সিএন ডেস্ক :: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনের (বিধিনিষেধের) মেয়াদ আরও এক দফা বাড়তে পারে। বিধিনিষেধ শিথিলের জন্য বিভিন্ন পেশাজীবীদের চাপ থাকলেও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করছেন মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, আগামীকাল সোমবার (১৯ এপ্রিল) সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় ভার্চুয়াল সভা হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আয়োজনে এই সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা যুক্ত থাকবেন। লকডাউন বাড়ানোর বিষয়ে এই সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আরও এক সপ্তাহ লকডাউন বাড়ানোর জন্য প্রাথমিকভাবে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে সভায়ই সবকিছু চূড়ান্ত হবে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘লকডাউন বাড়বে কী বাড়বে না, সেই বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। দু-একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত হলে জানিয়ে দেয়া হবে। তবে লকডাউন বাড়ানোর পরামর্শ তো রয়েছেই।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে আটদিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। আগামী ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ বহাল থাকবে। এই লকডাউন ইতোমধ্যে বিভিন্ন পেশাজীবীদের দুর্ভোগে ফেলেছে। শ্রমজীবী মানুষের কষ্টটা একটু বেশিই হচ্ছে।
এদিকে, আগামী ২২ এপ্রিল থেকে মার্কেট ও দোকান খুলে দেয়ার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাতে রোববার (১৮ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। সামনে ঈদুল ফিতর, লকডাউন দীর্ঘমেয়াদী হলে অন্যান্য পেশাজীবীদেরও আন্দোলনে নামার আশঙ্কা রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। তাই করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি যাই হোক এবার লকডাউন খুব বেশি দীর্ঘ করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
লকডাউন ঘোষণা করে গত ১২ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। লকডাউনের মধ্যে পালনের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, লকডাউনের আটদিন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে গণপরিবহন। তবে জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান-সংস্থা খোলা রয়েছে। খোলা রয়েছে শিল্প-কারখানাও। সীমিত পরিসরে দেয়া হচ্ছে ব্যাংকিং সেবা। এই সময়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। খোলা স্থানে কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনা-বেচা করা যাবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় এর আগে গত ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা পর্যন্ত লকডাউন বা বিধি-নিষেধ ছিল। তবে গণপরিবহন, মার্কেট খোলা রেখে এই লকডাউন ছিল অনেকটাই অকার্যকর।
একই সঙ্গে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকায় দুই সপ্তাহ পূর্ণ লকডাউনের সুপারিশ করে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার।
সর্বশেষ শনিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় দিনে একই সংখ্যক মৃত্যু হলো। একই সময়ে নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৪৭৩ জন।
পাঠকের মতামত: