চবি প্রতিনিধি :: বুধবার রাতের পর বৃহস্পতিবার দিনেও ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছে চবি ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ। এসময় প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা। প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতেই কুপিয়ে গুরুতর জখম করে শাখা ছাত্রলীগের উপ–দপ্তর সম্পাদক রমজান হোসাইনকে। পরে প্রায় দুই ঘণ্টা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটে র্যাবের উপস্থিতিতে। সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের অন্তত ২৫ জন আহত হয়। তাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্ক্ষাজনক। তাদের চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ প্রতিবেদন লেখার সময় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও অনেকটা থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছিল ক্যাম্পাসে। আগেরদিন বুধবার রাত ১০টার দিকে ক্যাম্পাসের শাহ আমানত হলের সামনে ঢাকা হোটেলে ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরে সেটা শাহজালাল হল ও আমানত হলের অবস্থানরত ছাত্রলীগ কর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে।
জানা যায়, শাখা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সিঙটি নাইন পক্ষের উপ–পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক মাহফুজ বুধবার রাতে ঢাকা হোটেলে খেতে আসলে বাজে আচরণ করে সিএফসির কয়েকজন কর্মী। এসময় মাহফুজ নিজেকে সিনিয়র পরিচয় দিলে গায়ের দিকে তেড়ে আসে সিএফসির কর্মীরা। এক পর্যায়ে মাহফুজকে মারধর করে তারা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শাহজালাল হল থেকে সিঙটি নাইনের কর্মীরা সিএফসির কর্মীদের ওপর ছড়াও হয়। আমানত হলে থাকা সিএফসির কর্মীরাও পাল্টা আক্রমণ করে। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা দাওয়া হয়। এতে আহত হয় উভয় পক্ষের সাতজন। পরে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ির পর প্রক্টরিয়াল বডি পুলিশ নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। এরপর অনেকটা থমথমে ছিলো পরিস্থিতি। পরে গতকাল বেলা সাড়ে বারোটার দিকে আবার সংঘর্ষে জড়ায় দুইপক্ষ। এসময় প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা। হলের সামনের সড়কে তৈরি হয়েছে ইটের স্তূপ। প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতেই কুপিয়ে গুরুতর জখম করে শাখা ছাত্রলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক রমজান হোসাইনকে। পরে প্রায় দুই ঘণ্টা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটে র্যাবের উপস্থিতিতে। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে হলে প্রবেশ করে ছাত্রলীগের কর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলের চিফ অফিসার আবু তৈয়ব বলেন, ২৫ জনের অধিক আহত শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে ২ জন গুরুতর আহত হওয়ায় তাদের চট্টগ্রাম কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সিঙটি নাইনের পক্ষের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাঈদুল ইসলাম সাঈদ বলেন, আমাদের পদধারী নেতাকে পরিচয় দেওয়ার পরও মারধর করা হয়েছে। সেটা আমাদের জুনিয়ররা মানতে পারেনি। তারা সেটা প্রতিহত করতে গিয়ে সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের এজেন্টরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সভাপতি হিসেবে তার গ্রুপের প্রতি নিয়ন্ত্রণ নাই। যার ফলেই ঘটনা বড় হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে বসবো সমাধান করার জন্য।
শাখা ছাত্রলীগের সহ–সভাপতি ও সিএফসি গ্রুপের নেতা সাদাফ খান বলেন, রাতের ঘটনা মীমাংসা হয়ে গেলেও দুপুরে খেতে বের হলে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে রমজান হোসেনকে তারা এলোপাতাড়ি কোপ দেয়। আমরা ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব। কোনো ধরনের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিছু থাকলে সেটা সভাপতি সাধারণ সম্পাদক জানেন।
এ ব্যাপারে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুকে ফোন করলেও পাওয়া যায়নি। সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, আমি ঢাকা আছি আমার বাবা–মাকে নিয়ে। এসবের কিছুই জানি না আমি। এসবের সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নাই। ছাত্রলীগের কিছু ঊচ্ছৃঙ্খল কর্মী এসব করছে।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কখনো সংঘাতকে বরদাশত করে না। আমরা ব্যাপারটি খতিয়ে দেখে শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। চলমান কমিটি নিয়ে তিনি বলেন, এটি মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি। সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা শীঘ্রই নতুন নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করব।
প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, যারা এ ঘটনায় জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
পাঠকের মতামত: