নিউজ ডেস্ক :::
১. মসজিদ আল-হারাম : ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান, যা কাবাকে ঘিরে অবস্থিত। সৌদি আরবের মক্কা শহরে এর অবস্থান।
ভেতরের ও বাইরের নামাজের স্থান মিলে মসজিদের বর্তমান কাঠামো প্রায় তিন লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ বর্গমিটার (৮৮.২ একর)। হজের সময় এখানে উপস্থিত হওয়া মানুষের জমায়েত পৃথিবীর বৃহত্তম মানব সমাবেশের অন্যতম।
২. মসজিদে নববী : মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মসজিদ, যা বর্তমান সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত। গুরুত্বের দিক থেকে মসজিদুল হারামের পর মসজিদে নববীর স্থান। মুহাম্মদ (সা.) হিজরত করে মদিনায় আসার পর এই মসজিদ নির্মিত হয়। তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে এই মসজিদের নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছিলেন। এটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ মসজিদ।
এখানে অবস্থিত সবুজ গম্বুজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আয়েশা (রা.)-এর বাড়ি ছিল। এখানে মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর পরবর্তী শাসক দুজন খলিফাকে দাফন করা হয়। ১২৭৯ খ্রিস্টাব্দে কবরের ওপর একটি কাঠের গম্বুজ নির্মিত হয়। এটি পরবর্তী সময় ১৫০০ শতাব্দীতে কয়েকবার এবং ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে একবার পুনর্নির্মিত ও সৌন্দর্যবর্ধিত করা হয়। ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে প্রথম সবুজ রং করা হয়, ফলে এর নাম সবুজ গম্বুজ হয়েছে।
৩. মসজিদুল আকসা : আল-আকসা মসজিদ বাইতুল মুকাদ্দাস নামেও পরিচিত। জেরুজালেমের পুরনো শহরে এটি অবস্থিত। এটির সঙ্গে একই প্রাঙ্গণে কুব্বাত আস সাখরা, কুব্বাত আস সিলসিলা ও কুব্বাত আন নবী নামক স্থাপনাগুলো অবস্থিত। স্থাপনাগুলোসহ এই পুরো স্থানটিকে হারাম আল শরিফ বলা হয়। এ ছাড়া স্থানটি ‘টেম্পল মাউন্ট’ বলে পরিচিত এবং ইহুদি ধর্মে পবিত্র বলে বিবেচিত হয়। ইসলামের বর্ণনা অনুযায়ী মুহাম্মদ (সা.) মেরাজের রাতে মসজিদুল হারাম থেকে আল-আকসা মসজিদে এসেছিলেন এবং এখান থেকে তিনি ঊর্ধ্বাকাশের দিকে যাত্রা করেন। এটি ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান।
বর্তমানে পুরনো শহর ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে মসজিদটি জর্ডানি বা ফিলিস্তিনি নেতৃত্বাধীন ইসলামী ওয়াকফর তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
৪. দ্বিতীয় হাসান মসজিদ : মরক্কোর মাটিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা দৃষ্টিনন্দন পানিতে ভাসমান এ মসজিদটির নাম গ্র্যান্ড মস্ক হাসান-২ বা দ্বিতীয় হাসান মসজিদ। একে ভাসমান মসজিদ বলার কারণ হচ্ছে, মসজিদটির তিন ভাগের এক ভাগ আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর অবস্থিত। দূরের কোনো জাহাজ থেকে দেখলে মনে হয়, ঢেউয়ের বুকে যেন মসজিদটি দুলছে আর মুসল্লিরা যেন নামাজ পড়ছেন পানির ওপর। মহাসাগরে ভাসমান এ মসজিদটি মরক্কোসহ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় মসজিদ। ঝড়-বৃষ্টির সময় ছাড়া প্রাকৃতিক আলো ও মুক্ত বাতাস প্রবেশ করায় মসজিদটির ছাদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যায় তিন মিনিট পরপর। ৩৩ ফুট উচ্চতার সামুদ্রিক ঢেউ সামলে নেওয়ার ব্যবস্থা আছে মসজিদটিতে। সমুদ্রের কোনো গর্জন শোনা যায় না মসজিদটির ভেতর থেকে। ২২ দশমিক ২৪ একর জায়গার ওপর অবস্থিত এ মসজিদের মূল ভবনের সঙ্গে আছে সভাকক্ষসহ লাইব্রেরি, কোরআন শিক্ষালয়, অজুখানা। আড়াই হাজার পিলারের ওপর স্থাপিত এ মসজিদের ভেতরের পুরোটায়ই টাইলস বসানো। মসজিদ এলাকার আশপাশ সাজানো হয়েছে ১২৪টি ঝরনা ও ৫০টি ক্রিস্টালের ঝাড়বাতি দিয়ে। শুধু তা-ই নয়, কোথাও কোথাও এসব মোড়ানো হয়েছে স্বর্ণের পাত দিয়ে। মসজিদটির মেঝে থেকে ছাদের উচ্চতা ৬৫ মিটার। মেহরাবের উচ্চতা দোতলা ভবনের সমান। আর মিনারের উচ্চতা ২১০ মিটার। ৬০ তলা ভবনের সমান এ মিনারের ওপর রয়েছে লেজার রশ্মি, যা নাবিকদের দেখিয়ে দেয় পবিত্র কাবা শরিফের পথ। ৩০ কিলোমিটার দূর থেকেও স্পষ্ট দেখা যায় এই লেজার রশ্মি। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মিনার এটি।
মরক্কোর বাদশাহ দ্বিতীয় হাসান মসজিদটি তৈরি করেছেন। এটি নির্মাণে কাজ করেছেন ফরাসি কম্পানি বয়গিসের প্রকৌশলীরা। আর নকশা করেছেন ফরাসি স্থপতি মিশেল পিনচিউ।
৫. সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন মসজিদ : ১৯৫৮ সালে ঐতিহাসিক ও দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন মসজিদটি ব্রুনাইয়ের রাজধানী বন্দর সেরি বেগাওয়ান নামক স্থানে অবস্থিত। মসজিদটির প্রধান গম্বুজের বাইরের অংশ সম্পূর্ণ খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরি। পাঁচ একর জমির ওপর নির্মিত মসজিদটির ভেতরের অংশে একসঙ্গে তিন হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটি নির্মাণে অত্যন্ত মূল্যবান গ্রানাইট, মার্বেল ও ক্রিস্টাল ব্যবহার করা হয়।
৬. জহির মসজিদ, মালয়েশিয়া : এটি মালয়েশিয়ার কেদাহ রাজ্যে অবস্থিত। জহির মসজিদ মালয়েশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন একটি মসজিদ। ১৯১২ সালে সুলতান তাজউদ্দীন মুকারাম শাহর ছেলে টুংকু মাহমুদের অর্থায়নে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। ইন্দোনেশিয়ার উত্তর সুমাত্রার আজিজি মসজিদের আদলে মূলত স্থাপত্যশৈলী নির্মাণ করা হয়। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের কথা মাথায় রেখেই মসজিদটিতে পাঁচটি গম্ভুজ নির্মাণ করা হয়েছে। এই মসজিদের প্রাঙ্গণে প্রতিবছর বার্ষিক কোরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
৭. ফয়সাল মসজিদ : এটি পাকিস্তানের বৃহত্তম মসজিদ, যা পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থিত। মসজিদটি ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তুর্কি স্থপতি ভেদাত ডালোকে এর ডিজাইন করেন। মসজিদটি দেখতে অনেকটা মরুভূমির বেদুঈনদের তাঁবুর মতো। সারা পৃথিবীতে এটি ইসলামাবাদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহূত হয়।
সৌদি বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ এই মসজিদ নির্মাণে সমর্থন এবং অর্থ সাহায্য প্রদান করেন। তাই এই মসজিদটির নামকরণ শাহ ফয়সালের নামে করা হয়। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত মসজিদটি পৃথিবীর বৃহত্তম মসজিদ ছিল। পরবর্তী সময় মরক্কোর হাসান-২ মসজিদ নির্মিত হলে ফয়সাল মসজিদ তার অবস্থান হারায়।
৮. তাজুল মসজিদ : এটি ভারতের সর্ববৃহৎ মসজিদ। যা বিশ্বের অন্যতম বড় মসজিদ। মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের শাসনামলে নবাব শাহজাহান বেগম কর্তৃক নির্মাণকাজ শুরু হলেও আল্লামা মুহাম্মাদ ইমরান খান নদভী আজহারি এবং মাওলানা সাইয়্যেদ হাসমত আলী সাহেব ১৯৮৫ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ করেন। তিনটি গম্বুজ ও দুটি সুউচ্চ মিনার, সামনে রয়েছে বিশাল চত্বর। মসজিদের ভেতর ও বাইরে মিলে এক লাখ ৭৫ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে। চত্বরের মাঝখানে রয়েছে বিশাল পানির হাউস। ৪৩ লাখ স্কয়ার ফুটের এই মসজিদটি আয়তনে বিশাল।
৯. বাদশাহি মসজিদ : মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব এই মসজিদ নির্মাণ করেন। ১৬৭১-১৬৭৩ সালের মধ্যে পাকিস্তানের লাহোরে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। ওই সময় এটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় মসজিদ। সামনের সুবিশাল চত্বরটিসহ মসজিদের আয়তন প্রায় দুই লাখ ৭৬ হাজার স্কয়ার ফুট। রয়েছে ১৯৬ ফুট উচ্চতার দৃষ্টিনন্দন আটটি মিনার। আরো রয়েছে তিনটি গম্বুজ। লাল মার্বেল পাথরে তৈরি মসজিদটি এতটাই সুদর্শন যে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে তা সহজেই স্থান করে নিয়েছে। মসজিদটির রাজকীয় সিঁড়ির ২২টি ধাপ পেরিয়ে মূল ফটকে পৌঁছতে হয়। আর মূল ফটকে ক্যালিগ্রাফিতে মসজিদের নাম লেখা রয়েছে, ‘মসজিদ আবুল জাফর মহিউদ্দিন মুহাম্মাদ আলমগীর বাদশাহ গাজী। ’ ভেতরে আর বাইরে মিলে সুবিশাল এই মসজিদের ধারণক্ষমতা এক লাখ মুসল্লি।
১০. সুলতান মসজিদ, সিঙ্গাপুর : এটিকে সিঙ্গাপুরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মসজিদটি নির্মাণলগ্ন থেকে আজ অবধি অপরিবর্তিত অবস্থায়ই রয়েছে। অর্থাৎ যেমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল, ডিজাইনে তার কোনো ধরনের মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়নি। এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৮২৪ সালে এবং শেষ হয় ১৮২৬ সালে।
পাঠকের মতামত: