ঢাকা,শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

রমজানের আগেই চড়া নিত্যপণ্যের বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::
পবিত্র মাহে রমজান সমাগম। ১৪ এপ্রিল প্রথম রোজা। রমজানের শুরুতেই করোনা মহামারীর আঘাতের সাথে যোগ হচ্ছে নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের থাবা। মুসলিম বিশ্বের সকল দেশে রমজান মাসে বিভিন্ন প্যাকেজ ঘোষণা দিয়ে ভোগ্যপণ্যের দাম কমলেও উল্টো চিত্র বাংলাদেশে। সুযোগ নিয়ে রমজান মাসে আরো দাম বৃদ্ধি করে ব্যবসায়িরা। এবারে ও তার ব্যতিক্রম নয়। রমজানকে সামনে রেখে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে।

ব্যতিক্রম কয়েকটি পণ্যে। বাজার পরিস্থিতি জানতে শহরের বড় বাজার, বাংলাবাজার, খরুলিয়া বাজার, লিংকরোড বাজার, সদর উপজেলা বাজার থেকে একটি চিত্র উঠে এসেছে।
বয়লার মুরগির দাম পড়তির দিকে। কমতে শুরু করেছে মুরগির দাম। চাল-ভোজ্যতেল-মসলার দাম কমছে না। প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে হিমশিম খাচ্ছেন দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষ।
ব্রয়লার মুরগি ১৪০-১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫৫-১৬০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে ৪০ টাকা কমে সোনালী মুরগি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা। দেশি মুরগি কেজি প্রতি ৪২০-৪৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও লেয়ার মুরগি গত সপ্তাহ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

চালের বাজারে মিনিকেট, নাজির শাইল, বি-আর ২৮, বি-আর ২৯, পাইজাম ও গুটিস্বর্ণা গত সপ্তাহের দরেই রয়েছে। চালের বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল বলা চলে।
মিনিকেট কেজিপ্রতি ৬১-৬৩ টাকা, নজিরশাইল ৬৮-৭২ টাকা, বি আর-২৮ ৫৬-৫৮ টাকা ও বি আর-২৯ বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৫৬ টাকায়। পাইজাম ৪৮ টাকা।
শহরের কানাইয়া বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী মেহেদী হোসেন বলেন, খামারে সোনালী মুরগির আমদানি অনেকটা বেড়েছে তাই দাম কিছুটা কম। অন্যান্য মুরগির আমদানি বাড়লে দামও কমবে। বয়লার মুরগির দাম আরো কমতে পারে। এখন ১৪৫ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে। লকডাউনের কারণে হোটেল রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় দাম আরো কমবে বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ি।
কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, খোলা সয়াবিন তেল ১৩০ ও কোম্পানিভেদে বোতলজাত সয়াবিন ১৪০-১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা আটা ৩০ ও প্যাকেট ৩৫ টাকা, ময়দা ৪০-৪৫, মসুর ডাল (মোটা) ৬৮-৭০, মসুর ডাল (চিকন) ১০০-১১০ টাকা। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে মসলার দাম। জিরা ২৮৫-২৯০ টাকা ও দারচিনি ২৮০-২৮৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান স্টেশন বাজারের ব্যবসায়ী প্রান্ত ইসলাম।
১ সপ্তাহ সমুদ্রে মাছধরার নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না মাছ। তবে কয়েকদিনের মধ্যে স্বাভাবিক হতে পারে মাছের বাজার। মাছ কম থাকায় বাজারে ক্রেতা সংখ্যা কম ও বেচাকেনা ভালো নেই বলে অভিযোগ একাধিক মাছ ব্যবসায়ীর।
তবে রুই কেজিপ্রতি ২২০-২৮০, পাবদা ২৪০-২৫০, শিং ২০০-২৮০, পাঙাস ১২০-১৩০, ইলিশ টাকা, ৬০০-৯৫০, চিংড়ি (আকারভেদে) ৫৬০-৬৫০, দেশি মাগুর ৪৫০-৫০০, তেলাপিয়া ১৪০-১৫০ টাকা, সিলভার কার্প ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বাজারে শহুরে আলু ১৮, দেশি আলু ৩৫ টাকা, পেঁয়াজ ৩২-৩৫, আদা ৬০-৮০, রসুন ১২০, কাঁচা মরিচ ৩০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, শিম ৬০ টাকা , লাউ ২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৫, করলা ৫০, পটল ৬০, ঢেঁড়স ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
সদর উপজেলা বাজারের সবজি বিক্রেতা জাকের বলেন, রোজায় চাহিদা অনুযায়ী কিছু সবজির দাম বেড়েছে, কিন্তু খুব বেশি নয়। গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় বেগুন, করলাসহ কিছু সবজির দাম বেড়েছে।
এদিকে খেজুরের সবচেয়ে বেশি চাহিদা বাড়ে রোজায়। আর চাহিদার চাপ বুঝে প্রায় সব ধরনের খেজুরের দাম কেজিতে ১৫-২০ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে সাধারণ মানের খেজুর বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। আর এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়।
এদিকে জেলা ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ ইমরান হোসেন জানান, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুসারে প্রতিটি দপ্তরই কাজ করে যাচ্ছে ভোক্তা অধিকার কক্সবাজারও তার ব্যতিক্রম নয়।
বাজারের উপর সামগ্রিক দৃষ্টি রাখা হয়েছে আপাতদৃষ্টিতে বাজার স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। তবে হ্যা বর্তমান পরিস্থিতি ঋতু পরিবর্তন সহ নানাবিধ কারণে কিছু দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতি থাকলেও তা কোন কারসাজি নয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তথাপিও জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার কক্সবাজার প্রতিনিয়ন বিভিন্ন ব্যবসায়ি সমিতির সাথে আলোচনার মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে।
আপনারা জেনে থাকবেন মাংস ব্যবসায়ী সমিতি, ভোক্তা অধিকার, পৌরসভা, জেলা বাজার কর্মকর্তার উপস্থিতিতে আলোচনায় আসন্ন রজমানেও মাংস পূর্বনির্ধারিত দামেই বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য মাংসের বর্তমান বাজার দর গরু/মহিষ হাড় সহ -৫৫০ টাকা- ছাগি-পাঠাঃ- ৬৫০ টাকা খাসির মাংস- ৭০০ টাকা।
তাছাড়া গ্যাস ব্যবসায়ি সমিতির সাথে আলোচনায় প্রাইভেট কোম্পানির গ্যাস সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা, সরকারী গ্যাস ৬০০ টাকা দামে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়।
তিনি বলেন, সেই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক জাহিদ ইকবাল। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা বাজার কর্মকর্তা ও ক্যাব কক্সবাজার এর প্রতিনিধি।
এ বিষয়ে উল্লেখ্য সরকার কর্তৃক সারা দেশে গ্যাস এর খুচরা মূল্য নির্ধারণের প্রচেষ্টা চলমান যদি তা কার্যকর হয় তাহলে সারাদেশে সরকার নির্ধারিত মূল্যেই গ্যাস বিক্রি হবে।
এছাড়া শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে টিসিবির পণ্য বিক্রির প্রক্রিয়া চলমান আশা করা যায় খুব শিঘ্রিই তা দৃশ্যমান হবে বলে ও তিনি জানান। রমজানে নিয়মিত বাজার তদারকিতে তিনিসহ জেলা প্রশাসনের একাধিক টিম মাঠে থাকবেন বলেও জানান মোঃ ইমরান হোসেন।

পাঠকের মতামত: