নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
আগামী ২৮ অক্টোবর নয়, কিছুটা পিছিয়ে চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নবনির্মিত রেললাইনের উদ্বোধন হবে আগামী ১২ নভেম্বর। ফলে বহুল কাঙ্খিত কক্সবাজারে ট্রেন যাত্রা করবে আগামী ১২ নভেম্বর। এর মাধ্যমে কক্সবাজারবাসীর বহুল আলোচিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।
রোববার (০৮ অক্টোবর) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ সুবক্তাগিন।
তিনি বলেন, নবনির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ আগামী ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী ১২ নভেম্বর সময় দিয়েছেন। কক্সবাজারের রেললাইন খুলে দেওয়া হলে কক্সবাজার সারা দেশের সঙ্গেই যুক্ত হবে।
প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ সুবক্তাগিন বলেন, চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ চলছে, যা উদ্বোধনের আগেই শেষ হয়ে যাবে। আর ১৫ অক্টোবর থেকে নতুন এই পথে ট্রেনের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হবে। রোববারও সারাদিন কক্সবাজারে নির্মিত আইকনিক রেলস্টেশন এবং ৫২ কিলোমিটার রেলপথ পরিদর্শন করেছি। আশা করি, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১২ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন কক্সবাজার পৌছাবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার।
দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের অদূরে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ২০১০ সালে হাতে নেয় সরকার। প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে ৯টি রেলওয়ে স্টেশন, চারটি বড় ও ৪৭টি ছোট সেতু। ১৪৯টি বক্স কালভার্ট ও ৫২টি রাউন্ড কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। লেভেল ক্রসিং রয়েছে ৯৬টি।
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু কক্সবাজারে দৃষ্টিনন্দন আইকনিক স্টেশনটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২১৫ কোটি টাকা। এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার।
এদিকে গত ২৮ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন পর্যবেক্ষণে এসে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির জানিয়েছিলেন, ‘দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প সারা দেশের জনগণের স্বপ্নের প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে। ১৫ থেকে ২০ অক্টোবর দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালু করা হবে।
হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এখন সরাসরি ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেন চলাচল শুরু হবে না। প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। আশা করছি, নভেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।’
চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর ব্যাপারে হুমায়ুন কবির বলেন, ‘চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু নির্মাণেও কোরিয়ার সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তির জন্য খসড়া পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, অক্টোবরের মাঝামাঝি কিংবা খুব অল্প সময়ের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন হবে। এরপরই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামের কালুরঘাটের পুরোনো যে সেতুটি রয়েছে তা দোহাজারী-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরুর আগেই সংস্কার করে মজবুত করার কাজ চলছে। অক্টোবরের মধ্যে সেতুটির সংস্কারকাজও সম্পন্ন হবে।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন হওয়ার পরের দিন থেকেই বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে না। আমরা হয়তো কিছুদিন সময় নেব। এরই মধ্যে হয়তো কালুরঘাটের পুরোনো সেতুতে ট্রেন সীমাবদ্ধ গতিতে চলবে।
দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন যে রেললাইনÑ এটাতে ১০০ বা ১২০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন লোকোমোটিভ ট্রেন যাতে চলাচল করতে পারে সে উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত কালুরঘাটে নতুন সেতু না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত পুরোনো সেতু অংশে শুধু সীমাবদ্ধ গতিতে ট্রেন চলবে। কিন্তু সেতুর পর থেকে ১০০ বা ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে।
জনবল নিয়োগের ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছিলেন, ‘দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পে রেলস্টেশনসহ সব স্তরে ১ হাজার ২০০ জনবল প্রয়োজন। এই জনবলের জন্য এরই মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে অনুমোদনের জন্য। সেটাও দ্রুত সময়ের মধ্যে অনুমোদন হয়ে গেলে জনবলও পেয়ে যাব।’
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামের পটিয়া স্টেশনে প্রস্তুত রাখা হয়েছে একটি ট্রেন। যেটিতে রয়েছে ৬টি বগি ও ২ হাজার ২০০ সিরিজের একটি ইঞ্জিন। কোরিয়া থেকে আনা এসব বগির একেকটিতে ৬০ জন করে যাত্রী বসতে পারবেন। বর্তমানে নগরের ষোলশহর থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইনও পুরোদমে সংস্কার করা হচ্ছে।
পাঠকের মতামত: