কর্তব্যরত আনসার সদস্যদের পাহারায় রেখে কয়েকটি ড্রেজার নদীতে আটকে দিয়েছি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্তরা আমাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিরিঙ্গা শাখা কর্মকর্তা (এসও) তারেক বিন ছগীর জানান, ঘটনাটি জানার পর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী আইনগত সহায়তা চেয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন।চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ বলেন, প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে মাতামুহুরী নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড দুটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করে। এই দুই ড্যামের রাবার ব্যাগ ফুলিয়ে প্রতিবছর শুস্ক মৌসুমে নদীর মিঠাপানি ধরে রাখা হয়। আর সেই পানি দিয়ে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক প্রান্তিক তাদের ৭০ হাজার একর জমিতে রকমারী ফসলের চাষ করেন।
তিনি আরো বলেন, যদি কোন কারণে ড্যামগুলো অকার্যকর হয় তাহলে এসব কৃষকের মাথায় হাত উঠবে। তাই সময় থাকতে সবাইকে বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

পাঠকের মতামত: