মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::
মো. হোছাইন শহীদ সাইফুল্লাহ। পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ড়ের বর্তমান ইউপি সদস্য ও আগামী ৩১ মার্চ অনুষ্টিতব্য নির্বাচনেও একই ওয়ার্ড়ের ইউপি সদস্যপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এক সময়ে সাইফুল্লাহ মেম্বার আওয়ামী স্বেচ্চাসেবক লীগের নেতা ছিলেন। পেকুয়া চকরিয়া আসনে জাতীয় পার্টি থেকে হাজী মুহাম্মদ ইলিয়াছ এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে জাতীয় স্বেচ্চাসেবক লীগ ছেড়ে জাতীয় পার্র্টির রাজনীতি সক্রিয় হয়ে উঠেন। এরপর থেকেই রাতারাতি ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় সাইফুল্লাহ মেম্বারের। জানা গেছে, গত কয়েক মাস পূর্বে পেকুয়া উপজেলা জাতীয় যুব সংহতির আহবায়ক কমিটি গঠিত হলে সেখানে যুগ্ন আহবায়কেরও দায়িত্ব পান ওই সাইফুল্লাহ মেম্বার। জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেই নানান অনিয়ম-দূর্নীতি আর সরকারী প্রকল্পের অর্থ লুটপাটে জড়িয়ে পড়েন সাইফুল্লাহ। এমপি ইলিয়াছের কাছ থেকে প্রতি বছর টিআর ও কাবিখার ভূঁয়া প্রকল্প দেখিয়ে সরকারী অর্থ লোপাটের অভিযোগ রয়েছে ওই মেম্বারের বিরুদ্ধে। এমপির কাছ থেকে বহু নাম সর্বস্ব প্রকল্প নিয়ে সাইফুল্লাহ মেম্বার সরকারী টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের অধিনে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা সাইফুল্লাহ মেম্বারের বাস্তবায়নকৃত প্রকল্পগুলো খতিয়ে দেখার জন্য দূর্নীতি দমন কমিশনের হস্থক্ষেপও চেয়েছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের ১ম পর্যায়ে এমপি ইলিয়াছ টিআর প্রকল্পের বিপরীতে সাইফুল্লাহ মেম্বারকে পিসি করে রাজাখালী নতুন ঘোনা রাস্তা সংস্কারের জন্য ২ টন চাল ও একই অর্থ বছরে রাজাখালী ৮ নং ওয়ার্ড়ের শহর আলী কবরস্থান থেকে শাহাব উদ্দিনের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা ভরাটের জন্য আরো ২ টন চাল বরাদ্ধ দেওয়া হয়। চার টন সরকারী চালের বাজার মূল্য হচ্ছে ৬৪হাজার টাকারও বেশি। এসব প্রকল্পের প্রকল্প চেয়ারম্যান হিসেবে সাইফুল্লাহ মেম্বার পেকুয়া পিআইও অফিস থেকে গত ৪ মাস পূর্বে বরাদ্দের ডিও নিয়ে চকরিয়া খাদ্য গুদাম থেকে চালও উত্তোলন করে কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে সুষ্টুভাবে ওই প্রকল্পগুলো আর বাস্তবায়ন হয়নি। আরো বহু নামে-বেনামে টিআর পকল্পের অর্থ লুটপাট করেছে যা সরেজমিনে তদন্ত করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসবে।
শুক্রবার (১৮ মার্চ) সকালে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, আরো বহু প্রকল্প দেখিয়ে সাইফুল্লাহ মেম্বার সরকারী টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের চাল/গম উত্তোলন করেছেন। স্থানীয়রা জানান, ওই ৪টন চালের বিপরীতে ওই মেম্বার কোন ধরনের কাজ করেনি। সরেজমিনে গিয়ে সরকরী বরাদ্দ আত্মসাতের প্রমানও মিলেছে। অধিকাংশ প্রকল্পেই ওই মেম্বার পুকুরচুরি করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেকুয়ার পিআইও অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্তাকে মোটা অংকে ম্যানেজ করে দূর্নীতিবাজ মেম্বার লাগামহীনভাবে সরকারী বরাদ্দ আত্মসাত করেছেন। স্থানীয়রা উক্ত দূর্নীতিবাজ মেম্বারের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পেকুয়ার ইউএনওর কাছে জোরালো হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।
সরকারী বরাদ্দ আত্মসাতের ব্যাপারে সাইফুল্লাহ মেম্বারের কাছে ফোনে জানতে চাইলে তিনি আত্মসাতের প্রসঙ্গটি সরাসরি অস্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে কোন সংবাদ না করার জন্য এ প্রতিবেদকের কাছে অনুরোধ জানান।
জানা গেছে, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের ১ম পর্যায়ে এমপি ইলিয়াছ রাজাখালী পালাকাটা কালামিয়া মার্কেটে সোলার স্থাপনের জন্য ১টন চাল, রাজাখালী বাদশা ফকির মার্কেটে সোলার স্থাপনের জন্য ১ টন ও রাজাখালী নতুন ব্রীজ ষ্টেশনের মসজিদে সোলার স্থাপনে ১টন চাল বরাদ্দ দিলেও গতকাল ১৮ মার্চ পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করেনি সংশ্লিষ্টরা। এসব প্রকল্পের অর্থ গত ৪ মাস পূর্বে উত্তোলনও করে নিয়েছেন সাইফুল্লাহ মেম্বারের নেতৃত্বাধীন অসাধু সিন্ডিকেট। এলাকাবাসীও জানেনা ওই সব প্রকল্পের কারা জড়িত।
এ প্রসঙ্গে সাইফুল্লাহ মেম্বার জানান, সোলার স্থাপনের ওই বরাদ্দের ৩ টন চালের অর্থ এমপির নির্দেশে পেকুয়া চৌমুহুনীর ইউনাইটেড সোলার প্রতিষ্টানের মালিকের গচ্ছিত রয়েছে। এখন সোলার স্থাপন হয়েছে কিনা ওই প্রতিষ্টানের মালিকই ভালো জানবেন। পরে পেকুয়া ইউনাইটেড সোলার প্রতিষ্টানের মালিক ও জাপা নেতা হাজী বদিউল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওই তিনটি সোলার স্থাপন প্রকল্পের সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। তিনি এ বিষয়ে অবগতও নয়।
রাজাখালী পালাকাটা কালামিয়া ষ্টেশনের ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের ষ্টেশনে কোন ধরনের সোলার স্থাপন করেনি। বাদশা মিয়া মার্কেটে গিয়েও সোলার প্যানেল স্থাপনের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। রাজাখালী নতুন ব্রীজ ষ্টেশনের মসজিদেও সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়নি। অপরদিকে মসজিদে স্থাপনের জন্য সোলার লুটপাটের বিষয়টি গতকাল শুক্রবার সাংবাদিকদের মাধ্যমে মুসল্লি ও এলাকাবাসীরা জানতে পেরে বিস্ময় প্রকাশ করে অনেকেই মসন্তব্য করেছেন, ‘এই যমানায় আল্লাহর ঘর মসজিদের নামেও ভূঁয়া প্রকল্প দেখিয়ে সরকারী টাকা লুটপাট হয়!’ এছাড়াও একই অর্থ বছরে রাজাখালী ফৈজুন্নেসা উচ্চ বিদ্যালয়ে আসবাবপত্র ক্রয় দ্বারা উন্নয়নের জন্য ২ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। খোঁজ জানা গেছে, রাজাখালী ইউনিয়নের নারী ইউপি সদস্যা কুলসুমা বেগম পেকুয়া পিআইও অফিস থেকে বরাদ্দের ছাড়পত্র উত্তোলন করে নিয়েছেন তিন মাস পূর্বে। এ প্রকল্পেও সরেজমিনে গিয়ে কোন কাজের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে জানতে পেকুয়ার পিআইওর কাছে ফোন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেননা বলে মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে এ প্রতিবেদকের সাথে আর কথা বলতে রাজি হননি।
পাঠকের মতামত: