যৌতুক প্রথা একটি জঘন্য সামাজিক ব্যাধি। প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতা খুললেই যৌতুকের কারণে অনেক গৃহবধু আত্মহত্যা করেছে এই সংবাদ চোখে পড়ে। এই প্রথা প্রাচীনকাল থেকে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। যৌতুক হলো বিবাহের সময় বরকে উপহারাদি প্রদান করা। আগেকার দিনে হিন্দু সমাজে এই প্রথা বেশী প্রচলিত ছিল। প্রাচীনকালে হিন্দু সমাজে ৯Ñ১০ বছরের মধ্যে কন্যা বিয়ে না দিলে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে সমাজচ্যুত করা হতো। তাই তারা অর্থের বিনিময়ে হলেও কন্যাপাত্র¯’ করতো। একবিংশ শতাব্দীতেও রয়ে গেছে বিবাহে যৌতুক বা উপঢোকন দেয়ার মতো জঘন্য প্রথা। বাংলাদেশে নিম্নবিত্ত লোকদের মধ্যে যৌতুক প্রথা বেশি প্রচলিত। বেকারত্ব এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাবের কারণে মানুষ এই প্রথার দিকে বেশি বাধিত হয়। যে সমস্ত নারীদের শিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নেই তারা বেশী যৌতুকের শিকার হয়। অধিকাংশ পিতা তার ছেলেকে বিয়ে করানোর ব্যাপারে যৌতুক ছাড়া বিয়ের কথা চিন্তাই করতে পারে না। দেশে এ যাবৎ যেসব গৃহবধু ও কুমারী মেয়ে আত্মহত্যা করেছে তার শতকরা ৯০ ভাগের পেছনে কারণ হলো যৌতুক। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করলে এবং আমাদের সমাজের মেয়েরা শিক্ষিত হয়ে আত্মনির্ভরশীল হলে এ জঘন্য প্রথা কমে যাবে বলে আমি মনে করি। কোনো ধর্মই অসামাজিক নীতিকে স্বীকৃতি দেয় না। ইসলাম ধর্মও নারীকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যৌতুক প্রথাকে স্বীকৃতি দেয়নি। তাই সমাজে যৌতুকের বির“দ্ধে ধর্মীয় সচেতনা বৃদ্ধি করতে হবে। পত্র-পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে যৌতুকের কুফল সম্পর্কে প্রচারণা চালালে আস্তে আস্তে এ প্রথার অবসান ঘটবে। বাংলাদেশের নারী সমাজ এখন শিক্ষার দিক দিয়ে এগিয়ে যা”েছ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করেছেন। দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে নারীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এই মেয়ে/ নারীরা তো কারো মা, কারো বোন, কারো ফুফু বা কারো খালা। তাই, আসুন আমরা সবাই যৌতুকের বির“দ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি, নারীদের মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করি।
লেখক
হুরে জন্নাত
প্রধান শিক্ষক
পালাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
চকরিয়া পৌরসভা, চকরিয়া, কক্সবাজার।
পাঠকের মতামত: