ঢাকা,শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

বিএনপির কাউন্সিলের আনন্দ যাদের কাছে বিষাদ

bnpবিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলকে ঘিরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সারা দেশের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। তারা কাউন্সিলের জন্য দীর্ঘদিন মুখিয়ে ছিলেন। সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে কাউন্সিল স্থলে নেতা-কর্মীরা জমায়েত হচ্ছে।

শনিবার সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধন ঘোষণা করার কথা রয়েছে। দলের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের কয়েকজন নেতা প্রতীক্ষিত সেই কাউন্সিলে হাজির থাকতে পারছেন না। তাদের কেউ কারাগারে, কেউ আবার আত্মগোপনে। কাউন্সিলের আনন্দ তাদের কাছে বিষাদে পরিণত হয়েছে!

মির্জা আব্বাস
গত ৬ জানুয়ারি নাশকতায় রাজধানীর মতিঝিল ও পল্টন থানার দুই মামলায় আত্মসমর্পণের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসকে কারাগারে পাঠান আদালত।

গত বছরের শুরু থেকে বিএনপির আন্দোলনের মধ্যে কার্যত আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। এপ্রিলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার পর এই দুই মামলায় আগাম জামিন চাইতে  প্রকাশ্যে আসেন আব্বাস। গত মে মাসে হাইকোর্ট আব্বাসের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দিলেও তিনি আত্মসমর্পণ করেন সাত মাস পর। কারাগারে থাকায় মির্জা আব্বাস কাউন্সিলে হাজির থাকতে পারছেন না।
সাদেক হোসেন খোকার ব্যর্থতায় আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা মহানগরের সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রত্যাশায় মির্জা আব্বাসকে নগর বিএনপির আহ্বায়ক করেন বেগম খালেদা জিয়া। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আন্দোলনের হুঙ্কার দিলেও বিএনপির সর্বশেষ আন্দোলনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেন তিনি। পুরো আন্দোলন জুড়ে আব্বাস আত্মগোপনে ছিলেন। এ ঘটনায় দলের হাই কমান্ড তিক্ত-বিরক্ত হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি দলের নীতি-নির্ধারণী কমিটিতেই থাকছেন বলে জানা গেছে।

সাদেক হোসেন খোকা
২০১৪ সালের প্রথম দিকে চিকিৎসার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অবস্থাতেই ওই বছরের ১৯ জুলাই  ঢাকা মহানগর বিএনপির ৫৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সাবেক আহ্বায়ক খোকাকে নতুন  কমিটিতে উপদেষ্টা করা  হয়।
দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য হতে খোকা জোর লবিয়িং করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

সালাহ উদ্দিন আহমেদ
গত বছরের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ‘ধরে নিয়ে যায়’ বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। এক পর্যায়ে ওই বছরের মে মাসে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে তার সন্ধান পাওয়া যায়। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে শিলং পুলিশের মামলা বিচারাধীন থাকায় তিনি দেশে আসতে পারছেন না। ফলে তিনি কাউন্সিলে উপস্থিত থাকতে পারছেন না।
জানা গেছে, দলের জন্য অপরিসীম ত্যাগ, অবর্ণনীয়-অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার এবং ঝুঁকি নিয়ে সংগঠনের দায়িত্ব পালনের পুরস্কার হিসেবে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান করা হতে পারে।

বরকত উল্লাহ বুলু
বিএনপির বিগত আন্দোলনের (অনির্দিষ্টকালের অবরোধ) সময় থেকেই আত্মগোপনে চলে যান দলটির আরেক যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু। আন্দোলন চলাকালে ‘মুখপাত্র’ সালাহউদ্দিন আহমেদ ‘নিখোঁজ’ হলে তিনি কিছুদিন দলের ‘মুখপাত্র’র দায়িত্ব পালন করেন।

জানা যায়, আত্মগোপনে থাকলেও বুলু কয়েকবার আদালতে আত্মসমর্পণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দলটির হাই কমান্ডের নির্দেশে সে অবস্থান থেকে সরে যান তিনি। কাউন্সিলের পরে তিনি আত্মসমর্পণ করতে পারেন।
বিএনপির নতুন কমিটিতে বরকত উল্লাহ বুলু ভাইস চেয়ারম্যান পদে আলোচনায় রয়েছেন।

হাবিব-উন-নবী খান সোহেল
বিএনপির বিগত আন্দোলনে নাশকতার বিভিন্ন মামলায় বর্তমানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। তবে তিনি দেশে আছেন না বিদেশে চলে গেছেন, তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছেন দলের নেতা-কর্মীরা।

বিএনপির বিগত আন্দোলনে মহানগরের আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস আত্মগোপনে চলে গেলেও সদস্য সচিব সোহেল রাজপথে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করছেন। জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের নিয়ে তাকে ঢাকার রাজপথে দু’একটি মিছিল করতে দেখা গেছে। বিএনপির নতুন কমিটিতে হাবিব-উন-নবী খান সোহেল যুগ্ম-মহাসচিব হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন।

শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী
সরকারবিরোধী আন্দোলনে নাশকতার নয় মামলায় গত ২৮ জানুয়ারি ঢাকার হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। এই বিএনপি নেতা জামিনের আবেদন করলে তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

বিএনপির বিগত দুটি আন্দোলনেই চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেন এ্যানী। এছাড়া কমিটি গঠনে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে নগ্ন হস্তক্ষেপের অভিযোগ করেছেন ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা। তাদের আরও অভিযোগ, নেতা-কর্মীদের ওপর নিজের প্রভাব ধরে রাখতে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী পুরো ছাত্রদলকেই নিষ্ক্রিয় করে রেখেছেন। বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকেই তার পদত্যাগ দাবি করেছেন। বিএনপির নতুন কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিব হতে এ্যানী জোর লবিয়িং-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করবেন কাউন্সিলের প্রধান অতিথি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

বাংলামেইল২৪ডটকম

পাঠকের মতামত: