ঢাকা,বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

জেলার সর্বত্রেই প্রভাবশালীদের ইন্দনে চলছে পাহাড় কাটা মহোৎসব

মাহাবুবুর রহমান. কক্সবাজার ::
কক্সজারে দিন দিন কমে যাচ্ছে পাহাড়ের সংখ্যা। জেলার ম‚ল শহরতলী বাদে বেশির ভাগ জায়গায় আগে উচু উচু পাহাড় দেখে স্থাানীয় মানুষ সহ পর্যটকদের চোখ জুড়ালেও এখন আর দেখা মেলেনা সেইসব পাহাড়ের। বেশ কয়েক বছর ধরে কিছু প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রনে সাবাড় হয়ে গেছে এসব পাহাড় তবে সম্প্রতী ২/৩ বছরের মধ্যে বেশি পাহাড় কাটা পড়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া জেলার বনভুমির হিসাবে প্রায় ৪০% পাহাড় কাটা পড়েছে বলে মনে করেন তারা।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগ কার্যালয় সূত্রে এই দপ্তরের আওতায় মোট বনভুমি আছে ২৯ হাজার ৯০০ হেক্টর এর মধ্যে নিজস্ব সংরক্ষিত বন ২৩ হাজার ২২৬ দশমিক ৮২ হেক্টর আর রক্ষিত বন ৬ হাজার ৬৪৩ দশমিক ১৭ হেক্টর। অর্পিত বন ৩১ দশমিক ১ হেক্টর। কক্সবাজার দক্ষিন বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে এই দপ্তরের আওতায় মোট বন ভুমি আছে ১ লাখ ৭ হাজার ৫০৯ দশমিক ১৯ হেক্টর,এর মধ্যে সংরক্ষিত বন ৮৯ হাজার ১৪৯ দশমিক ৪৪ হেক্টর,রক্ষিত কন ১৮ হাজার ৩৫৯ দশমিক ৭৫ হেক্টর। দুই দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবী এর মধ্যে বেশির ভাগই পাহাড় শ্রেনী। বন কর্মকর্তাদের দাবী সত্যি বলতে ১০ বছর আগেও কক্সবাজারে অনেক উচু উচু পাহাড় ছিল এখন সেগুলো স্বপ্ন। বেশ কয়েক বছর ধরে পাহাড় কাটা চলছে তবে ২/৩ বছরে বেশি পাহাড় কাটা পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, আনুমনিক ৪০% পাহাড় গত কয়েক বছরের মধ্যে কাটা পড়েছে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার পরিবেশ অধিপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ নেজাম উদ্দিন বলেন,পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান আছে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি অভিযান চালানো হয়েছে শুধু পাহাড় কাটার বিষয়ে এবং মামলাও করা হয়েছে। তিনি জানান সদর উপজেলার পিএমখালী,ঈদগাঁও,ভারুয়াখালী,খুরুশকুল এবং রামু উপজেলার মিঠাছড়ি,ঈদগড়,খুনিয়াপালং সহ অনেক জায়গায় ব্যাপক ভাবে পাহাড়কাটা হয়েছে।

এদিকে মিঠাছড়ি এলাকার সমাজ সেবক আবদুল কাদের সহ অনেকে বলেন,আমাদের এলাকার ৭০% পাহাড় কাটা হয়েছে,সবাই যানে স্থানীয় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে প্রতিদিন অর্ধশত ডাম্পার নিয়ে পাহাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করছে।
এদিকে ঈগদাঁও ইসলামপুর এলাকা থেকে বেশ কয়েকজন জানান,এলাকার সব পাহাড় এখন কাটা হয়ে গেছে,বেশির ভাগ মাটি রেল লাইন প্রকল্পে ব্যবহার হচ্ছে। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল দিন রাত এই পাহাড় কেটে অবাধে মাটি বিক্রি করছে। ইতি মধ্যে তারা এই মাটি বিক্রি করে বিপুল টাকা আয় করেছে। এবং পাহাড় কর্তনকারীরা প্রকাশ্য সন্ত্রাসী বাহিনি রেখে প্রশাসন সহ সব কিছু ম্যানেজ করে পাহাড় কাটছে।

উখিয়া উপজেলা সুজন সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেণ,সরকারি তথ্য মতে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার একর বনভুমি কাটা হয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্য। এর মধ্যে সব পাহাড়শ্রেনী আমার দেখা মতে ৬/৭টি বড় বড় পাহাড় কাটা হয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্য। এবং এখনো কাটা হচ্ছে। তিনি জানান সরকার তথ্য না দিলেও রোহিঙ্গারা প্রতিদিন বনভুমি দখল করে নতুন নতুন বাড়ি করছে।

উখিয়া কলেজের অধ্যাপক অজিত দাশ চকরিয়া নিউজকে বলেণ,পাহাড় হচ্ছে পৃথীবির রক্ষা কবজ। ভুমিকম্প সহ যে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগে পৃথীবিকে সঠিক মাত্রায় বহন রাখতে পাহাড়ের ভুমিকা বেশী। এছাড়া পাহাড়ের কারনে অতিবৃষ্টি,কম বৃষ্টি সহ অনেক কিছু নির্ভর করে। তাই এভাবে পাহাড় কাটার কারনে পৃথীবির স্বাভাবিক পরিবেশ চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

কক্সবাজার পরিবেশ আন্দোলন বাপার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন,আমি আগেই বিভিন্ন জায়গায় বলেছিলাম রেল লাইন প্রকল্প হচ্ছে সেখানে যে বিপুল পরিমান মাটি লাগবে সেটা কোথা থেকে আসবে ? কারন যে কোন কিছুর চাহিদা থাকলে সেটা যে কোন ভাবে পূরন করার চেস্টা করবে। আর পাহাড় না থাকলে পরিবেশের যে বিপর্যয় ঘটবে সেটা বলে শেষ করা যাবেনা। এ কথায় মানুষের বসাবাসের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে যাবে এই স্থান। তাই পাহাড় কাটা বন্ধে এখনি সবাইকে কঠোর হতে হবে।

এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরকারি হিসাবে ৬ হাজার একর বলা হলেও বাস্তবে ১০ হাজার একর বনভুমি তারা দখল করেছে। এবং এখনো তারা প্রতিনিয়ত ঘরবাড়ি করছে। এছাড়া প্লাস্টিকের ব্যবহার করে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। তাই এসব বিষয়ে এখনি পদক্ষেদ না দিলে আমাদের জন্য ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে।

পাঠকের মতামত: