ঢাকা,শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

বাবা প্রবাসে নিখোঁজ, মা কারাগারেঃ ৫ সন্তান পথে পথে

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বান্দরবান ::
সন্তানদের পড়ালেখার খরচ ও ভরণপোষণ চালাতে না পেরে পার্শ্ববর্তী এক ব্যক্তির ফাঁদে পড়ে মাত্র ৫ হাজার টাকায় ইয়াবার চালান বাড়ি থেকে বহন করে রাস্তায় নিয়ে যেতেই র‌্যাব এর হাতে আটকা পড়ে কারাগারে যায় প্রবাসীর স্ত্রী ফাতেমা। ঘরে নেই বাবা। বাবা গত কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করলেও পরিবারের সাথে তেমন যোগাযোগ নেই। এরই মধ্যে গর্ভধারিণী মাতা মা কারাগারে অন্ধকার প্রকোষ্টে। বাবা-মাহীন অবুঝ ৫ সন্তান প্রতি দিবারাত্রি ‘মা’মা’ শব্দে আর্তনাদ করছে ঘুমধুমের নোয়াপাড়া গ্রামে। সন্তানদের আহাজারিতে এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। কোন-কোন রাতে ছোট অবুঝ শিশু সন্তানদের ক্রন্দনে রাতের ঘুমে আচ্ছন্ন মানুষের ঘুম ভেঙ্গে যায়।

জানাগেছে, গত ৪ জানুয়ারি সন্ধ্যার সাড়ে ৫টার দিকে উখিয়ার পার্শ্ববর্তী ঘুমধুম ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের জাফর আলমের ছেলে মোহাম্মদ সুলতান (২৮) ও একই পাড়ার সৌদিআরব প্রবাসী নুরুল আমিনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৪০)কে ১১ হাজার ৯ শত ইয়াবাসহ আটক করে কক্সবাজারস্থ র‌্যাব-৭ ।

কক্সবাজার ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসানের নেতৃতে র‌্যাব-৭ এর সদস্যরা তাদের আটক করেন। পরে উখিয়া থানায় হস্তান্তর পূর্বক জেলহাজতে প্রেরণ করা হলে উখিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) মোঃ নুরুল ইসলাম মজুমদার তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।

আটক ফাতেমা খাতুনের ভাই শাহাবুদ্দিন ও শ্বাশুরী জানান, ছেলে/মেয়েদের নিয়ে অভাবের সংসার হিসেবে চলে আসছিল পরিবারটি। যার ফলে লোভে পড়ে সুলতান নামক প্রতিবেশী যুবক একটি তালাবন্ধ ব্রিফকেস বাড়িতে রাখতে দিয়ে চলে যায়। যেকোন সময় মোবাইল কল করলে যেখানে নিতে বলবে, সেখানে পৌছে কথামত সেখানে পৌছে দিতে গেলে গত (৪ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় ব্রিফকেসটি নিয়ে উখিয়ার বালুখালী ব্রীজ সংলগ্ন এলাকা থেকেই তাদেরকে আটক করে। উক্ত ইয়াবার প্রকৃত মালিক মোহাম্মদ সুলতান। সে পেশাদার ইয়াবা ব্যবসায়ী। তাঁর আরেক ছোট ভাই নুরুল কবির ইয়াবাসহ আটক হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। সুলতানের বাবা ও প্রথম স্ত্রী ব্যতিত পরিবাররের সকলেই ইয়াবা কারবারে জড়িত। সুলতানের একাধিক স্ত্রী রয়েছে।

প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া জোসনা আকতার নামের আরেক নারীকে বিয়ে করায় পারিবারিক বিরোধ নিয়ে বান্দরবান কোর্টে মামলা করেছে প্রথম স্ত্রী।

এ নিয়ে বিগত ৬/৭ মাস ধরে প্রথম স্ত্রীর সহিত বনিবনা নেই সুলতানের। ফাতের বড় মেয়ে সুফিয়া (১৭) উখিয়া কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী, সুমা ১৫ হচ্ছে ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী, সানী(১৩) ৬ষ্ট শ্রেনীর পড়ুয়া ছাত্রী, শিশু ছেলে রিয়াদ(৬) প্রথম শ্রেনীর ছাত্র ও জিহাদ(আড়াই বছর) ‘মা’মা’মা’ বলে কেঁদে চোখের জল ভাসিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের কান্নাকাটিতে এলাকার মানুষদেরও আবেগী করে তুলছে। কেঁদে-কেঁদে দিনরাত কাটছে এই শিশুদের।

৫ শিশু আত্বীয়-স্বজন দেখলে অপলক দৃষ্টিতে শুধু চেয়ে থাকে আর বলতে শোনা যায় আমাদের “মা”কে এনে দাও। ”মা”কে পুলিশ নিয়ে গেছে, এমন আবেগী কথায় যে কারো মনে নাঁড়া দিয়ে উঠে।

এদিকে ফাতেমা খাতুনের পারিবারিক সদস্যরা, এলাকার মানুষ মানবিক বিবেচনায়, অবুঝ সন্তানদের দিকে থেকে জামিন পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আশু পদক্ষেপ কামনা করেছেন। ৫ সন্তানের ক্রন্দনে এলাকার বাতাসও কাঁদছে। ইতিমধ্যে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। হয়তো আর কোন সময় কলেজে যাওয়া হবে সুফিয়ার, স্কুলে যাওয়া হবেনা, সুমা, সানী, রিয়াদ ও জিহাদের।

 

পাঠকের মতামত: