শিপ্ত বড়ুয়া : অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষায় অপরাধী কোন না কোনভাবেই সুনির্দিষ্ট অপরাধের প্রাথমিক অথবা সামগ্রিক প্রমাণ রাখে, অবশ্য ইচ্ছে করে রাখে না প্রমাণ থেকে যায়। এর সবচেয়ে বড় সত্যতা একরাম হত্যাকান্ডে। ১৪ মিনিটের একরামের মেয়েএবং স্ত্রীর সাথে একরামের শেষ কথোপকথন যেনো অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষার সাথে সুর মিলায়। রাষ্ট্রের পোষা সশস্ত্র বাহিনী যখন একরামকে হত্যা করে সাধারণভাবেই বন্দুকযুদ্ধ বলে পাবলিক সেন্টিমেন্ট নিচ্ছিলো ঠিক সে মুহুর্তে প্রকাশ হলোলোম খাড়া হওয়া ১৪ মিনিটের অডিও। গভীরে গেলে বাহিনীগুলোর কোন দোষ নেই, এই অসুস্থ -পঙ্গু রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে উপরমহলের হর্তা-কর্তারা যখন প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে দেয় হত্যা সংগঠিত করার তখন বাহিনীগুলোরনির্দেশ পালন ব্যতিত কিছুই করার থাকে না। সারাদেশে মাদক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে হঠাৎ কেনো মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হলো তার উত্তর আজও পাইনি।
বন্দুকযুদ্ধের নাম দিয়ে রাষ্ট্রের কতো নাগরিক নির্বিচারে বিচারহীনভাবে হত্যা হয়েছে তার জবাব এই রাষ্ট্র কখনোই কাউকে দিবে না, কারণ একচেটিয়া শাসনকাজ এমন সব অভিজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ বৈকি । প্রথম থেকেই বলে এসেছি এবং সারাদেশে এই বন্দুকযুদ্ধ নাটকের সমালোচনা হয়েছে কিন্তু তাতে আমাদের এই রাষ্ট্রের কিছু কাটা যায়নি। একরাম নয় এই নাটকীয় বন্দুকযুদ্ধে যতো হত্যা হয়েছে সব হত্যাকান্ড নিয়ে আরো অনেক আগেই প্রশ্ন উঠা উচিৎ ছিলো। কারণ একের পর এক সিরিয়াল কিলিং বরাবরই রাষ্ট্রের বিচারবিভাগের প্রতি বুড়ো আঙুল প্রদর্শন। এই বন্দুকযুদ্ধ যে নাটকের শ্রেষ্ঠ নাটক তা একটি দুধের শিশু থেকে শুরু করে বিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ পর্যন্ত বুঝেছে, তারপরেও মুখ বুঝে থেকেছে। আমাদের মহমান্য রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে সবাই যখন মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বিচারহীন হত্যাকান্ডের মদদ দেয় তখন আমাদের মতো চুনোপুঁটিদের আলোচনা-সমালোচনায় কি আসে যায় বলুন তো।
মাথা ব্যথা হওয়া খুব স্বাভাবিক, সমাধান মাথা কেটে ফেলা নয়, মাথার চিকিৎসা করানোই সমাধান। মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘেষণা দিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় একশো মাদক ব্যাবসায়ী বা নিরীহ মানুষকে হত্যা করা যেনো মাথা ব্যাথায় মাথা কেটে ফেলা। অবাক হয়ে যাই যখন সাধারণ মানুষ এই ক্রসফায়ার দেখে খুশিতে বাহবা দেয়। কিন্তু এখন ঠিকই একরামের সাথে মেয়ে ও স্ত্রীর কথোপকথন শুনে সবাই আতকে উঠছে এবং ক্রসফায়ারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ক্রসফায়ার নামক বিচারহীন হত্যাকান্ডের পক্ষে যারা ছিলেন আপনারা মানুষ তো নয় অমানুষও নয়, কোন পক্ষে তা বলা বাহুল্য। তারপরেও আপনাদের আহম্মকতা দেখে ভালো লাগে, মৃত্যুর পর বেহেশতে গিয়ে হত্যার বিচার চান।
অনেক কিছুই নিরবে সহ্য করতে হবে আমাদের, এমন কি রাষ্ট্র কতৃক নিজের অপমৃত্যুও। একরামসহ সারাদেশে নিহত মাদক ব্যবসায়ী বা অব্যবসায়ীদের পরিবারের দায়িত্ব কি মহামান্য রাষ্ট্র নিবে ? নিবে না। যেখানে আইনীভাবে ডেথ প্যানাল্টি অনেক বিবেচনা এবং গুরুতর অপরাধ হিসেব করে আমাদের আদালত সিধান্ত দেয় সেখানে সশস্ত্রবাহিনী একমিনিটেই সিধান্ত নিয়েছে। অন্তত যাই হোক পৃথিবীর সর্বোচ্চ অপরাধীও বিনাবিচারে মারা না যাক। এখন থেকেই আওয়াজ তুলুন বিচাবর্হিভূত হত্যা কোন সমাধান নয়, সমস্যা। নিরব থাকা মানেই কিন্তু মৌন সমর্থন, প্রতিবাদ আবার অপরাধ নয়। মাদকের নির্মূল অবশ্যই সবাই চায় কিন্তু তা সিরিয়াল কিলিং এর মাধ্যমে নয়, দেশের আইন ও বিচারের মাধ্যমে। মাথা ব্যথার সমাধান মাথা কেটে ফেলা নয়, মনে রাখতে হবে।
লেখক: ছাত্র, আইন বিভাগ, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
পাঠকের মতামত: