এম.আর মাহমুদ ::
গত সোমবার এক সময়ের শীর্ষ বাংলা দৈনিক ইত্তেফাকে একটি সংবাদ শিরোনাম দেখে পুলকিত হয়েছি। সংবাদ শিরোনামটি হচ্ছে। মোবাইল কিনতে ৭৫ হাজার টাকা করে পাবেন মন্ত্রী ও সচিবরা। মন্ত্রী পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন, মন্ত্রী পরিষদের সচিব মহোদয়। দেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুঁড়ি নয়। অনেকদিন এ অপবাদ বহন করতে হয়েছে দেশবাসীকে। সে অপবাদ থেকে আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশে অন্তর্ভূক্ত হয়েছি। ১৯৭৪ সালের দূর্ভিক্ষার সময় অসংখ্য বনী আদম না খেয়ে প্রাণ হারিয়েছে। বাসন্তীর মত নারী কাপড়ের অভাবে জাল পরিধান করে লজ্জাস্থান নিবারণ করেছে। সেসব পুরানো কথা নতুন প্রজন্মের কাছে কিচ্ছা হিসেবে মনে হবে। এখন আর দেশের মানুষ অর্ধজলসানো আটা রুটি খায় না। অন্তত ২ বেলা খেয়ে পরে সাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করছে। ইতিমধ্যে আমাদের সরকার সমুদ্র থেকে মহাকাশ জয় করেছে। সব ক্ষেত্রে দেশের জয় জয়কার অবস্থা। আধুনিক প্রযুক্তির বদৌলতে কৃষক থেকে অশিক্ষিত ও স্বশিক্ষিত কৃষক থেকে কুলি মজুর শ্রেণির লোকজনের হাতেও এখন একটি মোবাইল শোভা পায়। তারা নিজের প্রয়োজনে মোবাইল ক্রয় করে ব্যবহার করছে। অনেকে এনড্রয়েড মোবাইলে ফেসবুক ব্যবহার করার জন্য এমবি রিচার্জ করতে গিয়ে ঠিকমত এমবি উচ্চারণ করতে না পেরে এমপি রিচার্জের কথা বলে। তারপরও সব শ্রেণির নারী পুরুষ মোবাইল ব্যবহার করে যাচ্ছে। এটি কি দেশের জন্য আকাশচুম্বী পরিবর্তন নয়। তবে মাননীয় মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়দের মোবাইল ক্রয়ের জন্য ৭৫ হাজার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে দেয়াটা কোন ব্যাপারই না। যে দেশে প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, বিধবারাও ভাতা পায়। সে দেশে মন্ত্রী ও সচিবরা মোবাইল ক্রয়ের জন্য ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়াটা সাধারণ ব্যাপার। এসব দায়িত্বশীল কর্মকর্তার মোবাইল ব্যবহারে যে অর্থ ব্যয় হবে তাও রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। কি চমৎকার! এ যেন হিরক রাজার দেশ। “আমি যেদিকেতে চাই, শুধু অবাক বনে যাই। কোথাও কোল কিনারা খুঁজে নাহি পাই।” বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মহোদয়েরা বেশিরভাগই ধণাঢ্য ও ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান। এলাকায় ওইসব মন্ত্রী মহোদয়ের যথেষ্ট খ্যাতি আছে। আর যারা সচিব হিসেবে নিয়োজিত আছেন, তারা সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ও সঙ্গতিসম্পন্ন পরিবারের সন্তান। নিশ্চয় আমাদের মত চৌদ্দ নম্বর পরিবারের সদস্য নয়! কিভাবে মন্ত্রী ও সচিবরা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ঘামে অর্জিত অর্থ থেকে মোবাইল ক্রয়ের টাকা নেবে মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়েরা। তারা কি আগে মোবাইল ব্যবহার করতেন না। সে খাতে ১৫ হাজার করে সরকারি কোষাগার থেকে মোবাইল বিল নিত না। কি বিচিত্র দেশ!
পাঠকের মতামত: