নিজস্ব প্রতিবেদক: তামাকের ছোবল থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা)। আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানিয়েছে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।
বুধবার (১২ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রজ্ঞা বলেছে, বর্তমানে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৪৯ শতাংশই তরুণ। যাদের দক্ষতা ও সামর্থ্যের ওপরে নির্ভর করে গড়ে উঠবে বাংলাদেশের ভবিষ্যত। কিন্তু তামাকের কারণে এই সম্ভাবনাময় তরুণ জনগোষ্ঠী দেশের সম্পদ না হয়ে বরং বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বাংলাদেশে বছরে এ লাখ ২৬ হাজার মানুষ মারা যায় তামাক ব্যবহারজনিত রোগে। তামাক কোম্পানিগুলো এই ভোক্তা হারানোর শূন্যতা পূরণে টার্গেট করে শিশু-কিশোর ও তরুণদের। তামাক এবং নিকোটিনযুক্ত পণ্যে আকৃষ্ট করতে ইচ্ছাকৃতভাবে নানা কারসাজির আশ্রয় নেয় কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের লক্ষ্য করে উদ্ভাবনী বিজ্ঞাপন এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনে নিত্য নতুন পণ্য বাজারজাতকরণ, সুগন্ধিযুক্ত তামাকপণ্য তৈরি, চলচ্চিত্র-টিভি-অনলাইন স্ট্রিমিং প্রোগ্রামগুলোতে তামাকের চিত্রায়ন, মিডিয়া বা সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের ব্যবহার, অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার বহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে তামাকপণ্য সহজলভ্য করাসহ নানা কৌশল অবলম্বন করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, তরুণদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের প্রতি আকৃষ্ট করতে পৃথিবীব্যাপী বছরে ৯০০ কোটি ডলার ব্যয় করে তামাক কোম্পানিগুলো।
বিশ্ব যুব দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, ‘তরুণ জনগোষ্ঠীর ওপর নির্ভর করেই বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে উপনীত হতে চায়। তামাকাসক্ত অসুস্থ তরুণ প্রজন্ম এই লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করবে না। এজন্য তামাকের ছোবল থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘‘তামাক কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত যেকোনও ধরনের অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে বিক্রয়স্থলে প্রোডাক্ট ডিসপ্লে নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে তামাকপণ্যের প্রচার বন্ধ এবং পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ বিলুপ্ত করে বাংলাদেশের যুব সমাজকে তামাকের ভয়াবহ ছোবল থেকে রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি।’ ’
উল্লেখ্য, টোব্যাকো অ্যাটলাসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের মধ্যে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ লাখ ৭২ হাজারের বেশি। ধূমপায়ীর এই হার মানব উন্নয়ন সূচকে মধ্যম সারির অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় (বাংলাদেশে) ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি— যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ইউএস সার্জন জেনারেল রিপোর্ট ২০১৪ অনুযায়ী, প্রায় ৯০ শতাংশ সিগারেট ধূমপায়ী ১৮ বছর বয়সের মধ্যে প্রথমবার ধূমপান করেন। অল্প বয়সে তামাকপণ্যে আসক্ত হয়ে পড়লে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে এবং বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ফুসফুসের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। ফুসফুস ক্যানসার, হৃদরোগ, অকাল বার্ধক্য, মানসিক অস্থিতিশীলতাসহ নানাবিধ রোগ সৃষ্টি হয় তামাকের কারণে।
পাঠকের মতামত: