সোয়েব সাঈদ, রামু :: একুশে পদকে ভূষিত, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় গুরু, উপ-সংঘরাজ ও রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের অধ্যক্ষ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র ৩ দিন ব্যাপী জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান শুরু হয়ে আজ বৃহষ্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারী) দুপুর ২ টায় প্রয়াত পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র শবদেহ সহকারে শোভাযাত্রার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সুচনা করা হয়। রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহার থেকে শুরু হওয়া বিশাল শোভাযাত্রা বিহার সংলগ্ন জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে শেষ হয়।
শোভাযাত্রা শেষে অধ্যক্ষ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র ৩ দিন ব্যাপী জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন করেন, অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। তিনি বলেন, অধ্যক্ষ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের সম্প্রীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার অগ্রনায়ক ছিলেন। তিনি মানবতার কাজ করেছেন। তাঁর প্রয়াণে দেশবাসী শোকাহত। তাঁর শিক্ষা ও আদর্শ লালন করে আগামীতে তাঁর মতো ধর্মীয় গুরু সৃষ্টি হলে দেশ উপকৃত হবে।
উপ-সংঘরাজ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রিয়রত্ন মহাথেরর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা, ওসি মো. আবুল খায়ের, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মুসরাত জাহান মুন্নী, রামু সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল হক, রামু উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্ত ভূষন বড়ুয়া, রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নোবেল বড়ুয়া, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদ জেয়ারম্যান ফরিদুল আলম, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টের ট্রাষ্টি শিল্পপতি দয়াল বড়ুয়া, এড. দীপঙ্কর বড়ুয়া পিন্টু, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টের ট্রাষ্টি বাবুল শর্মা, রামু কেন্দ্রীয় কালী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত সুবীর বাক্ষ্মন চৌধুরী বাদল, রামু উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক তপন মল্লিক।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপ-সংঘরাজ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উদযাপন পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী তরুন বড়ুয়া। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রশাসনের কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী সভা শেষে ৭টি দল আলং নৃত্য পরিবেশন করে। সন্ধ্যা ৭ টায় উপ-সংঘরাজ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের মহোদয়ের নিবার্ণ সুখ ও বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শুরুতে পবিত্র ত্রিপিটক থেকে মঙ্গলাচরণ করেন, বোধিপ্রিয় ভিক্ষু। অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক উপ-পরিষদের শিল্পীরা উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন, উদযাপন পরিষদের অধ্যাপক পরীক্ষিৎ বড়ুয়া টুটুন ও অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়া।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) পৃথক অনিত্য ও স্মৃতিচারণ সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, ১০ পদাতিক ডিভিশন, রামু সেনানিবাস এর জিওসি মেজর জেনারেল মো. মাঈন উল্লাহ চৌধুরী ওএসপি, এডব্লিউসি, পিএসসি। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথের, উপ-সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাথের আর্শীবাদক ও সভাপতিত্ব করবেন।
এদিকে উপ-সংঘরাজ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানকে ঘিরে রামু বাইপাস সংলগ্ন মেরংলোয়া বিলের ৪০ একর জায়গা জুড়ে বসেছে সম্প্রীতির মেলা। অনুষ্ঠানস্থলে বাঁশ, কাঠ, ও রঙ্গিন কাগজের কারুকার্যে তৈরী হয়েছে বিশাল আলং। এছাড়া প্রয়াত ভন্তের শবদেহ রাখার দোলনা আলং, গ্রামভিত্তিক দলীয় নৃত্যের ১০টি নৃত্যালং, অণিত্য ও ধর্মসভার জন্য তিনশ ফুট দৈর্ঘ্য-আড়াইশ ফুট প্রস্থ বিশাল প্যান্ডেল, বৌদ্ধ ভিক্ষু ও আমন্ত্রিত অতিথিদের পৃথক মঞ্চ, অতিথি ভোজনের খাবার প্যান্ডেল, পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র জীবন ভিত্তিক আলোক চিত্র প্রদর্শনের প্যান্ডেল, চিকিৎসা ক্যাম্প, আইনশৃংখলা রক্ষায় পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
উপ-সংঘরাজ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উদযাপন পরিষদের ও প্রধান সমন্বয়কারী তরুণ বড়ুয়া জানান, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বৌদ্ধ ভিক্ষু ছাড়াও আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ইটালী, মিয়ানমার, ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ প্রতীম রাষ্ট্র থেকে হাজারো বৌদ্ধ ভিক্ষু রামু-কক্সবাজারের বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে অবস্থান করছেন। প্রয়াত ধর্মীয়গুরু পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথেরকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষু ও সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহন অনুষ্ঠানকে মহা-সম্মেলনে পরিনত হবে।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উপলক্ষে রামুতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে সম্প্রীতির মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলায় প্রতিদিন সার্কাস, মুত্যুকুপ, ওয়াটাররেস, নাগরদোলাসহ শিশুদের বিভিন্ন বিনোদন এবং দেশী-বিদেশী পণ্যের দু’শতাধিক স্টলে শিশু, কিশোর, নারী, পুরুষ ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে । এছাড়া সাংস্কৃতিক মঞ্চে প্রতিদিন মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অব্যাহত রয়েছে। প্রয়াত বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরুর শবদেহ চন্দন কাঠের আগুনে পুড়িয়ে দাহক্রিয়া সম্পন্ন হবে আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি।
পাঠকের মতামত: