ঢাকা,বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

পাহাড় বাঁচাতে তিন প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক :: প্রভাবশালীদের প্রভাব বন্ধ, আইনের পরিবর্তন ও পরিবেশের নিজস্ব গোয়েন্দা বিভাগ সৃষ্টির প্রস্তাব দিয়েছেন পরিবেশবিদরা। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরে আয়োজিত ‘পাহাড় কর্তন : সমস্যা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এ প্রস্তাব দেন আলোচকরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০ টায় পরিবেশ অধিদপ্তরের হালদা সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মুখ্য আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোকে বলা হয় নবীন পাহাড়।

এই নবীন পাহাড়গুলো গড়তে সময় লেগেছে মাত্র ৩৫ লক্ষ বছর। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্য। একটি পাহাড় কেটে হয়ত আপনি ভাবছেন হয়ত কয়েক বছরের মধ্যে পরিবেশের এই ক্ষতি পূরণ হয়ে যাবে। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। হাজার বছরেও ওই ক্ষতি পূরণ হবে না। এর জন্য দায়ী কিছু লোভী প্রভাবশালী মহল। যারা নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে মনে করে ইচ্ছেমত চালিয়ে যাচ্ছে পাহাড় কাটা। কিন্তু তাদের ধরতে যে আইন করা আছে তা লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই না। যেমন পরিবেশের একটি আইনে উল্লেখ করা হয়েছে, পাহাড় কাটলে দুই বছর জেল অথবা দুই লাখ টাকা জরিমানা। এক্ষেত্রে জরিমানা দিয়েই পার পেয়ে যাচ্ছে ওই সব লোভী ব্যক্তিরা। আইনটি হতে হবে দুই বছর জেল এবং দুই লাখ টাকা জরিমানা। তাহলেই পাহাড় কাটা রোধ করা সম্ভব।’

আইনের নানা ফাঁক ফোঁকরে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি প্রভাবশালীদের প্রভাব মুক্ত করতে পদক্ষেপ নেয়ার দুটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন তিনি। মুখ্য আলোচকের এই দুই প্রস্তাবের পরপরই পরিবেশ অধিদপ্তরে গোয়েন্দা বিভাগ তৈরির প্রস্তাব জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্ট সাইন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আল আমিন।

তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ ঘটনা বিশ্লেষণ করলেই দেখা যায়, পাহাড় কাটার পরই সেখানে অবস্থান নেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। কাটার পরিমাণ অনুযায়ী করে জরিমানা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন পাহাড় কাটার পূর্বে খবর পায় না পরিবেশ অধিদপ্তর। প্রশ্নটি আমাদের সকলের কাছে সহজ মনে হলেও স্বল্প পরিসরের জনবল নিয়ে কখনোই জানা সম্ভব নয় যে, কে কোথায় কখন পাহাড় কাটবে। এটা রোধ করতে একটি উপায় হতে পারে ইন্টেলিজেন্ট টিম গঠন করা। কাস্টমস যেমন তাদের গোয়েন্দা টিমের তথ্য মতে অভিযান পরিচালনা করে বড় বড় চালান আটক করছে তেমনি পরিবেশও তাদের এই ইন্টেলিজেন্ট টিম দিয়ে পাহাড় কাটার পূর্বেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যথাযত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।’

সভায় পাহাড়ের সামগ্রিক পরিস্থিতি চিত্র ও ব্যাখ্যাসহ তুলে ধরেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্ট সাইন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন।

বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন চবি’র আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর) বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক মো. নূরল্লাহ নূরী ও চট্টগ্রাম গবেষণাগারের পরিচালক ইশরাত রেজা, পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ, ওয়াসা ও ফায়ারসার্ভিস সহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা।

পাঠকের মতামত: