থানায় থানায় দালাল ও ক্যাশিয়ারদের দৌরাত্ম্য চিরতরে নিষিদ্ধের ঘোষণা দিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)-এর নবনিযুক্ত কমিশনার ইকবাল বাহার। এজন্য রাস্তাঘাটে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর আগে তিনি থানার অভ্যন্তরে সিসিটিভি লাগানোর ঘোষণাও দিয়েছেন। একইসঙ্গে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের নীতিবহির্ভূত কাজের বিরুদ্ধে কঠোর থাকার কথাও বলেছেন তিনি। গতকাল বিকেলে সিএমপি কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
প্রসঙ্গত, নগরবাসীর নিরাপত্তায় ও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সিএমপির সদ্য বিদায়ী কমিশনার নগরজুড়ে সিসিটিভি বসিয়েছিলেন। এবার পুলিশের কার্যক্রম মনিটরিং করতে থানার ভেতরেই সিসিটিভি স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন নতুন কমিশনার ইকবাল বাহার। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা বলার পরও যদি আমি শোধরানোর কোনো উদ্যোগ না নিই, তাহলে আপনি আবার লিখুন। তবে সার্বক্ষণিকভাবে যদি আমার ব্যর্থতাটা উঠে আসতে থাকে, সেক্ষেত্রে জনমনে কিন্তু বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। একটা কথা, ব্যর্থতা কিন্তু গোটা পুলিশ বাহিনীর নয়, পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তার। সেক্ষেত্রে মানুষ ভাববে পুলিশ আসলে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। যদি আপনি আমাকে কোনো পরামর্শ কিংবা আমার কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ একান্তে জানান, সেক্ষেত্রে আমি সচেষ্ট থাকব, আমার সেই সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।’ তিনি বলেন, ‘পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থাকা দরকার। অপরাধ পুলিশ কিংবা সমাজের যে কোন মানুষ করতে পারে। অপরাধী অপরধীই, তাকে আর পুলিশ, সাংবাদিক আর শিক্ষক ভাবার কোনো অবকাশ নেই।’
সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমি পরিষ্কারভাবে বলছি, পুলিশের সেবা নেয়ার অন্যতম জায়গা হচ্ছে থানা। থানা সম্পর্কে মানুষের ধারণা যদি না পাল্টায়, সেক্ষেত্রে পুলিশ সম্পর্কেও পাল্টাবে না। আমার সঙ্গে হয়ত সারাদিনে ৫০ জন লোক যোগাযোগ করে। আর ১৬ থানায় যদি প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার দুইশ লোক যায়, সেই তিন হাজার দুইশ লোক যদি বলে যে পুলিশ ভাল না, তাহলে আমরা উপরে বসে যত ভালই করি কিছুই হবে না। সেইদিকটা বিবেচনায় নিয়ে আমি চেষ্টা করব, সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে। রাস্তা বা স্থাপনার আগে আমার থানা চত্বর এবং ভেতরে কি হচ্ছে সেটা যেন আমি অফিসে বসে দেখতে পাই, তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাবো। যদি সিসিটিভির আওতায় আমি থানা আনতে পারি, থানার ভেতরে টাউট-বাটপারের যাতায়াত অবশ্যই রোধ হবে।’
‘জিডি করতে টাকা লাগে’-এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘একটি কথা আমি বলতে চাই, অর্থের বিনিময়ে যেসব পুলিশ সেবা প্রদান করতে চায়, তারা যেন সেটা করতে না পারে সেই ব্যাপারে আমি সচেষ্ট থাকব। আমি একেবারে বন্ধ করে ফেলব একথা বলছি না, কিন্তু তারা যেন সেটা করতে না পারে, অন্তত সহনীয় পর্যায়ে যাতে থাকে, কেউ যেন এই অভিযোগ করার সুযোগটি না পায় আমি সেই ব্যবস্থা নেব। আমি ডিএমপিতে থাকাকালীন সময়ে জিডি করতে যাতে কোন ধরনের টাকা পয়সা না লাগে সেই ব্যবস্থা চালু করেছিলাম। এখানে অল্প দিনেই সেই সিস্টেম চালু করা হবে।’
সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে পুলিশি সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেয়ার কথা জানিয়ে ইকবাল বাহার বলেন, ‘আপনারা বর্তমান পরিস্থিতে এমন কোন স্থানে সংবাদ সংগ্রহে যাবেন না, যেখানে গেলে আপনাদের ক্ষতি হবে। সেখানে যদি যেতে হয় প্রয়োজনবোধে পুলিশের সহায়তা নিতে পারেন। আমার পুলিশ আপনাদের প্রোটেকশন দেবে।’
সিএমপির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য সরবরাহে একজন এডিসিকে মুখপাত্র হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে জানিয়ে সিএমপির শীর্ষ এ কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিএমপিতে একজন উপ-কমিশনারের নেতৃত্বে মিডিয়া সেল আছে। সিএমপিতেও আমি উপ-কমিশনার দিয়ে না পারলেও অন্তত একজন এডিসি দিয়ে হলেও একটি মিডিয়া সেল করতে চাই এবং সেটি আমি স্বল্প সময়ের মধ্যেই করতে চাই। তথ্য আপনারা পাবেন, তবে আপনাদেরকে আমাদের সীমাবদ্ধতাটুকু বুঝতে হবে। আইনগত বিষয়গুলোও মেনে চলতে হবে।’
দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়ে ইকবাল বাহার বলেন, ‘আমি যদি আপনাদের ফোন ধরতে না পারি আমাকে অন্তত একটা টেস্ট করেন, আমি কল ব্যাক করব। যে কোন সময় ফোন করেন, এখানে সময় কোনো বিষয় নয়, যখন প্রয়োজন তখন ফোন করেন, আমি ধরব। সিএমপির ৫ হাজার পুলিশ সদস্য এই নগরীর ৬০ লাখ মানুষের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে। জননিরাপত্তা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, এটি একটি সংগ্রাম। আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এ কাজটি একসঙ্গেই করতে চাই।’
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য, অতিরিক্ত কমিশনার মাসুদ উল হাসান, নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) মোক্তার হোসেন, উপ-কমিশনার (সিটি এসবি) মোয়াজ্জেমুল হক প্রমুখ।
পাঠকের মতামত: