ঢাকা,শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

তৈরি হচ্ছে নকল ট্যাং চা-পাতা, টেস্টিং সল্ট রাজাখালীতে ভেজাল পণ্যের কারখানা

নিউজ ডেস্ক ::

নামীদামী ব্রান্ডের নানা ভোগ্যপণ্যের প্যাকেটের রং, ডিজাইন সাদৃশ্য রেখে নাম পরিবর্তন করে নকল পণ্যের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে আসছিল একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেল তিনটায় নগরীর বাকলিয়া থানাধীন রাজাখালী রোডের দুটি ভবনে এ ধরণের নকল পণ্যের কারখানায় হানা দেয় নগর গোয়েন্দা পুলিশ। দুটি ভবনের বিশাল অংশজুড়ে বানানো কারখানায় তখন কম বয়সী ৭-৮ জন তরুণ কর্মচারি সফট ড্রিংকস পাউডার প্যাকেটজাত করছিল।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বদরুল আলম নামের এক ব্যক্তি আলিফ টাওয়ার ও এস আলম বিল্ডিংয়ের গোডাউন ভাড়া নিয়ে গত কয়েকমাস ধরে নকল পণ্যের কারখানা হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। কারখানাটিতে ট্যাংক ব্রান্ডের নকল সফট ড্রিংকস পাউডার, সিয়াম ব্রান্ডের নকল চা-পাতা ও টেস্টিং সল্ট তৈরি ও প্যাকেটজাত করে আসছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে কারখানা দুটি সিলগালাসহ বেশ কিছু নকল পণ্য, এসব পণ্য তৈরি ও মোড়কীকরণের মেশিন জব্দ করেন।
পুলিশ জানায়, ওই কারখানার মালিক বদরুল আলম (২৯) পলাতক রয়েছে। বদরুল সাতকানিয়া থানার দক্ষিণ রূপকানিয়া আল আমিন পাড়ার মৃত নুরুল আলমের ছেলে। সে বর্তমানে রাজাখালী ফারুক বিপনীর সুয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক।
অভিযানে অংশ নেয়া গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মো. আলমগীর চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি, রাজাখালী রোডের আলিফ টাওয়ার (ইছহাক সওদাগর বিল্ডিং) এবং এস আলম বিল্ডিংয়ের গোডাউনকে কারখানা বানিয়ে নকল পণ্য তৈরি ও মোড়কীকরণ করে আসছিল একটি চক্র। আমরা কারখানাটিতে অভিযান চালাই। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রং ও কেমিক্যাল মিশ্রিত করে সফট ড্রিংকস পাউডার তৈরি করা হচ্ছিল কারখানাটিতে। বদরুল আলম নামের এক ব্যক্তি নকল এসব পণ্য তৈরির মূল নায়ক। অভিযানের সময় তাকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি।’
গোয়েন্দা পুলিশের তৈরিকৃত জব্দ তালিকা সূত্রে জানা গেছে, এস আলম বিল্ডিংয়ের ২য় তলার গোডাউনের কারখানায় দুটি ড্রিংকস (ট্যাংক ব্রান্ডের) পাউডার প্যাকেজিং মেশিন, একটি ওয়েট স্কেল, ১২ টি ৫৫ কেজি ওজনের চা-পাতার বস্তা, ১২ টি ২৫ কেজি ওজনের টেস্টিং সল্টের বার, দুইশ কার্টন প্রস্তুতকৃত ড্রিংকস (ট্যাংক ব্রান্ডের) পাউডার, চার বস্তা (প্রতিটিতে ২০০ প্যাকেট) ট্যাংক ড্রিংকস পাউডার, প্রস্তুতকৃত ১০ কার্টন টেস্টিং সল্ট, ট্যাংক এর এক হাজার ৮শটি খালি জার পাওয়া যায়।
অন্যদিকে আলিফ টাওয়ারের ২য় তলায় একটি ট্যাংক এর মিঙার মেশিন, একটি ড্রাই মেশিন, একটি টেস্টিং সল্ট (ফয়েল প্যাক) প্যাকেজিং মেশিন, একটি ট্যাংক প্যাকেজিং (ফয়েল প্যাক) মেশিন, একটি ওয়েট স্কেল, ১৪ কার্টনে ৪২০ কেজি আমদানিকৃত টেস্টিং সল্ট, ৩০ কেজি খোলা টেস্টিং সল্ট, ৫০ কেজি প্রস্তুতকৃত ট্যাংক পাউডার, ৩২ কার্টনে ১২৮ কেজি প্রস্তুতকৃত ট্যাংক, সিয়াম ব্রান্ডের ৯০ কেজি চা-পাতা, ১৮ বস্তা (প্রতিটিতে ৫০ কেজি করে) চিনি, ৪টি প্রস্তুতকৃত ট্যাংকের বস্তা (প্রতিটিতে ২৫ কেজি করে), ট্যাংক এ মেশানোর লাল রং ২৫০ গ্রাম, সাদা পলি ব্যাগ ভর্তি ৫ কেজি বিভিন্ন ধরণের কেমিক্যাল পাউডার।
সরেজমিন দেখা যায়, আলিফ টাওয়ারের দ্বিতীয় তলার গোডাউনে তৈরি করা সফট ড্রিংকসের পাউডার জারে ভর্তি করছিল কয়েকজন শ্রমিক। ১৪-১৫ বছর বয়সী এসব শ্রমিকদের গত এক মাস আগে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে তারা জানায়। ঘটনাস্থলে পারভেজ নামের এক শ্রমিক এই প্রতিবেদককে জানান, ‘আমি চার হাজার টাকা বেতনে চাকরি করি। আমাদের কোম্পানি (নিয়োগদাতা) হচ্ছেন বদরুল আলম। তিনি দেড় মাস আগে আমাকে একাজে নিয়োগ দিয়েছেন। এসব পণ্য যে ভেজাল সেটি জানতাম না।’
ওই কারখানায় পাওয়া বিভিন্ন পণ্যের মোড়ক দেখে জানা যায়, “বিটি ফুট প্রোডাক্টস” নাম দিয়ে ট্যাংক ব্রান্ডের জার, টাকিয়া ব্রান্ডের ফয়েল প্যাক, সিয়াম ব্রান্ডের টাকিয়া স্পেশাল টি, টপ ব্রান্ডের টেস্টিং সল্ট, মি ফং ব্রান্ডের টেস্টিং সল্ট, হাই স্পিড ব্রান্ডের চার ধরনের মশার কয়েল তৈরি ও বিপণন করে আসছিল চক্রটি। পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানিকৃত টেস্টিং সল্ট চাইনিজ নামে মোড়কজাত করা হচ্ছিল কারখানাটিতে। আবার সফট ড্রিংকস তৈরির জন্য দেশিয় চিনি মজুদ করা হয়েছিল কারখানাটিতে।
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. ইলিয়াছ চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘আমরা ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে সবসময় অভিযান পরিচালনা করে থাকি। বৃহস্পতিবার আমরা রাজাখালীর নকল ভোগ্য পণ্যের কারখানাটিতে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু ভেজাল পণ্য জব্দ করি। পরে এ ব্যবসায়ে জড়িত বদরুল আলমকে গ্রেপ্তারে তার ড্রামপট্টির বাসায় অভিযান চালাই। তবে তাকে বাসায় পাওয়া যায়নি। তার বিরুদ্ধে বাকলিয়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হচ্ছে।’
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মিজানুর রহমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘রোজা ঘনিয়ে আসছে। রমজানকে সামনে রেখে একটি চক্র ভেজাল পণ্য তৈরি ও বিক্রির পায়তারা শুরু করেছে। আমরা বাজারে ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়ে কাজ করছি। ক্রেতাদের যাতে ভেজাল পণ্য খেতে না হয়।’
এবিষয়ে নকল পণ্য কারখানার মূল হোতা বদরুল আলম এক বছরের বেশি সময় ধরে এ ব্যবসা জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বৃহস্পতিবার রাতে চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘গত এক বছর ধরে আমি এ ব্যবসাটি করছি। আমাদের তৈরি এসব পণ্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে সাপ্লাই দেয়া হয়।’

পাঠকের মতামত: