সিলেটে কলেজ ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জড়িত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা ছিল গতকাল সোমবার পর্যন্ত! ওই ঘটনার পর আজ মঙ্গলবার দুপুরে ‘সে ছাত্রলীগের কেউ নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন।
বদরুল ছাত্রলীগের নয় এটা প্রমাণ করতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে লেখা আছে কোনও কর্মী কাজে যোগ দিলে ও বিয়ে করলে তার সদস্যপদ অটোমেটিক বাতিল হয়ে যায়। সে বর্তমানে সুনামগঞ্জের ছাতকের আলহাজ্ব আয়াতুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছে। সুতরাং সে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের কর্মী নয়।’
বদরুল ওই স্কুলে শিক্ষকতা করতো ঠিকই, তবে সে বিবাহিত নয়। ছাত্র রাজনীতি করার সুবাদে লেখাপড়ায় সে ছিল অনিয়মিত। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৭-০৮ সেশনে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হলেও আট বছরেও তার স্নাতক (সম্মান) কোর্স শেষ হয়নি। বদরুল বিশ্বদ্যিালয়ের ছাত্র ছিল তার প্রমাণ, আজ মঙ্গলবার তাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে শাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ।
‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বদরুল ছাত্রলীগের কর্মী নয়’ বলা হলেও গত ৮ মে ২০১৬ ছাত্রলীগের শাবিপ্রবি শাখা যে কমিটি ঘোষণা করেছিল, সেই কমিটির তালিকায় স্পষ্ট দেখা যায় বদরুল আলমের নাম। শুধু তাই নয়, ঈদের শুভেচ্ছা কার্ডেও বদরুল নিজের ছবিসহ দলীয় নেতাদের ছবি ও দলীয় পদ ব্যবহার করেছে।এদিকে মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে, ‘গত ৩ অক্টোবর সিলেট এমসি কলেজে সংঘটিত সন্ত্রাসী ঘটনায় অত্যন্ত ব্যথিত এবং উক্ত ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপন করছে। ওই নৃশংস সন্ত্রাসী ঘটনায় জড়িত ও আটক বদরুল আলমের সঙ্গে শাহজালালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে কোনও সম্পর্ক নেই।
এর আগে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে গুরুতর আহত খাদিজা বেগম নার্গিসকে দেখতে এসে এই বিজ্ঞপ্তির কথাই উল্লেখ করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন,‘সে বর্তমানে সুনামগঞ্জের ছাতকের আলহাজ্ব আয়াতুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছে। সুতরাং সে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের কর্মী নয়।’
তবে স্থানীয় সূত্রের দাবি, বদরুল যে শাবিপ্রবি’র সহ-সম্পাদক পদে বহাল নেই ,এমন কোনও ঘোষণা কোনোদিন দেওয়া হয়নি। বদরুল আলম সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক। সোমবার এই ছাত্রলীগ নেতা চাপাতি দিয়ে নৃসংশভাবে কুপিয়ে আহত করে সিলেট মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসকে।
সোমবার বিকালে সিলেট এমসি কলেজে পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে আসার সময় নার্গিসের ওপর চাপাতি দিয়ে হামলা চালায় বদরুল। কোপে তার মাথায় এবং হাতে মারাত্মকভাবে আঘাত লাগে। ঘটনাস্থল থেকে একুট দূরে দাঁড়িয়ে নৃশংস এ ঘটনার ভিডিও করে সেখানে উপস্থিত লোকজন। প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, মাটিতে লুটিয়ে পড়া নার্গিসকে বদরুল একের পর এক কুপিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে বদরুলকে আটক করেছে শাহপরান থানা পুলিশ। সে ঘটনাস্থলে গণপিটুনিতে আহত হওয়ায় বর্তমানে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন সিলেটের (দক্ষিণ) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মিজান আল মুসা।
অতিরিক্ত এই উপকমিশনার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘আমাদের জানা মতে, নার্গিসদের বাড়িতে লজিং থাকত শাবি ছাত্রলীগের নেতা বদরুল। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে বদরুল দাবি করেছে। সম্প্রতি নার্গিস তাকে প্রত্যাখ্যন করলে সে এই সিদ্ধান্ত নেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার সময় লোকজনকে ছুটে আসতে দেখে বদরুল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে তাকে ধরে গণপিটুনি দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এসে জনতার হাত থেকে হামলাকারীকে উদ্ধার করে। গুরুতর আহতাবস্থায় নার্গিসকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় লোকজন। তাকে সোমবার গভীর রাতে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।’
সোমবার বিকালে পরীক্ষা দিয়ে নার্গিস বের হওয়ার পর এমসি কলেজ মসজিদের পেছনে পুকুর পাড়ে তাকে চাপাতি দিয়ে কোপানোর দৃশ্য দূর থেকে ভিডিও ধারণ করলেও কেউ এগিয়ে যায়নি। পুলিশ জানায়, তারা ভিডিওটি দেখেছেন এবং কোপানোর ধরন দেখে বোঝা যায়, হত্যা করার লক্ষ্যেই তাকে কোপানো হচ্ছে।
পাঠকের মতামত: