ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন -প্রধানমন্ত্রীর

sheikh-hasina-300x170একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের মেয়াদ আড়াই বছর চলে গেছে। আর দুই বছর তিন মাস পরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য এখন থেকেই সবাইকে নির্বাচনি প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রত্যেকের নির্বাচনি এলাকায় যেসব উন্নয়ন কাজ বাকি রয়েছে তা শেষ করতে হবে। এছাড়া আমরা যে উন্নয়নমূলক কাজ করছে সেটি বার বার মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। আগে কী ছিল আর আওয়ামী লীগ সরকার কী উন্নয়ন করছে তা মানুষকে জানাতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে সংসদীয় দলের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে একাধিক সংসদ সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেন।

বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব সংসদ সদস্যকে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে নির্বাচনের  নেওয়ার পাশাপাশি সন্ত্রাসবিরোধী কমিটির কার্যক্রম তদারক করার ও জঙ্গিবাদবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টিরও নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী দলের মহিলা এমপিদের এলাকায় গিয়ে ‘এলাকা তৈরি’ না করে নারীদের সংগঠিত করার নির্দেশ দেন। নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপিদের সরাসরি নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেন।

বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও জেলা পরিষদ নির্বাচন, জঙ্গি হামলাসহ সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি আলোচনায় উঠে আসে।

দলীয় এমপিদের এলাকায় গিয়ে সঠিকভাবে ইসলাম প্রচারের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমন ও জনসাধারণকে অসচেতন করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, নিজ নিজ এলাকায় যান এবং প্রকৃত ইসলাম তুলে ধরুন।

তিনি এমপিদের আশ্বত্ব করে বলেন, আপনারা কোনও ধরনের চিন্তা করবেন না। আমরা এর আগেও অনেক ধরনের সমস্যার সমাধান করেছি। এখনও করব। জঙ্গিবাদ কোনও সংকট না। আমরা এর মোকাবিলা করব।

তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। সারা বিশ্বজুড়েই এখন তা ঘটছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশ তা দমন করতে না পারলেও আমরা পারব। কারণ আমাদের দলীয় লোকজন আছে। আছে শক্তিশালী সংগঠন।

প্রধানমন্ত্রী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জঙ্গিবাদবিরোধী নির্দেশনা ও এক লাখ আলেমের ফতোয়া অনুযায়ী জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণা চালানোর জন্য এমপিদের নির্দেশ দেন। জুমার বয়ানে যেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দেওয়া বয়ান ঠিকমত পাঠ হয় সেগুলোও দেখার জন্য এমপিদের জানান।

সূত্র জানায় এমপিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী ‍আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন অব্যহত রাখতে হলে মানুষকে নিরাপত্তা দিতে হবে। শান্তি নিশ্চিত করতে হবে। এলাকায় যেসব সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন করা হয়েছে সেগুলোকে সক্রিয় রাখতে হবে। যারা এখনও কPM120160702195652মিটি গঠন করেননি দ্রুত গঠন করবেন। সব শ্রেণি পেশার মানুষকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।

সূত্র জানায় বৈঠকে সাবেক চিফ হুইপ আব্দুস শহীদ, বি এইচ হারুন, শামীম ওসমান, আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, হুইপ আতিউর রহমান আতিক, ফজিলাতুননেসা ইন্দিরা, ড হাছান মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য বক্তব্য রাখেন।

জানা গেছে, চিফ হু্ইপ আ স ম ফিরোজ তার বক্তব্যে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, আমরা যে পুলিশ নিয়ে কাজ করছি এই পুলিশ তো আমাদের নয়। পুলিশে বিএনপি-জামায়াতের লোক রয়েছে। এই পুলিশ দিয়ে জঙ্গি দমনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটা কতটা ফলপ্রসু হবে তা নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন। এই কথায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তারা জীবন দিয়ে জঙ্গি কার্যক্রম রোখার চেষ্টা করছে। তাই ব্যাক্তিগত কোনও পছন্দ-অপছন্দের কারণে এভাবে বলা ঠিক নয়। আমাদের মধ্যেই তো কত ধরনের লোক রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র সংসদ সদস্যও এ সময় চিফ হুইপের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, স্থানীয় পুলিশের হয়তো সমস্যা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী কল্যাণপুরে সফল জঙ্গি অভিযানের প্রসংশা করেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও সোয়াত বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমি রাতে অভিযান চালাতে না করেছি। ভোরে যাতে অপারেশন চালানো হয় সেই নির্দেশনা দিয়েছি। কারণ রাতে করলে ক্ষয়-ক্ষতির বিষয় থাকে। নানা প্রশ্ন ওঠে।

বৈঠকে আবদুল মান্নান ও শামীম ওসমান মন্ত্রীদের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এই দুই নেতা বলেন, মন্ত্রীদের কাছে গেলে তারা খারাপ ব্যবহার করেন। কাজ করে দিতে না পারেন আমাদের বুঝিয়ে বিদায় দিতে পারেন। ক্ষমতা যেন না দেখান, শক্তির প্রয়োগ যেন না করেন। তবে এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনও মন্তব্য করেননি বলে সূত্র জানায়।

বৈঠকে আরপিও’র শর্ত অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে সংগঠনের সব স্তরে ৩০ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে নারী নেতৃত্ব ৩০ শতাংশ করতে হবে। এজন্য জেলা উপজেলা পর্যায়সহ সব স্তরে নারী নেতৃত্ব বাড়াতে হবে। জেলা উপজেলা পর্যায়ের নেতারা নারীদের নেতৃত্ব আসার বিষয়ে গুরুত্ব দেন না। এমপিরাও নারীদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে চান না। এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী জেলা উপজেলা পর্যায়ের নেতৃত্বে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর আশ্বাস দেন।

সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা সংরক্ষিত নারী এমপিদের নিজ নিজ এলাকা তৈরির চেষ্টা না করার পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী এমপিদের এলাকায় গিয়ে এলাকা তৈরির দরকার নেই। আমি তাদের মনোনয়ন দেবো না। সবাই গিয়ে নারীদের সংগঠিত করতে হবে। আর কাকে মনোনয়ন দেব, কাকে দেব না এটা আমি বুঝবো।

বৈঠকে শামীম ওসমান পুলিশের যে সদস্যরা জঙ্গিবাদ রুখতে গিয়ে প্রাণ দিচ্ছেন তাদের রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়ার দাবি করেন এবং কোনো স্থাপনা তাদের নামে নামকরনের পরামর্শ দেন। হাছান মাহমুদ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস ইসরাইলে হামলা করে না। এ থেকেই বোঝা যায় এটা কাদের সৃষ্টি।

বৈঠকে তারেক রহমানের সাজা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী এমপিদের জানান, এখানে আমাদের করার কিছু ছিল না। এটাই প্রথম মামলা যেখানে এফবিআই এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। তারেক রহমানকে নিয়ে নিম্ন আদালত যে রায় দিয়েছিল তা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল্। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতে আমরা হস্তক্ষেপ করিনি। তার টাকা পাচার প্রমানিত।

পাঠকের মতামত: