ঢাকা,বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

টেকনাফে বিক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে ‘ডিবি পুলিশ’ ৩ ঘন্টা অবরুদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার, টেকনাফ :
টেকনাফে বিক্ষুদ্ধ জনতার তোপের মুখে ডিবি পুলিশ সদস্যদেরকে ৩ ঘন্টা অবরুদ্ধ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এসময় পুলিশসহ ৫জন আহত হয়েছে এবং ৯জনকে এজাহার নামীয় ১০০-১৫০জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে টেকনাফ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ নাজিরপাড়া গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে শামসুল আলম নামে এক যুবককে আটক করে আদালতে সোর্পদ করেছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
মামলার এজাহার সূত্র জানা যায়, কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও টেকনাফ থানার একটি বিশেষ দল টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া এলাকায় ইয়াবা উদ্ধারের অভিযানে গেলে তাদের উপর হামলা চালিয়ে তাদের ব্যবহারিত গাড়ির গ্লাস ভাংচুর করা হয়। এসময় এএসআই মো. ফিরোজ, আসাদুজ্জামান, কনষ্টেবল আল আমিন, সুমাইয়া সুলতানা ও গাড়ির চালক আবুল ফজল আহত হয়। পরে ঘটনার জড়িত থাকায় একই এলাকার আব্দুল হাকিমের ছেলে শামসুল আলম (২৫) কে আটক করা হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশের একটি দল ইউপি সদস্য এনামুল হকের বাড়িতে যান। এসময় এনামুল হক এনাম মেম্বারকে গ্রেফতার করার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় জনগণ এনামুল হক বাড়িতে অবস্থান করা ডিবি পুলিশকে চর্তুদিকে ঘিরে রাখে এবং এনামুল হকের হাতের হাত কড়া খুলে নেওয়ার জন্য বলেন। এসময় টেকনাফ থানা পুলিশের কোন সদস্যকে দেখা যায়নি। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ ও ওসি মো. মাইন উদ্দিন খানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে এসে অবরুদ্ধ ডিবি পুলিশকে উদ্ধার করে এবং এনাম মেম্বারের হাতে থাকা হাতকড়াটি চাবি পাঠিয়ে খুলে আনা হয়।
এব্যাপারে এনামুল হক মেম্বার বলেন, গত ইউপি নিবার্চনের কারাগার থেকে আমি বিপুল ভোটে ইউপি সদস্য নিবার্চিত হই। পরবর্তীতে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে এলাকায় সুশৃঙ্খলাভাবে বিচার-শালিস নিয়ে এলাকা পরিচালনা করে আসছি।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯ টার সময় আমিসহ তিন বন্ধু ঘরে ভাত খাওয়ার সময় ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তিনজন লোক ঘরে ঢুকে। এসময় তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় কি কাজে এসেছেন, জবাবে বললেন, আপনাকে এসপি সাহেব ডাকছে। রাতে কেন, দিনে ডাকলে তো পারত, এ কথা শুনার পর আমার হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেয়।
এসময় আমি এসআই সুমন মিয়াকে প্রশ্ন করে বলি, আমাকে কেন হাতকড়া পড়ানো হয়েছে জানতে চাইলে সে তখন তাদের সঙ্গে থাকা পুলিশ সদস্য সুমাইয়া ও আল-আমিন নামে ডাক দিয়ে গাড়িতে গিয়ে ইয়াবাগুলো আনার জন্য বললে এ কথা শুনে স্থানীয় জনগণ উত্তেজিত হলে হাতকড়াসহ আমাকে ছেড়ে দেয় এবং ডিবি পুলিশের লোকজন আমার ঘরের ভিতরে অবস্থান করেছিল।
তিনি আরও বলেন, আমার প্রতিপক্ষের লোকজন আমাকে ইয়াবা বড়ি দিয়ে ফাঁসানোর জন্য ডিবি পুলিশকে ব্যবহার করছে। কিন্তু স্থানীয় জনতার বাধার মুখে আমাকে ফাঁসাতে না পারায় প্রতিপক্ষের লোকজনরা তাদের (ডিবি) ব্যবহারিত মাইক্রোবাসটির গ্লাস ভাংচুর করেছে।
এনামুল হক মেম্বার ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, গত ২৪ এপ্রিল রাতে নাজিরপাড়ার মো. ইসলামের ছেলে আব্দুর রহমান ও গুরা মিয়ার ছেলে ইমাম হোসেনকে ডিবি পুলিশের এসআই সুমন মিয়ার নেতৃত্বে আটক করে নিয়ে গিয়ে ইয়াবা দিয়ে মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে ইমামের কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার ও রহমানের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পড়ে ছেড়ে দেয়। কিন্তু এসব ব্যাপারে কাউকে জানালে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেরার হুমকি দেওয়া হয়। এর কয়েকদিন পর একই এলাকার হোসেন আহমদের ছেলে সালেহ আহমদকে একই এসআই সুমন মিয়ার নেতৃত্বে আটক করে মেরিন ড্রাইভ সড়কে নিয়ে ইয়াবা বড়ি দিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। ওই টাকা স্থানীয় বাসিন্দাও ৬ সাংবাদিককের উপর হামলার মামলার আসামী কামাল হোসনের কাছে জমা দিলে পরে সালেহ আহমদকে ছেড়ে দেয় ডিবি পুলিশ।
তিনি আরো বলেন, শুধু নাজিরপাড়া নয়, সারা টেকনাফ উপজেলায় আটক করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে আটক বাণিজ্য চালিয়ে আসছে।
তেমনিভাবে এসআই মনিরের নেতৃত্বে গত মাসে টেকনাফের পৌরসভার জালিয়াপাড়া থেকে রেজাউল করিম পুইন্যা, তার ভাই জিয়াবুল হক ও তাদের ভগ্নিপতি মো. হোসেনকে আটক করে কক্সবাজার নিয়ে যায়। পরে ২০ লাখ টাকায় বিনিময়ে কক্সবাজার থেকে মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে বাহারছড়ার ইউনিয়নের শীলখালী গ্রামের এনে দুইজনকে ছেড়ে দিলেও রেজাউল করিম পুইন্যাকে ৩৪ ধারায় আদালতে পাঠান। এ মাসের প্রথম সপ্তাহে শাহপরীরদ্বীপ মাঝরপাড়ার শুটকী মাছ ব্যবসায়ী লালু মিয়ার প্রকাশ ফসকে লালু ও পুত্রবধুকে তার বাড়ি থেকে আটক করে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়ে চলে আসে। এরকম যদি চলতে থাকে ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ হবে না বরং বাড়বে।
মামলার বাদী এসআই মো. সুমন মিয়া বলেন, এনামকে কোন হাতকড়া পড়ানো হয়নি। তার বাড়িতে ইয়াবা আছে, এমন সংবাদে ওই বাড়িতে অভিযান করতে গিয়ে ছিলাম। এনামকে নাকি ইয়াবা বড়ি দিয়ে আপনারা ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে মো. সুমন মিয়া বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা কথা বলে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন খাঁন বলেন, এ ঘটনায় নয়জনকে এজাহার নামীয় ও ১৫০জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুমন মিয়া বাদি হয়ে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের আটক করার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদ বলেন, খবরপেয়ে আমি ও থানার ওসি সাহেব ঘটনান্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি এবং অবরুদ্ধ ডিবি পুলিশ ও এনাম মেম্বারের হাতে লাগানো হাতকড়াটি উদ্ধার করেছি।

পাঠকের মতামত: