ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

চাঁদাবাজিতে নকল হিজড়া

hijঅনলাইন ডেস্ক :::

ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীতে হিজড়াদের চাঁদাবাজি আর উৎপাত আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়েছে। শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত দোকান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পার্ক, বাস, রিকশা, খাবারের হোটেল, বিয়ের অনুষ্ঠান, ধর্মীয় অনুষ্ঠান সর্বত্রই তাদের অত্যাচার। এখন চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন উৎপাত। হিজড়ার বেশ ধরে নারীদের কয়েকটি চক্র চাঁদাবাজি করছে বিভিন্ন এলাকায়। চাঁদা না দিলে তারা মানুষকে নানাভাবে হেনস্থা করছে। সাধারণ মানুষের চোখে ধুলা দিয়ে নকল হিজড়ারা চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে।
সমপ্রতি রাজধানীর বিভিন্ন পার্ক, বাস, দোকান, শহরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নকল ও আসল হিজড়াদের চাঁদাবাজির ভয়ঙ্কর চিত্র। আগারগাঁও সিগন্যালে অন্যান্য গাড়ির সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে বিকল্প বাস। যাত্রীরা অপেক্ষার প্রহর গুনছে কখন সিগন্যাল ছাড়বে। ঠিক তখনই ২জন হিজড়া এসে হাজির। বাসের মধ্যে থাকা প্রায় সকল যাত্রীর কাছ থেকে দশ টাকা করে নিয়ে চলে যায়। এভাবেই সিগন্যাল চলাকালে প্রায় ৪-৫টি বাস থেকে তারা চাঁদা তুলে। ভাঙতির অজুহাতে অনেকে বিষয়টি এড়াতে চাইলেও রেহাই পাননি। প্রত্যক্ষদর্শী এক বাসের যাত্রী ইমরান জানান, মিরপুরের একটি অফিসে কাজ করার সুবাদে প্রতিদিনই আমাকে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু হিজড়াদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। প্রতিদিনই বাসে উঠলে হিজড়াদের চাঁদা দিতে হয়। দল বেঁধে এসে তারা আক্রমণ করে। না দিলে গালে মুখে চিমটি দেয়। এমনকি শরীরের কাপড় ধরে টানাটানি করে। বাধ্য হয়ে কোন কথা না বলেই টাকা দিতে হয়। বাংলামোটরে বিহঙ্গ বাসের যাত্রী আরিফ। লেখাপড়া করেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি বলেন দুদিন আগে আমি আর আমার এক বন্ধু বাসে করে ভার্সিটি যাচ্ছিলাম। ফার্মগেটে বাস থামতেই দু’জন হিজড়া উঠে যায়। তারপর সবার কাছ থেকে চাঁদা নেয়া শুরু করে। আমি আর আমার বন্ধু প্রতিবাদ করায় তারা আমাদের উপর ক্ষেপে যায়। এক পর্যায়ে আমার বন্ধুর শার্ট ধরে টানাটানি করতে থাকে এবং শার্ট কিছুটা ছিঁড়ে যায়। পরে বাসের অন্য যাত্রীদের সহযোগিতায় বিষয়টি মিটমাট হয়। স্বাধীন বাসের যাত্রী আহসানউল্লাহ জানান মাঝে মধ্যে একই বাসে উঠলে ২-৩ জায়গায় আলাদা আলাদা হিজড়ারা আক্রমণ করে। ধানমন্ডি লেকে ঘুরতে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামান্না ইসলাম ও শাহরিয়ার জামান বলেন আমরা প্রায়ই এখানে ঘুরতে আসি। কিন্তু আসার পরই  হিজড়ারা এসে হাজির হয়। এবং তারা ১০ টাকা করে চাঁদা নেয়। সকাল বিকেলে সব সময়ই তারা এখানে আসে। ৫ টাকা দিলে নিতে রাজি হয় না। আর টাকা না দিলে মানুষের সামনে গালে চিমটি দেয়। তাই মান সম্মানের ভয়ে টাকা দিতে বাধ্য হই। কাওরান বাজারের চা বিক্রেতা রুবেল মিয়া জানান, দু’একদিন পর পরই হিজড়ারা দল বেঁধে এসে হাজির হয়। এসেই টাকা চায়। টাকা না দেয়া পর্যন্ত বসে থাকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শাহবাগের এক ফুল ব্যবসায়ী বলেন প্রত্যেক দিনই তারা এসে টাকা চায়। সব সময় কি আর বিক্রি ভালো হয়। কিন্তু তারা এটা বুঝে না। টাকা দিতে হবেই। শাহবাগের আরিফ নামের এক চা বিক্রেতা বলেন আমার ছোট দোকান। বেশি বিক্রি নেই। কিন্তু আমাকেও টাকা দিতে হয়। কমলাপুর রেলওয়ে স্ট্রেশনে ডেমু ট্রেনের রহিম নামের এক যাত্রী বলেন প্রতিটা ট্রেনে এখন হিজড়ারা দল বেঁধে অভিযান চালায়। প্রতিটা যাত্রীর কাছ থেকে ১০ টাকা ২০ টাকা করে চাঁদা নেয়। যে দেয় না তার সঙ্গেই তারা খারাপ আচরণ করে।
হিজড়া নিয়ে কাজ করা সংগঠন বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির পরিচালক প্রোগ্রাম ফসিউল আহসান জানান, রাজধানীতে কিছু মহিলা ইচ্ছাকৃত ভাবে হিজড়া সেজে চাঁদাবাজি করছে, যা আইনবহির্ভূত। শুধু চাঁদাবাজি করার জন্য তারা এই অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। নকল হিজড়ারা চাঁদাবাজি করে আর দোষ যায় আসল হিজড়াদের উপর। সন্ধ্যার পর হলেই তাদের বিচরণ লক্ষ্য করা বিভিন্ন বাসে পার্কে। তিনি বলেন, আমরা আসল হিজড়া নিয়ে কাজ করি। তারা সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিন চাঁদাবাজি করে। এবং প্রত্যেক হিজড়ারা একেকটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তাদের একজন গুরু বা লিডার থাকে। তারা লিডারের অনুমতি নিয়ে চাঁদাবাজি করে। আবার কেউ কেউ লিডারের অজান্তেই করে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশে  প্রায় ১৫ হাজারের মতো হিজড়ার বসবাস। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই জন্মগত ভাবে হিজড়া আবার কেউ কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে হিজড়া হয়ে বেঁচে নিয়েছেন এরকম জীবন। তবে এসব কিছুর আড়ালে কিছু অসাধু মহিলারা এখন সাজগোজ করে হিজড়া বেশ ধারন করে নগরীর বিভিন্ন বাস, পার্কে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। দেখতে আসল হিজড়ার মতো মনে হলেও তারা নকল হিজড়া।

পাঠকের মতামত: