ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

সালাউদ্দিনের আহমদের খোঁজ রাখে না কেউ

salah-uddin-400x262অনলাইন ডেস্ক :::
২০১৪ এর জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারের চৌকস গোয়েন্দা সংস্থাকে ‘ফাঁকি দিয়ে’ বিএনপির পক্ষ থেকে একের পর এক ভিডিও বার্তা দিয়ে সরকারকে তটস্থ করেছিলেন তিনি। দলের পক্ষে এর আগে সংবাদ সম্মেলন করা, বিবৃতি দেওয়া ছিল তার কাজ। আন্দোলন যখন মুখ থুবড়ে পড়েছিল, তখন বিএনপি কি বলে তা জানার জন্য বেশকিছু দিন সালাউদ্দিন আহমদের ভিডিও বার্তাই ছিল একমাত্র ভরসা।
এরপর আকস্মিক উধাও তিনি। পরিবার অভিযোগ করেছিল তাকে আইনশৃংখলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। রহস্যের বেড়াজাল ছিঁড়ে ৬২ দিন পর সালাউদ্দিন আহমদ উদয় হয়েছিলেন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং নগরে। অসুস্থ সালাউদ্দিনকে সেখানে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারপর থেকে এখনও প্রায় দুবছর শিলংয়ে আছেন সালাউদ্দিন আহমেদ। সে থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে ‘শিলং’ সালাউদ্দিন নামেই অধিক পরিচিত বিএনপির নেতা।
এর মধ্যদিয়ে দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া সালাউদ্দিন আহমদকে দলের সর্বোচ্চ নীতি র্নিধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে অলংকৃত করেছেন। যদিও বিএনপি নেতাকর্মীদের মাছে মুখরোচক আলোচনার অংশ হয়ে আছে যে, পার্শ্ববর্তী শক্তিশালী দেশের তদবির ব্যবহার করে স্থায়ী কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছেন সালাউদ্দিন আহমেদ।
স্থায়ী কমিটির সদস্য হলেও ভারতে থাকার কারণে দলের কোনো কর্মকা-ে অংশ নিতে পারেন না সালাউদ্দিন আহমদ। দলের স্থায়ী কমিটির কোনো সদস্যের সঙ্গে তার যোগাযোগও নেই। আবার স্থায়ী কমিটির সদস্যর্ওা সালাউদ্দিন আহমদের এখন কোনো খোঁজ নেন না।
বিএনপির একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, সালাউদ্দিন আহমদ স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়ার পর টেলিফোনে বা অন্য কোনোভাবেই তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। এমনকি ভয়ঙ্কর আইনি জটিলতায় থাকলেও বিএনপির কোনো আইনি সহায়তা সালাউদ্দিন আহমদ পাচ্ছেন না। বিএনপির দলীয় কোনো প্রতিনিধিও সালাউদ্দিনকে দেখতে যাননি।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, না আমি কিছু জানি না তার সম্পর্কে। কোনো যোগাযোগ নাই। তার কোনো আত্মীয় স্বজনের সঙ্গেও আমার কোনো যোগাযোগ নাই। আমি কোনো খোঁজও রাখি না।
অন্যদিকে, ২০১৪ এর নির্বাচন এবং ২০১৫ এর সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় সারাউদ্দিন আহমদকে যারা সহযোগিতা করেছিলেন তারাও এখন তার কাছ থেকে সরে গেছেন। সালাউদ্দিন আহমদের ঘনিষ্ট সে সময়ের রাজনৈতিক সহযোগীদের অভিযোগ, সালাউদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার আগ পর্যন্ত যারা তাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগলে রেখেছেন এবং দলের সকল দাপ্তরিক কাজ গুছিয়ে দিয়েছিলেন, সালাউদ্দিন আহমদ কেবল মূখপাত্রের ভূমিকা পালন করেছেন সে সব ত্যাগী নেতাদের স্থায়ি কমিটির সদস্য হওয়ার পর সালাউদ্দিন আহমদ আর কোনো খোঁজ নেন না। স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়ার পর এড়িয়ে চলছেন। এখন আবার অতীত দিনের ত্যাগী নেতারা যারা তার ভীত ছিলেন তাদের সহযোগিতা চেয়ে বেড়াচ্ছেন সালাউদ্দিন।
সালাউদ্দিন আহমদের এক সময়ের ঘনিষ্ট একাধিক বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, শুধু যে সালাউদ্দিন আহমদকে বিএনপি ভুলে গেছে তা নয়। সালাউদ্দিন আহমদও তার জন্য ত্যাগ স্বীকার করা নেতাদের ভুলে গেছেন। অনেক ত্যাগী নেতাকে বিএনপির জাতীয় কমিটিতে বঞ্চিত করা হলেও সালাউদ্দিন আহমদ নিজের পদ পাওয়ার সন্তুষ্টিতে অন্যদের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
এ অবস্থায় আগামী দিনে বিএনপির আন্দোলন বা সংকট সময়ে ত্যাগী পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসা নিয়ে শঙ্কিত সিনিয়র নেতাদের অনেকেই।
২০১৪-১৫ আন্দোলনের সময় বিএনপির মুখপাত্র ছিলেন রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ, বরকতউল্লাহ ভুলু এবং সালাউদ্দিন আহমেদ। কন্তু এই তিন নেতাকে মুখপাত্রের কাজ চালিয়ে নিতে বা গুছিয়ে দিতে আড়ালের যে নেতারা মাঠে থেকে কাজ করেছিলেন দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর সে সব নেতাদের দল থেকে কোনো মূল্যায়ন না করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সে সব নেতাদেরই এখন আবার সালাউদ্দিন আহমদ অনুরোধ করছেন তাকে আর একবার সহযোগিতা করার জন্য।
সালাউদ্দিন আহমদের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, ভারতে এখন সালাউদ্দিন আহমেদ বহাল তবিয়তেই জীবনযাপন করছেন। সরকারি একটি বাসভবন ভাড়া নিয়ে আছেন। সেখানে আছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সালাউদ্দিন আহমদ এবং ভারত সরকারের অনুমতি ছাড়া কারও পক্ষে সেখানে প্রবেশ সম্ভব না। তার অপারেশন, মেডিসিন- সবকিছুই যখন যা দরকার তার যোগান হচ্ছে নির্বিঘ্নে।
এসব বিষয়ে শনিবার টেলিফোনে সালাউদ্দিন আহমদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আছি, রোগ-শোক নিয়ে। এভাবেই চলতে হবে।’
মামলা জটিলতা কোন পর্যায়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলছে, আরও হয়ত তিন-চার মাস লাগবে সব জটিলতা শেষ হতে।
তিন চার মাস পর কি তাহলে দেশে ফিরছেন কিনা জানতে চাইলে সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, সেটা এখন বলব না। আদালতের বিষয়। দেখি আদালত শেষ পর্যন্ত কী করে?
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বা নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কি না জানতে চাইলে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘আমি আদালত আর শারীরিক অবস্থা ছাড়া এখন আর কিছু বলতে চাই না।’ পরিবর্তন

পাঠকের মতামত: