ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

চোর ছাড়ে আপন গাঁ, যদি নড়ে দারোগা

mr mahএম.আর মাহমুদ, চকরিয়াঃ

এক সময় দেশে স্বল্প সংখ্যক পুলিশ দিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে সক্ষম হলেও বর্তমানে বিশাল পুলিশ বাহিনীর পক্ষে নানা ধরণের অপরাধ দমন জটিল হয়ে পড়েছে। নিত্য নতুন অপরাধের কারণে পুলিশ প্রশাসন রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। তবে দেশের পুলিশ বাহিনী হয়তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় শতভাগ সফল না হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সফলতা ও দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। অপরাধ দমন, জঙ্গি দমন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আন্দোলন দমনে পুলিশ সফলতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। গ্রামের প্রবীণ লোকজন একসময় বলত “যদি নড়ে দারোগা, চোর ছাড়ে আপন গাঁ” প্রবাদটি যখন প্রচলন হয়েছিল তখন থানা পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পদমর্যাদা ছিল উপ-পরিদর্শক (এস.আই), ওই সময় লোকজন বলতো বড় দারোগা। এসব দারোগা কোন গ্রামে প্রবেশ করলে অপরাধীরা পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করত। সাবেক সামরিক আইন প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি এরশাদ সরকারের সময় মানোন্নীত থানা করতে গিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদটি উপ-পরিদর্শক থেকে পরিদর্শক পদে উন্নীত করেছে। আর থানা প্রশাসনের ক্ষেত্রে সি.ও (ডেভ) এর পরিবর্তে ইউ.এন.ও করেছে। সি.ও (রেভ) এর ক্ষেত্রে সহকারী কমিশনার (ভূমি) করেছে। এভাবে চলছে এখন উপজেলা প্রশাসন।

জনসংখ্যা হু-হু করে বাড়ার কারণে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরাধের ধরণ ও পাল্টে যাচ্ছে। থানায় আগের জনবলের তিনগুন জনবল বেড়েছে। পুলিশের চাকুরির ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন ও এসেছে। সিপাহী বিপ্লব থেকে ব্যবহৃত বৃটিশের তৈরী থ্রি নট থ্রি রাইফেলের পরিবর্তে চাইনিজ রাইফেল, শর্টগান, রিভলবার, পিস্তল ও কদানো গ্যাসের মত অত্যাধুনিক অস্ত্র পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। আগেও মাদকদ্রব্যের প্রচলন ছিল। যা ছিল সীমিত আকারে। এগুলোর মধ্যে ছোলাই মদ, গাজা, আফিনের ব্যবহার ছিল সে সময়ে। এখন মাদকের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে, বিদেশী উন্নতমানের মদ, ছোলাই মদ, হেরোইন, ফেনসিডিল ও ইয়াবা উল্লেখযোগ্য। ইয়াবার চালান কোন মতেই ঠেকানো যাচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রতিদিনই ইয়াবার চালান জব্ধ করছে। তবে ইয়াবা পাচার বন্ধ হয়েছে এমন কথা বলা যাবেনা। যা গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। যুব সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় ইয়াবা পাচার ঠেকাতে নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। কোন ভাবেই ইয়াবা পাচার রোধ করা যাচ্ছেনা। অবস্থা দেখে মনে হয়, ইয়াবা যেন “ধ্র“পদী’র শাড়ী। যতই বস্ত্র হরনের চেষ্টা করা হোক, শাড়ী ততই লম্বা হতেই থাকবে। ইয়াবা পাঁচারে জড়িত রাঘব বোয়ালেরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চিহ্নিত ইয়াবা পাচারকারীদের ভাগ্যের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে, যা দৃশ্যমান। পুলিশকে মাদক পাচার, রোধ, চুরি ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণের মত অপরাধ দমনে ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়। তার উপর রয়েছে ভিআইপি ডিউটি। পুলিশ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিহ্নিত অপরাধীদের ছাড় দিতে চায়না। তারপরও রাজনৈতিক কারণে অনেক ক্ষেত্রে বড় বড় অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে বলে হরহামেশা অভিযোগ উঠছে। এক কথায় বলতে হয়- পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া কেউ রাতারাতি এরশাদ সিকদারের মত ভয়ংকর সন্ত্রাসী হতে পারেনা। আবার বনবিভাগের সহযোগিতা ছাড়া বন উজাড় করা যায়না। এছাড়া ভুমি অফিসের সহযোগিতা ছাড়া সরকারী খাস জমি দখল করা যায়না। তবে সব ক্ষেত্রে এই প্রবাদটি যে যথার্থ তা মনে করিনা। আবার একেবারে প্রবাদটি যে অমূলক তা বলারও কোন যুক্তি নেই। সম্প্রতি চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীসহ অন্যান্য সহকর্মীদের তৎপরতার কারণে একজন দাপুটে গরু চুরের পালানোর অবস্থা দেখে মনে হয় পুরনো যুগের প্রবাদটি যথার্থ “যদি নড়ে দারোগা, চোর ছাড়ে আপন গাঁ”।

ইতোমধ্যে চকরিয়া থানা পুলিশ চিহ্নিত গরু চোরের অন্যতম সহযোগীকে একটি দেশীয় অস্ত্রসহ আটক করেছে। এছাড়া তাদের ব্যবহৃত একটি মটর সাইকেলও উদ্ধার করেছে। তবে গরু চোর সিন্ডিকেটের প্রধানকে এখনও আটক করতে পারেনি। তাকে আটক করতে পারলে গরীব শ্রেণীর গবাদি পশুর মালিকেরা শংকামুক্ত হতে পারত বলে বিজ্ঞজনদের অভিমত।

পাঠকের মতামত: