ঢাকা,সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: ইতিহাসের মহানায়ক, বাংলাদেশের স্থপতি, পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্ত আকাশে নিঃশ্বাস নেওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন যিনি, সেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী আজ (১৭ মার্চ)।

মহান এই নেতার শততম জন্মবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক অনন্য মাইলফলক। জন্মশতবার্ষিকী এমন একটি সময় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন সোনার বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে।

আজ বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিন। এদিন থেকে শুরু মুজিববর্ষও। ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এ বর্ষ উদযাপন করা হবে। পুরো জাতি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে মহান এই নেতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের জন্য।

দিবসটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও করোনাভাইরাসজনিত বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে মুজিববর্ষের কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। জনসমাগম এড়াতে রাজধানীর প্যারেড গ্রাউন্ডে মুজিববর্ষের জমকালো অনুষ্ঠান স্থগিত করে সম্প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’।

মঙ্গলবার রাত ৮টায় বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আতশবাজির মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচির উদ্বোধন করা হবে। রাষ্ট্রপতি তার ভাষণের পরপর আতশবাজির মাধ্যমে জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।

কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গণমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে তারা মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। টেলিভিশনের মাধ্যমে, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা আলাদাভাবে প্রোগ্রাম করছি। যা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ পর্যন্ত তার ঘরে বসে বা প্রতিষ্ঠানে বসে মুজিববর্ষের এই অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবে। সেভাবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি সাজানো হয়েছে।’

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এই নেতা ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এই দিনটি জাতীয় শিশু দিবসও।

এর আগে গত ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণ গণনা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তেজগাঁও এলাকার পুরাতন বিমান বন্দরে ‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগানে ক্ষণ গণনার উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

জাতি যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আজ মুজিববর্ষের সূচনা ও বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিবসটি উদযাপন করবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে বাংলাদেশি দূতাবাসসমূহে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় উদযাপিত হবে। দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রেকর্ড করা ভাষণসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে সারা দেশে বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে প্রার্থনা সভা হবে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে সীমিত আকারে কর্মসূচি পালন করা হবে।

মুজিবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির একটি প্রতিনিধিদল টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেবেন। এছাড়া দেশের সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা হবে। এতিম ও দুঃস্থদের মাঝে খাবার ও ত্রাণ বিতরণ হবে।

রাত ৮টায় বঙ্গবন্ধু জন্মক্ষণ উপলক্ষে সারা দেশে একযোগে আতশবাজি হবে। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ৩২ নম্বর ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে এবং ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই আতশবাজি হবে।

এছাড়াও রবীন্দ্র সরেবর, হাতিরঝিল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসটি ও জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় আতশবাজি প্রদর্শনী হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদানের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

বঙ্গবন্ধু ১৯৪৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকেটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলীর সদস্য নির্বাচিত হন। ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এই অবিসংবাদিত নেতাকে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়।

তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬-দফা ও পরবর্তীতে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধীকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন। তার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধাপে ধাপে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে থাকে।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতির ওপর নানা নির্যাতন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। যা ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়াল্ড রেজিস্টার এ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

অন্যদিকে ২৫ মার্চ মধ্যরাতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালির বহু আকাঙ্খিত বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জিত হয়। বিংশ শতাব্দীতে নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে যারা বিশ্বনন্দিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের অন্যতম।

সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিরামহীন সংগ্রামে অবদান রাখার জন্য তিনি বিশ্বশান্তি পরিষদের জুলিও কুরি পদকে ভূষিত হন। বিবিসির এক জরিপে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যখন বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করতে শুরু করেন ঠিক সেই মুহূর্তে স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শক্তি ও কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহল তার বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং ওই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি তার ধানমন্ডির বাসভবনে কতিপয় বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন।

বিশ্ব গণমাধ্যমের চোখে বঙ্গবন্ধু ছিলেন ক্ষণজন্মা পুরুষ। অনন্য সাধারণ এই নেতাকে ‘স্বাধীনতার প্রতীক’ বা ‘রাজনীতির ছন্দকার’ খেতাবেও আখ্যা দেওয়া হয়। বিদেশি ভক্ত, কট্টর সমালোচক এমনকি শত্রুরাও তাদের নিজ নিজ ভাষায় তার উচ্চকিত প্রশংসা করেন।

পাঠকের মতামত: