নিউজ ডেস্ক ::
বাংলাদেশের সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে আমেরিকার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’। সেখানে বিগত সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যক্রমের প্রশংসা করা হয়েছে। পাশাপাশি গেলো নির্বাচন নিয়েও করা হয়েছে সমালোচনা।
সম্পাদকীয়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিগত ১০ বছরের সাফল্যের প্রশংসা করা হয়। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১৫০ গুন বৃদ্ধি এবং চরম দারিদ্রতার হার ১৯ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয় উল্লেখ তুলে আনা হয়েছে। বলা হয়, নির্বাচনে শেখ হাসিনার দল জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮ টিতে জয় পায়, যা শতকরা হিসাবে প্রায় ৯৬ ভাগ। এ ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর সকল অর্জনকে ম্লান করবে বলে মন্তব্য করা হয়।
এতে বলা হয়, নির্বাচনের আগে থেকেই সপ্তাহ এবং মাস ধরে স্থানীয় ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিরোধী দলকে হুমকি প্রদান এবং তাদের প্রার্থীদের গ্রেপ্তারের সমালোচনা করে আসছিলো। নির্বাচনী প্রচারণায় কমপক্ষে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ অবস্থাকে ‘সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকের জন্যে ভীতিকর আবহ’ বলে উল্লেখ করেছে।
গত ডিসেম্বরে দ্য টাইমসকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারের এক উদ্ধৃতি তুলে আনা হয়। যেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যদি খাদ্য, চাকরি, স্বাস্থসেবার ব্যবস্থা করতে পারি তবে সেটাই মানবাধিকার। বিরোধী দল, সুশীল সমাজ, এনজিও কি বললো তা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমি আমার দেশকে চিনি, আমি জানি কীভাবে দেশের উন্নয়ন করতে হয়।’
সম্পাদকীয়টিতে আরো বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক জরিপে এমনটাই বোঝা গেছে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হলে শেখ হাসিনা সহজ জয় পাবেন। সেখানে কেন এই অযৌক্তিক নির্বাচনী ফলাফল? শেখ হাসিনার সকল অর্জন ম্লান হয়ে যাবে এমন কর্তৃত্ববাদী পদ্ধতির আড়ালে। এখন সমালোচকরা নির্বাসিত হোক বা আত্মগোপনে যাক না কেন, তারা আরো কট্টর হবে এবং বিদেশি সমর্থকরা আরো সতর্ক হয়ে উঠবে।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রসঙ্গে টেনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বৃহত্তম একক বাজারের দেশ যুক্তরাষ্ট্র। তারা নির্বাচনী প্রচারণাকালে ‘হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার বিশ্বাসযোগ্য খবরে’ উদ্বেগ জানিয়েছিল। আর সমাধানের জন্য সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। একইভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নও নির্বাচনী সহিংসতা ও ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধকতাসমূহ’ যা কিনা নির্বাচনী প্রচারণা ও নির্বাচনকে ‘ম্লান’ করেছে, তা তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানিয়েছে।
পরিশেষে বলা হয়, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত যে গতিপথ, তাতে করে এমন সমালোচনা তিনি সম্ভবত আমলে নেবেন না। কিন্তু যারা বাংলাদেশের সাথে ব্যবসা করছে এবং দারিদ্র হ্রাসের কারণে আনন্দিত, তাকে ও তার মিত্রদের তাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া উচিত যে মানবাধিকার উন্নয়ন ও অগ্রগতির এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস
পাঠকের মতামত: