ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

ভাঙা বেড়িবাঁধে আতঙ্ক চকরিয়া-পেকুয়ায় অরক্ষিত উপকূল

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ::  কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রতীরের বেড়িবাঁধ মেরামত না হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন মানুষ। দুই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এসব বেড়িবাঁধের বেশকিছু অংশ বিলীন থাকায় লোকালয়ে প্রবেশ করছে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি। এতে হুমকির মুখে নিপতিত হয়েছে চাষাবাদের জমি। ব্যাহত হচ্ছে লবণ ও চিংড়ি উৎপাদন।

সরেজমিন দেখা যায়, চকরিয়ার চিংড়িজোনের বেশকিছু পয়েন্টে বিলীন হয়ে পড়েছে বেড়িবাঁধ। একইভাবে বদরখালী, কোনাখালী, বিএমচর, পশ্চিম বড় ভেওলা, চিরিঙ্গা ইউনিয়নের কয়েক কিলোমিটার এবং পেকুয়ার মগনামা লঞ্চঘাট থেকে শরৎঘোনা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ গেল বন্যায় সমুদ্রে বিলীন হয়ে যায়। এতে বেড়িবাঁধ উপচে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। জোয়ারের ধাক্কায় প্রতিনিয়ত ভাঙছে বেড়িবাঁধ। ভাঙনের কবলে এসব বেড়িবাঁধ কোথাও কোথাও মাত্র এক থেকে দেড় ফুট অবশিষ্ট রয়েছে। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এলাকার মানুষ।
পেকুয়ার মগনামা ইউনিয়নের শরৎঘোনার বাসিন্দা নাজেম উদ্দিন বলেন, মগনামা লঞ্চঘাট থেকে শরৎঘোনা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধটির বিভিন্ন অংশ গেল বন্যায় সমুদ্রে বিলীন হয়ে যায়। এর পর পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার নিয়োগ করে ভাঙা অংশ মেরামতের জন্য। কিন্তু কাজের ধীরগতির কারণে যথাসময়ে বেড়িবাঁধ সংস্কার হচ্ছে না। ইতোমধ্যে কার্যাদেশের মেয়াদও শেষ হয়েছে।

পেকুয়া উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উম্মে কুলসুম মিনু জানান, সমুদ্রতীরের ইউনিয়ন মগনামার বিশাল অংশ এখন অরক্ষিত। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে উপকূলের বেড়িবাঁধগুলো সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

মগনামা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু ও আইলার আঘাত এখনো সামলে উঠতে পারেনি মগনামার মানুষ। বেড়িবাঁধ ভেঙে ২০১৫-১৮ সাল পর্যন্ত মগনামা ইউনিয়ন অসংখ্যবার প্লাবিত হয়েছে। এখনো ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে গ্রামীণ অবকাঠামো। দুর্যোগের পর সরকার মগনামা ইউনিয়নে অন্তত ৮ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছে।

এখন ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি ঢুকলে উন্নয়ন কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি আরও বলেন, মগনামা ইউনিয়নে ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। বেড়িবাঁধের এই অরক্ষিত অংশ নিয়ে মগনামাবাসীর মাঝে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে এমপি, জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

চকরিয়ার কোনাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার বলেন, আমার ইউনিয়নের কয়েক কিলোমিটার অংশে বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে চিরিঙ্গা-বাঘগুজারা-বদরখালী সড়ক কাম বেড়িবাঁধটি মাতামুহুরী নদীতীরে হওয়ায় একেবারে বিলিন হয়ে পড়ছে। কিন্তু তা রক্ষায় যথাযথ উদ্যোগ নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের। এতে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।

পেকুয়া মগনামার ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কার প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডে বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান চকরিয়া নিউজকে জানান, মগনামা ইউনিয়নের যে অংশ বিলীন হয়েছে এর সংস্কার কাজ চলমান এবং অচিরেই পুরোপুরি সংস্কার শেষ হবে। এজন্য ঠিকাদারকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চকরিয়ার কোনখালীতে বেড়িবাঁধ তথা চিরিঙ্গা-বাঘগুজারা-বদরখালী সড়কটিও টেকসইভাবে নির্মাণ করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা হবে। এমনটিই জানালেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা। তিনি বলেন, অচিরেই চকরিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে কাজ শুরু হবে।

পাঠকের মতামত: