ঢাকা,শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশে ‘সাদাসোনা’ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ মালয়েশিয়ার

অনলাইন ডেস্ক :: বাংলাদেশে রাবার খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়া। এজন্য বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করেছে মালয়েশিয়া রাবার বোর্ড। প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে রাবার খাতে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি। শ্রমিক সংকট ও মজুরি বৃদ্ধির কারণে এশিয়ার সর্বাধিক রাবার সরবরাহকারী দেশ মালয়েশিয়া পর্যায়ক্রমে রাবার চাষ কমিয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থায় দেশটি বাংলাদেশের সাথে রাবার খাতে শিল্প প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) সৈয়দা সারওয়ার জাহান বলেন, বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের সাথে যৌথভাবে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়া রাবার বোর্ড। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি শিল্প সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা এ খাতে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি এ ক্ষেত্রে আমরা একটি রেজাল্ট পাব। পাশাপাশি বাংলাদেশের আগ্রহী উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ ও জনসম্পদের উন্নয়ন বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে।’
রাবারের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, রাবার অত্যন্ত মূল্যবান একটি অর্থকরি সম্পদ। ‘সাদাসোনা’ নামে খ্যাত রাবার গাছ শুধু মূল্যবান রাবার উৎপন্ন করে তা নয়। এ গাছগুলো প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও পরিবেশের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অন্য যে কোন গাছের চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে রাবার গাছ। গবেষণা দেখা গেছে, প্রতি হেক্টর রাবার বাগান (যেখানে ৪১৫টি উৎপাদনশীল রাবার গাছ রয়েছে) বায়ুমন্ডল থেকে বার্ষিক ৩৯ দশমিক ২ টন কার্বন শোষণ করে, যা উষ্ণতা রোধে ও পরিবেশ রক্ষায় অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রাবার বোর্ড সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের রাউজান, ডাবুয়া, হলদিয়া, দাঁতমারা, তাঁরাখো, রামু, কাঞ্চননগর, রাঙ্গুনিয়া, সিলেটের ভাটেরা, সাতগাঁও, রুপাইছড়া, শাহজীবাজার, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, টাঙ্গাইলের মধুপুর, শেরপুর, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি ও কক্সবাজারে রাবার চাষ করা হয়। সারাদেশে ১৩০৪টি বেসরকারি ও ২৯টি সরকারি বাগান রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার বাগান এবং ব্যক্তিগত বাগানও রয়েছে। রাবার উৎপাদনের সময় সারাবছর। তবে সর্বোচ্চ রাবার উৎপাদন হয় অক্টোবর-জানুয়ারি পর্যন্ত।
রাবার কৃষি এবং শিল্প উভয়খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ গাছের ল্যাটেক্স রাবার শিল্পের মূল কাঁচামাল। রাবার গাছের ফুল হতে মধু উৎপন্ন হয়। গাছের পাতার বোঁটা থেকেও মধু আহরণ করা যায়। এ মধুর ঔষধি ব্যবহারিকগুণও প্রচুর এবং এ মধু খুব সুস্বাদু।
রাবার গাছ বায়ু শোষণ করে পরিবেশকে নির্মল রাখে। বাগান ও ঘর সাজানোর জন্য টবে, বাড়ির বাগানে খুব সহজ পদ্ধতিতে রাবার গাছ লাগানো যায়। অল্প যত্ন পেলেই এ গাছ সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠে। টবে রাখলে ঘরের বাতাস থেকে অনেক ক্ষতিকারক জৈব বাস্প শুষে নেয়। যেমন : ফর্মালডিহাইড, বেঞ্জিন, টলুইন, ট্রাইক্লোরো, ইথেন ইত্যাদি।
রাবার গাছ দ্রুত বর্ধনশীল। এর মাধ্যমে দ্রুত বনায়ন এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। একই সাথে রাবার চাষের মাধ্যমে নারী-পুরুষের ব্যাপক কর্মসংস্থান সম্ভব। বাগানের গাছের পরিচর্যা, টেপিং, ল্যাটেক্স হতে রাবার শিট তৈরি করার কাজে ফ্যাক্টরিতে পাহাড়ি বাঙালি নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়।
রাবার বোর্ড সূত্র জানায়, রাবার গাছের আয়ুস্কাল ৩২-৩৪ বছর। এরপরে জীবনচক্র হারানো রাবার গাছ দিয়ে উন্নতমানের আসবাবপত্র তৈরি করা যায় এবং ঘরবাড়ি তৈরির কাজে লাগে। প্রতিটি রাবার গাছ থেকে ৫-৮ ঘন ফুট গোল কাঠ পাওয়া যায়।
রাবার চাষের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে অনুর্বর জমিতে রাবার চাষ ভাল হয়। ফলে দেশের যেসব জমিতে অন্যান্য ফসল চাষ করা সম্ভব হয় না, সেসব জমি রাবার চাষের কাজে লাগানো যায়।
বর্তমান বিশ্বে সর্বাধিক ব্যবহৃত পণ্যের মধ্যে রাবার অন্যতম। এর বহুল ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। রাবার দিয়ে বিশ্বের ১ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি পণ্য উৎপন্ন হয়। তার মাঝে অত্যধিক ব্যবহৃত হয় জুতা ও গাড়ির টায়ার, বোতল, পেন্সিলের দাগ মোছার রাবার, ফোম, রেক্সিন, গাম, খেলনা, শিল্প কারখানার বিভিন্ন দ্রব্যাদি, চিকিৎসাশাস্ত্রের বিভিন্ন দ্রব্যাদি, গৃহস্থালী সামগ্রী। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি বছর ৩% হারে রাবারের চাহিদা বেড়ে চলছে।

পাঠকের মতামত: