সালাহউদ্দিন আহমদ – ফাইল ছবি
মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী ::
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে অবস্থানরত বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ বেকসুর খালাস পাওয়া মামলার নিম্মআদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ শিলং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপীল করেছে। রাষ্ট্রপক্ষ আপীল করার বিষয়টি সালাহউদ্দিন আহমেদ জানতেন না। মাত্র ২ দিন আগে তিনি আপীল আদালতের নোটিশ পেয়েছেন। নোটিশ পেয়ে বুধবার ১ মে সালাহউদ্দিন আহমেদ আপীল আদালতে সর্বপ্রথম হাজির হন। সালাহউদ্দিন আহমেদ এর কৌশলী কিংবা তাঁকে রাষ্ট্রপক্ষের কৌশুলী আপীল মামলার বিষয়ে অবহিত করেননি। আপীলের বিষয়ে যদি যেকোন ভাবে অবহিত করা হতো, তাহলে আপীল মামলাটি শিলং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দায়েরের গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে উভয়পক্ষের শুনানী হতে পারতো। রাষ্ট্রপক্ষের এ মামলার আপীল করার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান নাথাকায় দায়েরের গ্রহনযোগ্যতা শুনানী হলে হয়ত আপীল মামলাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালত আপীল গ্রহন করতেন কিনা-তা যথেষ্ট সন্দেহ ছিল বলে সিবিএন-এর কাছে সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর রায় হওয়া মামলাটির প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করার সময় আইনত বিলম্ব হয়ে গেছে অর্থাৎ ইতিমধ্যে সময় তামাদী হয়ে গেছে। সালাহউদ্দিন আহমেদ সিবিএন-কে জানান-বহুমূখী ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে তাকে মামালায় রেখে প্রবাস জীবন কাঠাতে বাধ্য করা হচ্ছে। আপীল মামলাতেও তিনি লড়ে যাবেন ইনশাল্লাহ এবং সেখানেও বেকসুর খালাস পাবেন বলে সিবিএন-এর কাছে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
ভারতের বৈদেশিক নাগরিক আইনের ১৪ ধারায় সালাহউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে নর্থইষ্ট খাসিয়া হিল প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বিগত সালের ২৬ অক্টোবর এই মামলার রায় দেয়া হয়েছিল। প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মি. ডিজি খার সিং সালাহউদ্দিন আহমেদকে বেকসুর খালাস দিয়ে এ রায় প্রদান করেন। রায়ে ভারতের সীমান্তরক্ষী বিএসএফ’র মাধ্যমে সকল রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে বেকসুর খালাস পাওয়া সালাহউদ্দিন আহমেদকে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বিজিবি’র কাছে হস্তান্তরের আদেশ দেয়া হয়েছিল। সালাহউদ্দিন আহমেদকে বেকসুর খালাস প্রদান করে নিম্মআদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে সেখানকার রাষ্ট্রপক্ষ আপীল করায় সে মামলা নিষ্পত্তি নাহওয়া পর্যন্ত কক্সবাজারের রাজনীতির বরপুত্র সালহাউদ্দিন আহমেদের সহসায় স্বদেশে আর ফেরা হচ্ছেনা।
২০১৫ সালে বাংলাদেশের রাজনীতির উত্তাল সময়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র মুখপাত্র হিসাবে সফলভাবে দায়িত্বপালনকালে ২০১৫ সালের ১০ মার্চঢাকাস্থ উত্তরার একটি বাড়ী থেকে আইনশৃংখলা বাহিনীর পরিচয়ে অচেনা মুখোশধারী অপহরনকারীরা সালাহউদ্দিন আহমদকে চোখ বেঁধে গুপ্ত স্থানে তুলে নিয়ে যায়। তখন থেকে দীর্ঘ ৬২ দিন নিখোঁজ থাকার পর একই বছরের ১১ মে সালাহউদ্দিন আহমদকে মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে গলফ লিংক মাঠে পাওয়া যায়। সেখান থেকে তাঁকে প্রথমে শিলং মানসিক হাসপাতালে, পরে শিলং সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মেঘালয় রাজ্যের পুলিশ ২০১৫ সালের ৩ জুন ভারতে অবৈধ প্রবেশের পাসপোর্ট আইনে অভিযোগ এনে সালাহউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে এবং তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে প্রথমে হাসপাতালে চিকিৎসা ও পরে শিলং জেলে পাঠানো হয়। পরে শিলং আদালত থেকে শিলং শহর ছেড়ে না যাওয়ার শর্তে বিজ্ঞ আদালত সালাহউদ্দিন আহমেদকে জামিন প্রদান করেন। তখন থেকে নির্বাসিত অবস্থায় দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর ধরে খাসিয়া খ্রীষ্টান অধ্যুষিত এলাকা শিলং শহরের সানরাইজ গেষ্ট হাউজ নামক একটি দোতলা ভাড়া বাড়ীতে তিনি বসবাস করে মামলা পরিচালনা করে আসছিলেন। মামলা দায়েরের পর মেঘালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে সালাহউদ্দিন আহমেদকে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত করে ২০১৫ সালের ২২ জুলাই মামলার চার্জশীট দেয়া হয়। চার্জশীটে “সালাহউদ্দিন আহমদ বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বিভিন্ন মামলার গ্রেপ্তারী পরোয়ানা এড়াতে উদ্দ্যেশ্য প্রনোদিতভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়”।
সালাহউদ্দিন আহামদের কৌশুলী ভারতের বিখ্যাত আইনজীবী এস.পি মোহন্ত জানিয়েছিলেন, ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই মামলার বাদী-আসামীর জবানবন্দি, সাক্ষীর সাক্ষ্য, জেরা, শুনানী, যুক্তিতর্ক সহ সব ধরনের কার্যক্রম শেষ করে ২০১৮ সালের ১৩ আগষ্ট সর্বপ্রথম মামলাটি রায়ের জন্য ধার্যদিন রাখা হলেও মামলার রায় ঘোষনার তারিখ ৬ বার পিছিয়ে যায়। মামলায় ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া হয়েছিল। সালাহউদ্দিন আহমেদ স্বেচ্চায় ভারতে অনুপ্রবেশ করেননি, তাঁকে অপহরনকারীরা জোর করে চোখ বাঁধা অবস্থায় এখানে এনে রেখে দিয়েছে, সেটা আদালতে সালাহউদ্দিন আহমেদের আইনজীরীরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমান করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
মামলা শুনানীর সময় আদালতে তাঁরা এ সংক্রান্ত জাতিসংঘের কার্যবিবরনী, আমেরিকার মানবাধিকার রিপোর্ট, আ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট, যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের আর্লিডে মোশান, ভারতের উচ্চ আদালতের রেফারেন্স, বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের আদেশ, গুমকালীন সময়ে বাংলাদেশের সংবাদপত্র ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্টসহ আন্তজার্তিক বিভিন্ন আইন ও নজীরসহ প্রয়োজনীয় সকল আইনী গ্রাউন্ড আদালতে উপস্থাপন করে আদলতকে সন্তুষ্ট করেছিলেন। এমনকি মেঘালয়ের একজন উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা স্বয়ং তাঁর সাক্ষ্যদানকালে সালাহউদ্দিন আহমদ একজন সাবেক মন্ত্রী, তিনি কখোনই ভিন্ন দেশে অনুপ্রবেশ করার লোক নয় বলে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত ও আইনী যুক্তি উপস্থাপন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিলেন।
এদিকে, সালাহউদ্দিন আহমেদ সিবিএন-কে জানান, আপীল মামলাটি নিষ্পত্তি করে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে আসার জন্য তিনি ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন। সালাহউদ্দিন আহমেদ এদেশের মাটি ও মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার সুরক্ষা নিয়ে প্রতি মুহুর্ত সেখানে উদ্বিঘ্ন থাকেন। দেশবাসীর উদ্দ্যেশে দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন সালাহ উদ্দিন আহমেদ সিবিএন-কে বলেছেন-তাঁর বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক দায়েরকৃত আপীল মামলাটিও নিষ্পত্তি করে তিনি অবিলম্বে স্বদেশে ফিরবেন ইনশাল্লাহ্। আপীল মামলায় শিলং এর আপীল আদলতেও সঠিক, ন্যায়, নিরপেক্ষ ও সুষ্ট বিচারের ব্যাপারে সালাহউদ্দিন আহমদ সিবিএন-এর কাছে ইতিবাচক ধারণা পোষন করছেন। তাই শিলং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তিনি ন্যায় বিচার পাবেন এবং আপীল মামলা থেকে আবারো বেকসুর খালাস পেয়ে শীঘ্রই মুক্ত হয়ে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি দেশবাসীর কাছে তাঁর শারিরীক সুস্থতা, মামলা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া চেয়েছেন।
পাঠকের মতামত: