মু: গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :: কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আ ফ ম হাসানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে উপজেলা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানের প্রধানগণ ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে।
চলতি বছরে পয়লা জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক দিবসে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত বই বহন খরচ বাবদ টাকা মাধ্যমিক স্কুলগুলোকে দেয়ার কথা থাকলেও তিনি তা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ।
এছাড়া জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ পেকুয়া উপজেলা কমিটি সরকারি বিধি মোতাবেক ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি থাকার কথা। কিন্তু সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে শিক্ষা অফিসার এসব কমিটির সদস্যদের কোন ধরনের তোয়াক্কাই করেনা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮ সাল ও ২০১৯ এর চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক দিবসে সরকার কর্তৃক উপজেলার ৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়। বইগুলো উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে বিদ্যালয় পর্যন্ত বহন বাবদ প্রত্যেক বছর একটি থোক বরাদ্দ আসে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে।
কিন্তু উপজেলার সবকয়টি মাধ্যমিক স্কুল সেই বরাদ্ধ থেকে একটি টাকাও এখনো পাননি। সব টাকা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আ ফ ম হাসান নিজে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন মাধ্যমিক স্কুলের প্রধানগণ।
পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির যৌথ স্বাক্ষরে সোনালী ব্যাংকের স্থাণীয় শাখায় একটি হিসাব খোলা হয়। বরাদ্দকৃত টাকাগুলো সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবার কথা। কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে কোনো বরাদ্দ আমরা পাইনি। যার ফলে আমরা বিদ্যালয় তহবিল থেকে টাকা খরচ করে বইগুলো উপজেলা থেকে বিদ্যালয়ে বই বহন খরচ যোগান দেয়া হয়। আর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে আমরা দাপ্তরিক কাজের জন্য গেলে শিক্ষা অফিসারকে ঘুষ দিতে হয়।
এতে যেমন উপজেলা মাধ্যমিক অফিসের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে তেমনি সাধারণ শিক্ষকগণও শিক্ষা অফিসারের বিভিন্ন নিয়ম বহির্ভূত কর্মকান্ডে অতিষ্ট হয়ে পড়ছেন।
গত তিন মাস পূর্বে পেকুয়া উপজেলার ১৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্টানের দূনীতি দমন কমিশন থেকে সততা সংঘের কমিটি গঠনের জন্য ৪১ হাজার ৪২০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্টানের প্রধানের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করেছে মর্মে আগে থেকেই স্বাক্ষর আদায় করে রেখে ছিলেন শিক্ষা কর্মকর্তা। গতকাল ২ সেপ্টেম্বর পেকুয়া উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সেক্রেটারী আশেক উল্লাহ শিক্ষা কর্মকর্তা সাথে দেখা করে শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলোতে সততা সংঘের টাকা না দেওয়ার কারণ জানতে চান। পরে এ দিন বিকালে পেকুয়া মডেল জিএমসির প্রধান শিক্ষক মাষ্টার জহির উদ্দিনকে সাথে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আ ফ ম হাসান বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধানদের কাছে গিয়ে সততা সংঘের জন্য দুদক থেকে বরাদ্দ আসা টাকা ফেরৎ দেন। এ নিয়ে পুরো পেকুয়াজুড়ে চাঞ্চল্যেও সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও কোন শিক্ষা প্রতিষ্টানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মচারী এমপিওভূক্তির ফাইল প্রেরণের সময়ও শিক্ষা কর্মকর্তা আ ফ ম হাসান নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঘুষ আদায় করেন।
পেকুয়া উপজেলার মেহেরনামা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাষ্টার শামশুদ্দৌহা জানান, সততা সংঘের কমিটি গঠনের জন্য তাকে মাত্রা দুই হাজার টাকা দিয়েছেন। ২ হাজার ৮ শত টাকা বরাদ্দ আসলেও তাকে পুরো টাকা দেওয়া হয়নি।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে পেকুয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আ ফ ম হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সততা সংঘের টাকা লিস্টভূক্ত প্রতিষ্টানে দেওয়া হয়েছে। কোন অনিয়ম করেনি। বই বিতরনের টাকা আত্মসাৎ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোন ধরনের কথা বলতে রাজি হননি।
পাঠকের মতামত: