ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

ভূমধ্যসাগরের নৌকাডুবিতে নিহতদের মধ্যে ৩৭ জন বাংলাদেশি

ডেস্ক নিউজ ::  ভূমধ্যসাগরে ভয়াবহ নৌকাডুবিতে যারা প্রাণ হারিয়েছে, তাদের মধ্যে ৩৭ জন বাংলাদেশি রয়েছে বলে জানা গেছে। তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্টকে উদ্ধৃত করে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ তথ্য জানিয়েছে। এরআগে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর পক্ষ থেকে এ দুর্ঘটনায় ৬৫ জনের প্রাণহানির খবর নিশ্চিত করা হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রাণ হারানো শরণার্থীদের একটা বড় অংশ বাংলাদেশি। জীবিত উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে ১৪ জন বাংলাদেশি বলে জানিয়েছে তারা।

তিউনিসিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা টিএপি’র খবর অনুযায়ী ডুবে যাওয়া নৌকায় ৭০ জনেরও বেশি অভিবাসন প্রত্যাশী ছিল। সি ফ্যাক্স উপকূলের ৪০ নটিক্যাল মাইল দূরে এটি ডুবে যায়। দেশটির রাজধানী তিউনিস থেকে ওই স্থানের দূরত্ব প্রায় ২৭০ কিলোমিটার। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মর্মান্তিক ওই নৌকাডুবির পর অভিবাসীদের উদ্ধারে একটি মাছ ধরার নৌযান নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তিউনিস নৌবাহিনী। তারা জীবিতদের পাশাপাশি তিনজনের মরদেহ উদ্ধারে সমর্থ হয়।

নৌকাডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্টকে বলেছেন, বৃহস্পতিবার রাতে লিবিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলের জুয়ারা শহর থেকে প্রায় ৭৫ আরোহী নিয়ে একটি বড় নৌকা রওনা হয়। উপকূলে ওই নৌকা থেকে আরোহীদের আরেকটি ছোট নৌকায় তোলার সময় তা ডুবে যায়। তিউনিসিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় জার্জিসে কর্মরত রেড ক্রিসেন্টের কর্মকর্তা মোংগি স্লিম বার্তা সংস্থা এফপিকে বলেন, শরণার্থীদের ছোট একটি নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করার দশ মিনিটের মাথায় তা ডুবে যায়। তিউনিসিয়ার জেলেরা ১৬ জনকে উদ্ধার করে জার্জিসের উপকূলে নিয়ে আসে।
নিহত বাংলাদেশিদের সংখ্যা ঠিক কতো, তা এখনও জানাতে পারেনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় । তবে একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, জীবিত উদ্ধার হওয়া ১৬ জনের মধ্যে ১৪ জন বাংলাদেশি। এদের মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে বলে জানিয়েছে তিউনিস রেড ক্রিসেন্ট। সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা মোংগি স্লিম বলেন, তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড শরণার্থীদের নৌকাডুবির বিষয়ে জেলেদের সতর্ক করে দিয়েছিল। বেঁচে যাওয়া শরণার্থীরা বলেছেন, জেলেরা তাদের শনাক্ত করার আগে প্রায় আট ঘণ্টা ঠাণ্ডা পানিতে আটকা পড়ে রয়েছিলেন তারা।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম নৌকাডুবির এই ঘটনাকে ভূমধ্য সাগরের ‘আরেকটি বিয়োগান্তক ঘটনা’ আখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, জাহাজটি পার্শ্ববর্তী দেশ লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে ছেড়ে এসেছিল। সম্প্রতি সে দেশে সংঘাত জোরালো হয়েছে। সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা মার্কিন বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, ডুবে যাওয়া শরণার্থীদের মধ্যে লিবীয় ছাড়াও বাংলাদেশ এবং মরক্কোর নাগরিকেরা ছিল।
লিবিয়াতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সিকান্দার আলী বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, তিনি এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে তিউনিসিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে ত্রিপোলিতে যুদ্ধাবস্থা জারি থাকায় তার যাত্রা বিলম্বিত হচ্ছে।
ভূমধ্যসাগরের ভয়ঙ্কর এ পথটিতে প্রায় সময়ই শরণার্থীসহ নৌকাডুবির খবর পাওয়া যায়। এদিক দিয়ে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে লিবিয়া থেকে শরণার্থীরা নৌকাযোগে ইউরোপের দেশগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করে থাকে। ইউএনএইচসিআরের হিসাবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত লিবিয়া থেকে ইউরোপে যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে ১৬৪ জন নিহত হয়েছে। কেবল গত জানুয়ারি মাসের এক নৌকাডুবির ঘটনাতেই ১১৭ জন নিঁখোজ হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

পাঠকের মতামত: