এম.মনছুর আলম, চকরিয়া (কক্সবাজার) : আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের প্রচার-প্রচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের নির্বাচনী এলাকা।এই দুই উপজেলার ২৫টি ইউনিয়ন ও এক পৌরসভা এলাকায় প্রচার-প্রচারণা, মাইকিং আর পোস্টারে ছেয়ে গেছে গ্রাম-শহরের অলিগলি। আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতীকের পক্ষে বিরামহীন ভাবে চলছে মিটিং-মিছিল, গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক।সংসদীয় এ আসনে চকরিয়া, পেকুয়া, পৌরসভা ও মাতামুহুরীসহ আওয়ামী লীগের চার ইউনিটের সভাপতি-সম্পাদক, চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, কাউন্সিলর ও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ দলীয় নেতাকর্মীরা একাট্টা হয়ে ভোর সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।ইতিমধ্যে নৌকা প্রার্থীর প্রচারণায় নেমে যোগদেন জাতীয় পার্টিও। তবে প্রচারণা ও গণসংযোগ চালাতে বেশ কয়েকদফা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর দলীয় নেতাকর্মীর বাধার মুখে পড়ছেন বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। চকরিয়া-পেকুয়া আসনে নির্বাচনী মাঠে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভোটযোদ্ধে রয়েছে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থী।এ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন মহাজোট মনোনীত প্রার্থী চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সদ্য বিদায়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ জাফর আলম। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদ স্ত্রী সাবেক সাংসদ এডভোকেট হাসিনা আহমেদ।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার-১ চকরিয়া-পেকুয়া আসনটি পঁচিশটি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত সংসদীয় নির্বাচনী এলাকা। বর্তমানে এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯০ হাজার ৮২৯ জন। এর মধ্যে চকরিয়া উপজেলায় পৌরসভাসহ মোট ভোটার ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫৫০ জন। এতে পুরুষ ভোটার রয়েছে এক লাখ ৪৮ হাজার ৯০১জন। নারী ভোটার এক লাখ ৩৫ হাজার ৬৪৯জন। অপরদিকে, পেকুয়া উপজেলায় মোট ভোটার ১লাখ ৬ হাজার ২৮৯ জন। এতে পুরুষ ভোটার রয়েছে ৫৫ হাজার ৬২৬ জন। নারী ভোটার ৫০ হাজার ৬৫৩জন। চকরিয়া-পেকুয়ায় মোট ভোট কেন্দ্র সংখ্যা ১৩৯ টি। তৎমধ্যে চকরিয়া উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্র সংখ্যা ৯৯টি ও পেকুয়ার ভোট কেন্দ্র সংখ্যা ৪০টি।
বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদ স্ত্রী সাবেক সাংসদ এডভোকেট হাসিনা আহমেদ নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। গণসংযোগ চালানোর সময় হামলার শিকারও হতে হচ্ছে। তাছাড়া প্রচারণা বাধা দেয়ার পাশাপাশি উল্টো নেতাকর্মী বিরুদ্ধে সাজানো একের পর মিথ্যাচারের অভিযোগ এনে চকরিয়া-পেকুয়া তেরটি মামলা করে ভোটের মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে বিএনপি কর্মীদের। রাত গভীর হলেই পুলিশ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করতে বাড়িতে হানা দেয়। ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে প্রচার-প্রচারণা তো দূরের কথা এখন নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, চকরিয়া-পেকুয়া আসনে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পযন্ত এই আসনটি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ দখলে ছিল। ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপিকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন বর্তমান বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এডভোকেট হাসিনা আহমেদ। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বর্তমান সাংসদ (জাপা) হাজী মোহাম্মদ ইলিয়াছ।
অপরদিকে ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পরও চকরিয়া, পেকুয়া, পৌরসভা ও মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলায় এ চারটি ইউনিটে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা অতীতের চেয়ে আরও শক্তিশালী বলে দাবী করেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। আসন্ন নির্বাচনে এ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন মহাজোট মনোনীত প্রার্থী চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সদ্য বিদায়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ জাফর আলম। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদ স্ত্রী সাবেক সাংসদ এডভোকেট হাসিনা আহমেদ। হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে মাঠ রয়েছে ওয়াকার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা হাজী আবু মো: বশিরুল আলম, হাতপাখা নিয়ে লড়ছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আলী আসগরসহ আটজন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছে।
তবে সাধারণ ভোটাররা বলছেন, আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে তারা সৎ, যোগ্য ও জনবান্ধব প্রার্থীকেই ভোট দেওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচন কমিশনারের কাছে ভোটারদের দাবি, তারা যেন সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন।
বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এডভোকেট হাসিনা আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, আমরা গণতান্তিক প্রক্রিয়ায় বর্তমান সরকারের পরিবর্তন চাই। কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নেতাকর্মীরা প্রাচারণায় বের হলেই তাদের সন্ত্রাসীরা স্বশস্ত্র ভাবে বিএনপির কর্মীদের ওপর হামালা চালিয়ে উল্টো একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ডের কথা বলছে। কিন্তু বাস্তবে চকরিয়া-পেকুয়া মাঠ পর্যায়ে এর কোনো মিল নেই। রাতের অন্ধকারে তাদের পোস্টার ছিঁড়ে ও নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে নেতাকর্মী বিরুদ্ধে।এছাড়াও নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকা ও বাড়ি ছাড়া করা হচ্ছে। একটা অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে হচ্ছে।গত এক সাপ্তাহ ধরে আমি ও আমার দলীয় নেতাকর্মী কোন ধরণের প্রচার-প্রচারণায় বের হতে পারছিনা। তিনি আরও বলেন, আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকবো এবং অনড় অবস্থায় থাকবো। কারণ আমরা ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ধানের শীষ প্রতীক বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবে বলে শতভাগ আশাবাদী।
আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থী আলহাজ জাফর আলম বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিএনপির প্রার্থী ও নেতাকর্মীর অভিযোগ তাদের প্রচারণায় বাধা দেওয়া কথাটি সত্য নয়। বরং বিএনপির নেতাকর্মীরা চকরিয়া-পেকুয়া এলাকায় নৌকার নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে। তারা আবারও আগুন সন্ত্রাসে মেতে উঠেছে। হামলা চালিয়ে আহত করেছে নৌকার অন্তত ত্রিশ নেতাকর্মীকে।তারা এখনো নির্বাচন বানচালে ষড়যন্ত্রে রয়েছে বলে জানান।##
পাঠকের মতামত: