এম.আর মাহামুদ ::
বহু বছর আগের “হিরক রাজার দেশে” নাটকটি দেখা সৌভাগ্য হয়েছিল। নাটকটি কাল্পনিক হলেও দেশের চলমান দৃশ্য দেখে মনে হয় আসলে ওই নাট্যকার নাটকটির মাধ্যমে দেশের বাস্তব চিত্র উপস্থাপন করেছিল। কি আজব কান্ড সব পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস যেন রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। কোন ভাবেই প্রতিরোধ করা যাচ্ছেনা। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শতভাগ ব্যর্থ। তারপরও তাদের টনক না নড়ায় বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ আদালত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রীয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবেনা জানতে চেয়ে রুল জারী করেছে। চলমান এস.এস.সি ও সমমান পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগে ভাগেই ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। ভাগ্যবানরা এসব প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে যথাযথ ভাবে উত্তর লিখে দিচ্ছে, আর যারা পাচ্ছেনা তারা নিজের অর্জিত মেধা থেকে উত্তর দিচ্ছে। তবে অসম প্রতিযোগিতায় সত্যকার মেধাবীরা ফলাফল অর্জনে কতটুকু সফলতা পায় তা সময় বলে দেবে। “হিরক রাজার দেশে” নাটকের একটি উক্তি বারবার মনে পড়ে- “জানার কোন শেষ নেই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই” প্রজারা যখন রাজার কাছে গিয়ে শিক্ষার ব্যাপারে ভুমিকা রাখার জন্য বলত তখন রাজা জবাব দিত- দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত লেখা পড়া করেও শিখার কোন শেষ নেই। তাই শিক্ষার বেপারে আগ্রহী হয়ে লাভও নেই। এতে প্রজারা অসন্তুষ্ঠ হয়ে রাজ দরবার ছেড়ে চলে যেত। শেষপর্যন্ত অসন্তুষ্ঠ জনগণ এক সময় সংগঠিত হয়ে স্লোগান দিয়ে রাজার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। প্রতিবাদের ভাষা ছিল- “রশি ধরে মার টান, রাজা হবে খান খান”। শিক্ষা ক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য চলছে এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে জাতি মেধাহীন হয়ে পড়বে। আজকের পরীক্ষার্থীরা আগামী ৬/৭ বছর পরে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরের কর্ণধার হবে। মেধাহীন এসব কর্ণধারের কাছ থেকে জাতি কি আশা করতে পারে। পরীক্ষা আরম্ভ হওয়ার আগ থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি নিয়ে সারাদেশে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠলেও দায়িত্বশীল মহলের ঘুম ভাংছেনা। শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দিলে ৫ লক্ষ টাকার পুরষ্কারও ঘোষণা করতে শুনাগেছে। তারপরও প্রশ্নপত্র ফাঁসের নাটের গুরুদের ধরতে পারেনাই। ধরা পড়ছে কিছু শিক্ষার্থী ও গুটিকয়েক গো-বেচারা শিক্ষক। সম্প্রতি উচ্চ আদালত এস.এস.সি পরীক্ষা বাতিল করা কেন হবেনা জানতে চেয়েছে। বিজ্ঞ আদালত যদি কোন কারণে পরীক্ষা বাতিল করে তাহলে নিরীহ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কি পরিনতী হবে তা ভুক্তভোগী ছাড়া কারো পক্ষে মন্তব্য করা কঠিন হবে।
এদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে ইয়াবা আগ্রাসন। ইয়াবা আশক্ত হয়ে দিনদিন অসংখ্য যুবক ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ইয়াবা আশক্ত যুবকেরা সমাজে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। তবে ইয়াবার কারণে অনেকের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে অঢেল সম্পদের মালিক হচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রতিদিনই ইয়াবার চালান জব্দ করছে। কিন্তু ঠেকাতে পারছে বলে মনে হচ্ছেনা। যে পরিমাণ ইয়াবা জব্দ হচ্ছে তার বহুগুন বেশী ছড়িয়ে ছিটিয়ে পাচার হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। মাঝে মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে পড়ছে, কেউ কেউ ধরাও পড়ছে। আবার জব্দকৃত ইয়াবার একটি অংশ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কথিত সোর্সের মাধ্যমে বাজারে বেচাবিক্রিও হচ্ছে বলে বাজারে রসালো গল্প শুনা যাচ্ছেনা। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে ২ হাজার পিছ ইয়াবা। এ পরিমাণ ইয়াবা পেয়েছে সেলিম নামক এক সাপুড়ের (গারুলী) বিশাক্ত সাপ ভর্তি ৩টি বক্স থেকে। এ অপরাধে আটক সাপুড়েকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আর তিনটি গোখড়া সাপ ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে অবমুক্ত করেছে। আসল কথা এখানে নয়, বিভিন্ন কৌশলে ইয়াবা পাচার কারীরা হর হামেশা ইয়াবা পাচার করে যাচ্ছে। তবে সাপুড়ের বিষধর সাপের বক্স থেকে ইয়াবা জব্দ নতুন ঘটনা। এভাবে ইয়াবা পাচার অব্যাহত থাকলে এক সময় বিসাক্ত সাপও ইয়াবা আসক্ত হয়ে পড়বে। জরুরী ভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও ইয়াবা পাচার রোধ করা না গেলে একদিকে জাতি মেধা শুণ্য হয়ে পড়বে অন্যদিকে যুব সমাজ মাধকাসক্ত হয়ে জাতির সর্বনাশ ডেকে আনবে। শাসক গোষ্ঠি ও আইন প্রযোগকারী সংস্থা এব্যাপারে তৎপর না হলে জাতির পরিনতি কি হয় আল্লাহ্ই ভাল জানে।
পাঠকের মতামত: